ড. কাজী এরতেজা হাসান
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড’। জাতির পিতার এই স্বপ্ন-আকাক্সক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দেশের রেলপথের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করে তুলছেন। রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর থেকে তিনি রেলপথ যে দুর্দশায় পতিত হয়েছিল, সেখান থেকে তুলে এনে যথার্থস্থানে বসানোর চেষ্টা করছেন। বিগতদিনে যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন, তারা রেলকে গুরুত্ব না দিয়ে বরং একে ছোট করে এনেছেন। দেশের বহু জায়গায় রেলপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। অথচ যখন এসব করা হয়, তখন বিশ্বের অন্যদেশগুলোতে রেলকে আরো কতটা উন্নত করা যায়, সেদিকে মনোনিবেশ করে। সবদেশেই যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে রেল বহু আগে থেকেই এগিয়ে ছিল।
এতে যাতায়াত যতটা নিরাপদ এবং আরামদায়ক, অন্যটিতে তা নেই। কিন্তু আমাদের দেশের বিগত সরকারগুলো এটা কেন বোঝেনি, তা তারাই ভালো জানেন। রেলের কথা যদি ওঠে, প্রথম উদাহরণ হিসেবে ভারতকে সামনে আনা যায়। ভারতে সড়কের চেয়ে রেলে বেশি যাত্রী যাতায়াত করে। আরামদায়ক ও আর্থিক সাশ্রয়ী হওয়ায় মানুষ রেলেই চড়তে চায়। আরও একটি কারণযুক্ত আছে, সেটি হলো- সড়ক পথের যান থেকে ট্রেন কম দ্রুতসম্পন্ন নয়। বিশ্বের বহু দেশে দ্রুতগতির ট্রেন একটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু আমাদের যে ট্রেন হাটি হাটি পা পা করে এগিয়ে যায়, তাতে যাত্রীরা বিরক্ত হয়ে এতে উঠতে চায়। আমাদের রেল নিয়ে যাত্রীদের যে শত অভিযোগ তা মোটেই অযৌক্তিক নয়। রেলকে অবশ্য অনিয়ম-দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি ডুবিয়েছে। অতীতে যারা ক্ষমতায় ছিলেন, তারা এই অনিয়ম-দুর্নীতির ছুটি টেনে না ধরে বরং বাড়তে দিয়েছেন এবং রেল দুর্নীতির কড়ালগ্রাসে পড়ে রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে যাওয়ায়, এ থেকে বাঁচতে আগের সরকারগুলো রেলকে ছেঁটে দেয়। এই যখন ছিল দেশের রেলের চিত্র। এ থেকে বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দ্রুত সময়ের মধ্যে রেলের যাত্রী সেবা বাড়িয়ে তুলতে আত্মনিয়োগ করেন। রেলকে আলাদা মন্ত্রণালয় করা হয়। ক্রমশ রেল উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। যেসব রেলপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়, তা চালু করাসহ নতুন নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে।
গত রোববারই যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধুর সেতু সংলগ্ন ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু’ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী। এতে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে রাজধানীর রেলপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো গতিশীল ও উন্নতিকে স্পর্শ করবে। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের রেল ব্যবস্থা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। অর্থাৎ বাংলাদেশ হবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন। আর সেই সেতুবন্ধন করতে গেলে আমাদের ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে সংযোগ করতে হবে। ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে এবং ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ে এ দুটির সঙ্গে যদি আমরা সম্পৃক্ত হতে পারি তাহলে বাংলাদেশের গুরুত্ব অনেক বাড়বে। ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে, কর্মসংস্থান বাড়বে। মানুষের যোগাযোগ বাড়বে। কাজেই আমাদের জন্য একটা বিরাট সুযোগ সৃষ্টি হবে। সারা দেশে রেল যোগাযোগকে শক্তিশালী করতে সরকার কাজ করছে। আমাদের আরও প্লান আছে যে, একেবারে ঢাকা থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত আমরা রেললাইন নিয়ে যাব। তারও সমীক্ষা আমরা শুরু করব এবং সেই উদ্যোগ আমরা নিয়েছি।’ রেল নিয়ে বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যে মহাপরিকল্পনা নিয়েছেন, আমরা আশা করি তা অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন করে ছাড়বেন তিনি। ঢাকার সঙ্গে পায়রার রেলপথ স্থাপিত হলে তা দেশকে আরো উন্নতিসাধনে এগিয়ে নেবে এটা জোর দিয়েই বলা যায়। নির্মাণাধীন পায়রা নৌ-বন্দর, পুরো দেশের অর্থনীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। খুবই জরুরি ছিল ঢাকার সঙ্গে এর রেলপথ সংযোগের। অবশ্য সড়ক পথ তো থাকছেই। ঢাকা-পায়রা রেলপথের কাজ রীতিমতো শুরু হয়ে গেছে, যে বৃটিশরাজরা ভারতবর্ষে প্রথম রেলপথ চালু করেছিল, সেই বৃটিশ কোম্পানিকে বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ঢাকা-পায়রা রেলপথ নির্মাণের দায়িত্ব দিয়েছেন। এবং এর কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের স্বপ্নের সেতু পদ্মা নির্মাণ কাজ শেষ ধাপে আছে। কাক্সিক্ষত সময়ে একে চালু করা সম্ভব বলে আশা করা যাচ্ছে।
রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার এই যে স্মরণীয় কিছু ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, বাংলাদেশের যোগযোগ ব্যবস্থা তথা রেলপথকে উন্নতির সোপানে পৌঁছে দিচ্ছে, যা দেশের মানুষের চলাচলকে সুগম করে তুলতে ভূমিকা রাখবে। পরিশেষে বলতে চাই, বিশ্বনেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক পথের ব্যাপক উন্নতি ঘটিয়েছেন, আরো উন্নতি করা হচ্ছে, পাশাপাশি রেলপথ নিয়ে তিনি যে মহাপরিকল্পনা নিয়েছেন, যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়িত হচ্ছে, রেলপথ সংক্রান্ত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা আমূল পাল্টে দিতে সাহায্য করবে। এবং যমুনা নদীর ওপর যে নতুন রেলসেতুর কাজ শুরু হলো তা উত্তরবঙ্গের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকেও পাল্টে দিতে ভূমিকা রাখবে। তবে শেষ কথা হলো- রেলপথের উন্নতি সাধনে হাজার হাজার কোটি টাকার যেসব প্রকল্প সরকার নিয়েছে, তাতে যেন দুর্নীতিতে ভেসে না যায়, কাজের কাজ হয়, তা দেখতে হবে।