প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২০, ১১:০৫ এএম | অনলাইন সংস্করণ
আজ ১ ডিসেম্বর মোংলা সমুদ্রবন্দর পা রাখতে যাচ্ছে ৭০ বছরে। তবে এবার করোনাভাইরাসের কারনে দিবসটি ছোট্ট পরিসরে পালন করা হবে। এতে থাকবে সকাল সাড়ে ৯টায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে র্যালী ও আলোচনা সভা। এ বছর বড়খানা বা কোন আনুষ্ঠানিকতা না রেখেই পালিত হবে বন্দর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। গতকাল সোমবার বিকেলে বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-সচিব ও বন্দর চেয়ারম্যানের পার্সোনাল সেক্রেটারী মোঃ মাকরুজ্জামান এ তথ্য জানিয়েছেন।
বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানায়, “বন্দরের ৭০তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে আজ ১ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এ সময় সংবাদকমী ও বন্দরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্মচারী ছাড়া অন্য কোন অতিথিবৃন্দ এ অনুষ্ঠানে থাকবে না বলেও বন্দর থেকে জানানো হয়। সূত্র আরো জানায়, মোংলা বন্দর খুলনা শহর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর। প্রথমে এই বন্দর গড়ে ওঠে চালনা থেকে ১৮ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে। ১৯৫০ সালের ১১ ডিসেম্বর বন্দরটি বিদেশি একটি জাহাজ নোঙরের মাধ্যমে প্রথম এর নামকরণ করা হয় চালনা বন্দর। কিন্তু সমুদ্রগামী জাহাজ নোঙরের ক্ষেত্রে মোংলা অধিকতর সুবিধাজনক বিধায় ১৯৫৪ সালে বন্দরটি মোংলায় স্থানান্তরিত করা হয়। মোংলা বন্দর দীর্ঘদিন ধরে চালনা নামেই পরিচিত হতে থাকে। কিন্তু তৎকালীন বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার শেহালাবুনিয়া মৌজায় পশুর ও মোংলা নদীর সঙ্গমস্থলে এই বন্দরের অবস্থান। পাকিস্তান আমলে মোংলা বন্দরের প্রশাসনিক দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল একজন বাঙালি পরিচালকের উপর। এর প্রধান কার্যালয় ছিল খুলনা শহরে। দিতীয় সমুদ্র বন্দর হলেও কখনও কখনও প্রায় ৫০/৬০টি সমুদ্রগামী জাহাজ মোংলা বন্দরে নোঙর করতে দেখা গেছে। সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলের উপযোগী এ বন্দরের প্রবেশ মুখ ও পশুর নদীর গভীরতা হারিয়ে ফেলায় পরবর্তী সময়ে বিশেষ করে ১৯৮০ সাল থেকে বন্দরটি প্রায়ই বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে ছিল। তবে মোংলা বন্দর এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ বন্দরে রয়েছে ১১টি জেটি, পণ্য বোঝাই ও খালাসের জন্য ৭টি শেড এবং ৮টি ওয়্যারহাউজ। নদীর গভীরে রয়েছে অসংখ্য ঝুলন্ত বা ভাসমান নোঙর। বন্দর কর্তৃপক্ষ সাগর থেকে বন্দরে প্রবেশমুখ অর্থাৎ হিরণ পয়েন্ট নামক স্থানে বিদেশী নাবিকদের জন্য একটি রেস্ট হাউজ নির্মাণ করেছে।
পৃথিবীর প্রায় সব প্রধান বন্দরের সঙ্গেই মোংলা বন্দরের বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। তবে প্রধানত এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার জাহাজগুলো এই বন্দরে নোঙর করে থাকে। সৃষ্টির পর থেকে এ বন্দরটি দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে আসছে। ইদানিং এ বন্দরকে ঘিরে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। ভারত, ভুটান ও নেপালের সাথে সরকারের চুক্তির ফলে এ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ভারত, নেপাল, ভূটানকে মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হয়েছে যার ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এটি একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এ বিষয়কে সামনে রেখে বন্দরের আধুনিকায়নের জন্য উন্নয়নের সকল কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। পদ্মাসেতুর কাজ শেষ হলে রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ সহজ হবে এবং এ বন্দরের কার্যক্রম আরো বেড়ে যাবে। এছাড়া বন্দরকে ঘিরে এর চারপাশে বহু শিল্প ও বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপিত হওয়ায় অনেক নতুন কর্ম উদ্যোগ ও চাকুরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এ অঞ্চলের মানুষের।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল এম শাহজাহান জানান, সম্ভাবনাময় এ মোংলা বন্দরকে গতিশীল করার জন্য এ অঞ্চলের মানুষ নিরলস ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ বন্দরকে গতিশীল করার লক্ষে বিপুল সংখ্যক স্থানীয় লোক মোংলা বন্দরে মালামাল বোঝাই ও খালাসের কাজে সরাসরি নিয়োজিত রয়েছে। তাই বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আরো উৎসাহী করার জন্য ছোট্ট পরিসরে হলেও এ অনুষ্ঠানের আয়োজন।