প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:১৮ পিএম আপডেট: ০১.১২.২০২০ ১:৪৭ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
অর্থ পাচারকারী হিসেবে আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) দেশে ফেরাতে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশনে (ইন্টারপোল) গ্রেফতারি পরোয়ানা পাঠাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে এরই মধ্যে গত ২৬ নভেম্বর ঢাকা মহানগর আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু করে। গ্রেফতারি পরোয়ানার নথিপত্র হাতে পাওয়ার পরপরই এর সঙ্গে দুদকের চিঠি সংযোজন করে আজকের (গতকাল) মধ্যেই ইন্টারপোলকে রেড এলার্ড দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে যাচ্ছে বলে দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেন, ‘পি কে হালদারকে আইনি প্রক্রিয়ায় দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলকে চিঠি পাঠাচ্ছে। দুই একদিনের মধ্যে চিঠি ইন্টারপোলে যাবে।’ এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন।
কানাডায় পালিয়ে থাকা পি কে হালদার গত ২৮ জুন আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে একটি আবেদন করে দেশে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর দেশে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গ্রেফতারে হাইকোর্ট থেকে আদেশ জারি করেন। এরপরই তিনি পিঠটান দেন। শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে তিনি আর দেশের পথ ধরেননি। দেশে অবৈধ ক্যাসিনো জুয়ায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধানে পি কে হালদারের জালিয়াতি-প্রতারণার বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। অনুসন্ধানে দেশ থেকে শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচারের তথ্যও বেরোতে থাকে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক মামলা করে। পরবর্তী সময়ে দুদকের অধিকতর তদন্তে দেশে-বিদেশে পি কে হালদারের আরো বিপুল সম্পদের তথ্য মেলে।
অনুসন্ধানের সঙ্গে জড়িত দুদক কর্মকর্তারা জানান, পি কে হালদার দেশের একটি অর্থপাচারকারী সিন্ডিকেটের সঙ্গে মিলে ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। কানাডা, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত ও ভারতে পাচার করা এসব অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, পি কে হালদার ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা, ফাস ফাইন্যান্স থেকে দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা, পিপলস লিজিং থেকে তিন হাজার কোটি টাকা এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
দুদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রাথমিক অনুসন্ধানে কানাডা, সিঙ্গাপুর ও ভারতের বিভিন্ন শহরে পি কে হালদারের পাচার করা ৬৫০ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য মিলেছে। এর মধ্যে শুধু কানাডার টরন্টোতেই মার্কেট, বাড়ি, ফ্ল্যাট, গাড়ির শোরুম, চেইন শপসহ প্রায় ৩০০ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছেন দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এছাড়া সিঙ্গাপুরে ১০০ কোটি, ভারতে ১৫০ কোটি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১০০ কোটি টাকার সম্পদের প্রমাণ মিলেছে। এর পাশাপাশি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় জালিয়াতি করে চারটি লিজিং কোম্পানি থেকে হাতিয়ে নেওয়া পি কে হালদারের হাজার কোটি টাকার সম্পদের তথ্য-প্রমাণ এখন দুদকের হাতে। এরই মধ্যে পি কে হালদারের দুর্নীতির সঙ্গে নানাভাবে জড়িত ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বিএফআইইউ ও দুদক।
অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদার ওই প্রতিষ্ঠানসহ পিপলস লিজিং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) দায়িত্ব পালন করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন।