ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের যে পরিণতি হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধিতাকারীদেরও একই পরিণতি হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
মন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশে অসংখ্য ভাস্কর্য আছে। কোনোটা নিয়ে কোনো কথা নেই। হঠাৎ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য কেন? আসলে মতলব কী? বক্তব্য প্রত্যাহার করুন। ধৃষ্টতা দেখাবেন না। নাহলে কঠিন পরিণতি বরণ করতে হবে।’
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সামনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আহ্বানে মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) বিকালে সংক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিরোধিতাকারীদের সময় থাকতে সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, এই মৌলবাদিরা তারাই যারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। এরাই যারা ভাষা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল। সে সময় আপনাদের (ভাস্কর্য বিরোধিতাকারী) যা পরিণতি হয়েছিল, এখনো সেই একই পরিণতি হবে। সুতরাং সময় থাকতে সাবধান হোন। বঙ্গবন্ধু নেই কিন্তু আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের লাখো সৈনিক আছি।’
সম্প্রতি ঢাকার ধোলাইরপাড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে সে কাজ অবিলম্বে বন্ধের দাবি তোলেন কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক। তিনি হুমকি দিয়েছিলেন, ভাস্কর্য নির্মাণ হলে তিনি দেশে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের মতো পরিস্থিতি আবার তৈরি করবেন। এরপর গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের এক অনুষ্ঠানে হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, যে কোনো দল ভাস্কর্য বসালে তা ‘টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেওয়া হবে’।
গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতা-কর্মীরা মামুনুল হককে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে রাজপথে নামে। আর এই অবস্থায় তিনি শুক্রবার হাটহাজারীর আলোচিত মাহফিলে যোগ দেননি। এই প্রতিরোধের মুখে পড়া মামুনুল রোববার সংবাদ সম্মেলনে এসে সুর নরম করেছেন। বলেছেন, ভুল তথ্য প্রচার করে তাকে প্রশাসনের মুখোমুখি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি ভাস্কর্যের বিরোধী হলেও এ নিয়ে কোনো ‘যুদ্ধে যাবেন না’। তবে ভবিষ্যতে ক্ষমতা হলে সব ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হবে বলেও জানান হেফাজত নেতা।
সারা পৃথিবীতেই ভাস্কর্য আছে আর কোথাও এগুলোকে ধর্মবিরোধী বলা হয় না উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কিন্তু আমাদের গুটিকয়েক ধর্মব্যবসায়ী আজ হঠাৎ করেই ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে নেমেছে। ধর্মের অপব্যাখ্যা বন্ধ করুন। ধর্ম নিয়ে ব্যাবসা বন্ধ করুন। মনে রাখবেন স্বাধীনতার পক্ষের মানুষরা কলাগাছ নয়। আমরা মান্দার গাছ। গায়ে পড়ে গা ঘষতে এলে চামড়া ছিলে যাবে।’
এসময় বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে জামায়াত ও হেফাজতের মৌলবাদী রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতাকারীদের মামুনুল-বাবুনগরীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ৬০টি সংগঠনের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি সম্বলিত ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়।
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের সঞ্চালনায় ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের মহাসচিব ডা. কামরুল হাসান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুসহ প্রমুখ মানববন্ধনে অংশ নেন।