চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গুয়াংশি ঝুয়াং এর রাজধানী নাননিংয়ে চার দিনব্যাপী ১৭ তম চীন-আসিয়ান এক্সপো এবং চীন-আসিয়ান ব্যবসায় ও বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের চীন-আসিয়ান এক্সপোর থিম ছিল বেল্ট অ্যান্ড রোড নির্মাণ এবং ডিজিটাল অর্থনীতি সহযোগিতার প্রচার। ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং।
২৭ শে নভেম্বর থেকে ৩০ শে নভেম্বর পর্যন্ত এক্সপোটি নাননিং শহরে অবস্থিত নাননিং আন্তর্জাতিক সম্মেলন এবং প্রদর্শনী কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। চীনের গুয়াংশি ঝুয়াং স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সরকারে সহযোগিতায়, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ১০ আসিয়ান সরকারের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য বিভাগ এবং আসিয়ান সেক্রেটারিয়েট যৌথভাবে স্পনসর করে ১৭ তম চীন-আসিয়ান এক্সপোটি। মহামারী সম্পর্কে উদ্বেগের কারনে এই বছর অনলাইন এবং অফলাইন উভয় প্রদর্শনীর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।
সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটিকাল ব্যুরোর সদস্য এবং কেন্দ্রীয় বিদেশ বিষয়ক কমিশনের কার্যালয়ের পরিচালক ইয়াং চিয়েছি এক্সপোটির উদ্বোধনী সভায় সভাপতিত্ব করেন এবং উদ্বোধনের ঘোষণা দেন। আসিয়ান মহাসচিব লিন ইউহুই ভিডিও কনফারেন্স মাধ্যমে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এছাড়া আসিয়ান দেশ গুলোর রাষ্ট্রদূতরা এবং চীনে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন।
এক্সিবিশনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি সারোয়ার হোসেন বলেন, সপ্তদশ চীন-আসিয়ান এক্সপোতে অংশগ্রহন করতে পেরে আমি আনন্দিত। এ বছরের চিন আসিয়ান এক্সপো বিশেষ ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ কারন আরসিইপি (RCEP) চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর আসিয়ান ভুক্ত দেশ সমূহ ও চীনের ব্যাবসায়ীদের মধ্যে এটাই প্রথম মিলনমেলা। এই মেলায় যোগ দিয়ে আমি ব্যাবসা বাণিজ্য ও অনেক পণ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছি।
তিনি আরো বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশের সরকার এবং ব্যবসায়িরা এই মেলায় অংশগ্রহন করতে পারলে আমাদের অর্থনীতি অনেক উপকৃত হত। আর আমাদের দেশের পণ্য সামগ্রী সম্পর্কে সবাই জানতে পারত।
বাংলাদেশি হাংজো হাইভ ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানীর স্বতাধিকার মো: ফররুখ উদ্দিন পিয়াস বলেন, আমি নাননিংয়ে চার দিনব্যাপী ১৭ তম চীন-আসিয়ান এক্সপো এবং চীন-আসিয়ান ব্যবসায় ও বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন অংশ নিয়েছি। দুর্দান্ত এই এক্সপোতে অংশ নিয়ে চীনা বাজারের সন্ধান সহ বিশ্বজুড়ে সরকারী কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, এবং পেশাদার ক্রেতাদের সাথে মিলিত হতে পেরেছি। প্রদর্শনী হল গুলোতে প্রযুক্তি, অটোমোবাইলস সরঞ্জামাদি, চিকিৎসা সরঞ্জাম, খাদ্য এবং কৃষি পণ্য ছিল।
রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং তার বক্তব্যে একটি সুন্দর ভবিষ্যত নিয়ে চীন-আসিয়ান সম্প্রদায়ের মধ্যে আরো গভীর সম্পর্ক গঠনের জন্য চারটি প্রস্তাব রেখেছিলেন, কৌশলগত পারস্পরিক বিশ্বাস বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন পরিকল্পনার গভীরতকরন; অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক অর্থনীতির সামগ্রিক পুনরুদ্ধার ত্বরান্বিত; প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও গভীর করা; মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতা বাড়ানো, জনস্বাস্থ্যের সক্ষমতা বাড়ানো শক্তিশালী করা।
ইইউ বুইউ এক্সিবিশন সার্ভিস (এমি ফেয়ার) কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার এমি জং বলেন, আমাদের কোম্পানী চারদিন ব্যাপী ১৭ তম চীন আসিয়ান এক্সপোতে বিদেশী ক্রেতাদের অংশগ্রহন করার জন্য সার্বিক সহযোগিত করছে। এ প্রর্দশনীটি প্রতি বছরই অনুষ্ঠিত হয়। আশা কারি আগামী বছর আরো বেশি বিদেশি ক্রেতার সমাগম হবে। এমি ফেয়ার প্রতি বছর চল্লিশটির বেশি এক্সিবিশন আয়োজন করে থাকে।
তিনি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের চীনে বিজনেস এক্সিবিশনে অংশগ্রহন করার আহবান জানান। এক্সিবিশনে অংশগ্রহন করার জন্য সার্ভিক সহযোগীতা এমি ফেয়ার করবে বলে আশ্বাস দেন।
প্রদর্শনীতে ১৬৬৮ টি কোম্পানী সরাসরি অংশ নিয়েছিল এবং হুয়াওয়ে সহ ৫০০টি বড় এবং সুপরিচিত কোম্পানী এই প্রদর্শনীতে অংশ নেয়। পাকিস্তান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, রাশিয়া ইত্যাদি সহ “বেল্ট অ্যান্ড রোড” এর ২২ টি দেশের ১০৮টি কোম্পানী প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছিল। ক্লাউড কভারেজ এর মাধ্যমে ১৯৫6 টি কোম্পানী "ইস্টার্ন ক্লাউড এক্সপো" তে অংশ নিয়েছিল। এক্সপোতে মোট বুথের সংখ্যা ছিল ৫৪০০।
সমাপনী অনুষ্ঠানে এক্সপোর সচিবালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চার দিনের এই এক্সপো ২৬৩.৮৭ বিলিয়ন ইউয়ান (প্রায় ৪০.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) মূল্যের মোট ৮ টি বিনিয়োগ প্রকল্পে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যা বার্ষিক ৪৩.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ, সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, ইয়েমেন, মিশর, আমেরিকা, গুয়াতেমালা, কোরিয়া, নেপাল, সুদান, ভারত, সোমালিয়া, মরক্কো, ক্যামেরুন, পাকিস্তান, প্যালেস্তাইন, ইথিওপিয়া, তানজানিয়া, মরিশাস, নাইজেরিয়া, কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, আলজেরিয়া, মোজাম্বিক, চাদ সহ আরো অনেক দেশ থেকে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা এই এক্সপোতে অংশগ্রহন করে।