#সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে শেখ হাসিনা শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন করেছিলেন : মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার
#বাংলাদেশে সকল শান্তির সূচক এনে দিয়েছেন শেখ হাসিনা : ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন
#পার্বত্য শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পাহাড় অঞ্চল পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়েছে : মিসবাহ উর রহমান
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২০, ১০:২১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় ও রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে এর স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে এক ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দুই দশকেরও বেশি সময়ে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে চলছিল রক্তের হোলি খেলা। সেসময় তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার ও জনসংহতি সমিমির (জেএসএস) মধ্যে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন হলে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি থেকে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের কাছে শান্তির পরিবেশ তৈরি হয়।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৭৭ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। বৃহস্পতিবার (০৩ ডিসেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক, লেখক ও গবেষক মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন, দেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মিসবাহ উর রহমান। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, আজকে ডিসেম্বরের তিন তারিখ। বাংলাদেশের ইতিহাস তো বটেই সারা উপমহাদেশের ইতিহাসের অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণময় একটি দিন। আমরা তখন মুক্তিযুদ্ধের মাঠে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলাম। এই তিন তারিখে পাকিস্তান ভারত র বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তান যা করেছিল ঠিক তারাই সেই কাজটিই করেছিল তিন তারিখের সন্ধার ভারতের বিরুদ্ধে। পাকিস্তান একই সাথে দুইটি দেশের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হলো এবং তারা আক্রমণ শুরু করলো ভারতকে। এবং সেই দিনেই আমাদের মিত্র বাহিনীরদের সাথে ভারতের বাহিনী এবং আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যৌথ বাহিনী গড়ে উঠেছিল। সে সময় আমরা গেরিলা আক্রমণ সহ আরও নানাবিধ যুদ্ধ করে পাকিস্তানী বাহিনীদেরকে একটা মোটামুটি পরজধস্ত অবস্থায় নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু আনুষ্ঠানিক চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য একটা কনভেনশনাল যুদ্ধের দরকার ছিল এবং সেটিই হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু যেমন বুজতে পেরেছিল তারাই প্রথম আক্রমণ শুরু করতে পারে এবং শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলেন। ঠিক তাই হলো ২৫শে মার্চের কালো রাতে। ২৫শে মার্চের ঘটনার পর বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন এর মাধ্যমেই তিনি বিজয়ী হয়ে গিয়েছিলেন কারণ তারা ছিল আধিবাসি গুোষ্টি এবং আমরাই তাদের প্রতিহিত করবো। ঠিক একইভাবে ইন্ধিরা গান্ধী তখন নভেম্বরের মাঝামাঝির সময় অপেক্ষা করছিলেন কখন পাকিস্তান এই চোরাগুপ্তা হামলা করবে। কিন্তু ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে খবর পাওয়া গেল ইন্ধিরা গান্ধী দিল্লীতে থাকা অবস্থায় তারা আক্রমণ চালাবে না। যুদ্ধের মাঠে তিনটি বাহিনী ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পাকিস্তানি দখলদারদের বিরুদ্ধে সম্মলিত আক্রমণ চালাতে সক্ষম হয়। তখন আমরা যারা সেনা বাহিনীর সদস্য নয়, অর্থাৎ যারা গেরিলা বাহিনী ছিলাম; আমরা আকাশ বানী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, বিবিসি সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে এই খবরটি পেলাম যুদ্ধ ক্ষেত্রে তখন সেই অনুভূতিটা ছিল অন্যরকম। তখন সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একটি শক্ত মনোবল তৈরি হলো। আমরা মনে করলাম, আর বোধহয় বেশি দেরী নেই নতুন সূর্য উদয়ের এবং সেটিই কিন্তু আমরা দেখেছিলাম। মাত্র ১৩ দিনের মাথায় এই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের আরও ৬ মাস যুদ্ধ করার ক্ষমতা থাকা সর্তেও, তাদের সকল যুদ্ধের সরঞ্জাম অক্ষত থাকা অবস্থায় অবনত মস্তকে প্রকাশ্যে জনতার সামনে বিনা শর্তে আমাদের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে একটিও উধাহরন নাই যে মাত্র ১৩ দিনের মাথায় একটি দখলদার বাহিনীকে পরাজিত করে সম্পূর্ণ আত্ততসমরপনে বাধ্য করে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা শুরুর ১৩ দিনের মাথায় তারা পরাস্থ ঘোষণা করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিচুক্তি নিয়ে আমি বলতে চায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম মেয়াদে এক বছরের কিছু সময় পরই এসেছিল ঐতিহাসিক সেই মহেন্দ্রক্ষণ। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার ও জনসংহতি সমিমির (জেএসএস) মধ্যে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি সম্পাদন হলে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি থেকে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের কাছে শান্তির পরিবেশ তৈরি হয়। তৎকালীন সরকারি প্রশাসন সমতল জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের নদীভাঙ্গা ভূমিহীন, দিনমজুর, অসহায় দুস্থ পরিবারগুলোকে এনে সরকারি খাস ভূমিতে পুনর্বাসন করে। শান্তি চুক্তি হওয়ার পর ১৯৯৮ সালে ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে শান্তিরক্ষী বাহিনীর শীর্ষ গেরিলা সদস্যরা অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। সেসময় থেকেই সেখানে এখন পর্যন্ত শান্তির সুবাতাস বিরাজ করছে।
ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন বলেন, আমার আগের বক্তা মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার যেভাবে এতো সুন্দর করে আমাদের গোটা বাংলাদেশের ইতিহাসটাকে যেভাবে তুলে ধরলেন এর মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের গোটা চিত্র ফুটে উঠেছে। আমি প্রথমেই নাসির উদ্দিন সাহেবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি আজকে পাহাড়ের ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তির ২৩ বছরের বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য। আমাদের সমস্ত অর্জন এইরকম ইতিহাসের বাকে বাকে রয়েছে। আজকে যে খবর গুলো আমাদের আলোকিত করে তার মধ্যে পদ্মা সেতুর ৪১তম স্পান বসতে যাচ্ছে। আমি মনে করি এটা তো সারা বিশ্বে একটা বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকে সারাদেশে শতভাগ বিদ্যুতয়ানের আওতায় এসে গেছে প্রায়। আমাদের জিডিপি এই করোনাকালেও থেমে নেই। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি মাইনাসে আছে সেখানে আমাদের যে চলমান অর্থনীতি জননেত্রী শেখ হাসিনার আস্থা ও নির্দেশে এই করোনা মুহূর্তে আজকে আমাদের জিডিপি গ্রোথ ৫.২৪% , মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলার এবং ক্যাপিটাল জিডিপি ১৯৭০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে এই সময়ে মুদ্রাস্ফীতি ৫.৬৫%। রেমিটেন্স প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের অবস্থান এই মুহূর্তে অষ্টম। এবং আমি অত্যন্ত আশাবাদী এই মুজিব শতবর্ষে আমাদের রিজার্ভের পরিমান ৫০বিলিয়ন অতিক্রম করবো। আজকে আমদের দেশে কৃষির এক অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছি। আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ৪০.৬% অবদান রাখে এই কৃষি খাত। আজকে আল্লাহর রহমতে ও শেখ হাসিনার নেতৃত্ব গুনে আমাদের ৪ কোটি মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ আছে। আমাদের বিভিন্ন উৎপাদনে অনেক ভালো করছি আমরা বিশেষ করে মাছ চাষে, সবজি চাষে আমরা অনেক এগিয়ে গিয়েছি। আজকে কেউ হয়তো আমরা এইগুলো কেউ ভাবতে পারেনি আজ থেকে ১০ বছর আগে। গত ২২ বছর ধরে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড সফলভাবে পরিচালনার উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত থেকে পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের অপরিহার্যতা লক্ষ করা যায়। তবে শান্তিচুক্তিতে বর্ণিত সকল নাগরিকের অধিকার সমুন্নত রাখার প্রত্যয় বাস্তবায়নে পাহাড়ি-বাঙালির যৌথ প্রচেষ্টা দরকার। একসময় শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে উপস্থিত হয়ে বলেছিলেন, শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাঁর সরকার। প্রকৃতপক্ষে বিশ্বব্যাপী সচেতন মানুষ আজ জানতে পেরেছে শান্তি, গণতন্ত্র, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিকতা ও অবদানের কথা।
মিসবাহ উর রহমান বলেন, আজকে আমাকে এই সংলাপে আমন্ত্রণ করার জন্য ভোরের পাতাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। প্রথমেই আমি জানাতে চাচ্ছি আমাদের ব্রিটেনে করোনাকালীন অবস্থার বিষয় নিয়ে। ব্রিটেনে আগামী দুই দিনের মধ্যেই করোনা ভ্যাকসিন ফাইজার ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে ব্রিটেন সরকার। এটা আমাদের জন্য আসলেই অনেক সুসংবাদ। শুধু ব্রিটেন না পুরো বিশ্বের জন্য এটা সুসংবাদ। আমাদের জননেত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই করোনাকালীন সময়ে বাংলাদেশকে নতুনভাবে পরিচয় দিয়েছেন সারা বিশ্বের কাছে। করোনার এই পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের দেশ যখন উল্টো গতিতে চলছে তখন আমরা আরও বেগবান হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয় সমস্যাটি এভাবেই চলছিল এবং তেমন আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর পার্বত্য চট্টগ্রাম সংক্রান্ত যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তাতে তৎকালীন পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ, আরও সংঘাতময় করে তোলে। রাজনৈতিক অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় ও রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পার্বত্য সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এই শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পাহাড় অঞ্চলে শান্তি বিরাজ করছে। এই শান্তির কারণে আজকে পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটন শিল্পে রূপান্তরিত হয়েছে। দেশ ও বিদেশ থেকে অনেক মানুষ সেখানে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন দেখতে পারছে। এই হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান অবস্থা।