চলতি অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার জন্য আয়কর অধ্যাদেশে নতুন দুটি ধারা যুক্ত করে সরকার। তারই প্রেক্ষিতে আয়কর আইনের বিশেষ বিধানে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ২২০ জন করদাতা ৩৮১ কোটি ৩১ লাখ টাকা কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করেছেন। আর ১৩৮ করদাতা ১৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা কর দিয়ে তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বৈধ করেছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যানুযায়ী, কর দিয়ে সাদা করা এসব অর্থ আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে না।
সোমবার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ তথ্য জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
অপ্রদর্শিত আয় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা রাজস্ব পেয়েছে এনবিআর। শেয়ারে বিনিয়োগকৃত অর্থের ১০ শতাংশ হারে কর প্রদানের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার সুযোগ নিয়েছেন ১৩৮ জন করদাতা। তারা শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড ও ঋণপত্রে বিনিয়োগের মাধ্যমে এই সুবিধা নিয়েছেন। তবে, শেয়ারবাজারে এই অর্থ অন্তত এক বছর বিনিয়োগ করে রাখার শর্তের কারণে অনেকেই এই সুবিধার প্রতি আগ্রহী হননি।
এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, ‘আশা করছি আরও অনেকেই তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি প্রশ্নবিহিনভাবে সাদা করার সুযোগ নেবেন এবং আমাদের রাজস্ব আয় আরও বাড়বে।’
এছাড়া এবার স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কর দিয়ে বৈধ করা সম্পত্তি ও নগদ অর্থের ব্যাপারে কোনো সংস্থায় প্রশ্ন তুলতে পারবে না। যদি কোনো ধরনের হয়রানি করা হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট করদাতা প্রতিকার চেয়ে আইনের আশ্রয় নিতে পারবেন বলে এর আগে বিভিন্ন সময়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছেন। তবে যতটুকু আশা করেছিল ততটুকু সাড়া মিলেনি সরকারি এই উদ্যোগে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে জানান, প্রভাবশালী বড় করদাতারা এই সুযোগ গ্রহণ করেনি, তাদের সব তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়া ও প্রভাব খর্ব হওয়ার ভয়ে।
কর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করদাতারা এই সুযোগ নিতে পারবেন।
এর আগে বিকেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, রিটার্ন জমা দেয়ার সময়সীমা এক মাস বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ ডিসেম্বর মাস জুড়েই রিটার্ন জমা দিতে পারবেন করদাতারা। ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ করদাতা রিটার্ন দাখিল করেছে বলেও জানান তিনি। এর বিপরীতে কর পরিশোধ করেছে ২ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা।
উল্লেখ্য, এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৭-০৮ এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নয় হাজার ৬৮২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা সাদা করা হয়েছিল। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ছিল। আওয়ামী লীগের আগের দুই মেয়াদে যথাক্রমে এক হাজার ৮০৫ কোটি টাকা এবং চার হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা সাদা করা হয়েছিল।