এটি আমাদের কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত, বহু বছরের পুরোনো ঐতিহ্যে লালিত স্থাপত্যশৈলীর অনন্য নিদর্শন।
এটি ভেঙে নতুন করে বহুতলবিশিষ্ট আধুনিক স্থাপনা নির্মাণ করে সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব পাঠান(ডিও) কুমিল্লা-৬(সদর) আসনের সাংসদ হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার যার পরিপ্রেক্ষিতেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় গণপূর্ত বিভাগকে কুমিল্লা টাউন হল নিয়ে একটি নকশা করার জন্য বলেন এবং কি ধরনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা সহ স্থাপনা নির্মিত হবে সেখানে, এইসকল বিষয়ে খোলামেলা জবাব এবং আলোচনা করেন সাংসদ বাহার আমাদের সাথে গত শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটায় কাওরান বাজারের জনতা টাওয়ারে অবস্থিত উনার অফিসে।
তিনি সেসময় বলেছিলেন, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজপরিবারের স্মৃতি বহন করা টাউন হলটি কুমিল্লাবাসীর গৌরব ও প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতীক । প্রথমে ছোট একটি ছনের ঘরে লাইব্রেরিটি স্থাপিত হয়, পরে টিনের ঘর করে লাইব্রেরি চালু থাকে। ১৯৩৩ সনে অনেকের সহায়তা নিয়ে চুন সুরকির দেয়ালের উপর টিনের ছাউনি দিয়ে এ হল তৈরি করা হয়। এটি দুই অংশে বিভক্ত, পূর্ব দিকের অংশটি একতলা দুতলা মিলে গনপাঠাগার এবং পশ্চিম অংশটি একতলা দুতলা মিলে মিলনায়তন হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে ।
#ভবনটি ভাঙ্গা হবে কেন?
১) এটি অতি পুরাতন জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। নেই কোন গ্রিন রুম, মহড়া কক্ষ, প্রক্ষালন কক্ষ( ওয়াশ রুম )। বৃষ্টি হলে স্টেজের তিন/চার জায়গায় ও হলের ছাদ দিয়ে পানি পড়ে, দেয়াল খসে পড়ছে , এবং পানি পড়ে দেয়াল বেয়ে। স্টেজেও কয়েক জায়গায় ছাদ থেকে পানি পড়ে, ফলে অনুষ্ঠান চালনায় বিব্রত পরিস্থিতি হয়।এই অবস্থায় যে কোন সময় ডেকে আনতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের টিভি রুমের (অযোগ্য ঘোষিত অ্যাসেম্বলী ভবন) মত আরেকটি ট্র্যাজেডি এইদেশে।
২) বর্তমান স্থাপনার দোতালার বারান্দায় তিন / চার জন একসাথে হাঁটলে বারান্দা কাঁপতে থাকে-- এটা এমনই নাজুক ও পড় পড় অবস্থায় আছে।
৩) মাঠ ও সামনের চত্বর থেকে হলের ফ্লোর অনেক নীচু বিধায় বৃষ্টি হলেই ভাঙ্গা ছাদ, ফাটা দেয়ালের গা বেয়ে এবং ফাটা ফ্লোরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে নিচ থেকে পানি উঠে এসে ফ্লোরে ২/৩ ইঞ্চি পানি জমে যায়। অনুষ্ঠান চলাকালীন সে পানি বের করার জন্য পাপ্ম ভাড়া আনতে হয়। মটর পাম্পের শব্দে অনুষ্ঠানে বিঘ্ন হয় বিধায় অনেক ক্ষেত্রেই অস্বস্তির কারণে অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়।
৪) ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কারণে যোগানের সাথে চাহিদার সামঞ্জস্য খুবই অপ্রতুল। স্থানের অভাবের কারণে বর্তমানে লাইব্রেরিতে বই , আলমারি , পড়ার জায়গা চাহিদা অনুযায়ী বৃদ্ধি করা অসম্ভব হয়ে পরেছে।
৫) বিরাট সমস্যা হয়ে পরেছে মান্ধাতা আমলের ব্যবস্থা নিয়ে সীমিত এই মিলনায়তনে চাহিদা অনুযায়ী দর্শকদের স্থান সংকুলান করা ।
৬) কোন ক্রমেই সম্ভব্ নয় জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক কোন সভা, সমাবেশ , কনফারেন্স, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা এই নিন্মমানের মিলনায়তনে।
#বহুতলবিশিষ্ট আধুনিক স্থাপনায় কি থাকবেঃ
১) বর্তমান হলের উপরের অংশের নাম উৎকীর্ণ অংশের পূর্ব- পশ্চিমে প্রলম্বিত ডিজাইনটির আদলেই হবে নতুন স্থাপনার উপরের অংশের আদল।
এবং যেখানে বর্তমানের মতই লেখা থাকবে " বীর চন্দ্র গনপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন"
২) আধুনিক এবং বৃহৎ ডিজিটাল পাঠাগার ।
৩) অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা সহ একাধিক মিলনায়তন ।
৪) সবচেয়ে বড় মিলনায়তনটিতে সাত শতাধিক দর্শকের বসার ব্যবস্থা থাকবে।
৫) এছাড়া ১৫০ থেকে ২০০ আসনবিশিষ্ট মিনি হলের বন্দোবস্ত করার পাশাপাশি আধুনিক নাট্যমঞ্চ করার পরিকল্পনা রয়েছে ।
৬) আধুনিক গ্রিন রুম, মহড়া কক্ষ, প্রক্ষালন কক্ষ( ওয়াশ রুম ), ভিআইপি লাউঞ্জ, অতিথি কক্ষ ইত্যাদি।
৭ ) মিনি থিয়েটার এবং সিনে কমপ্লেক্সও থাকবে।
৮ ) প্রায় শতাধিক গাড়ির জন্য দ্বিতল গাড়ি পার্কিং,
৯) প্রবেশ ও বাইরের আলাদা সড়ক।
১০) ফুড কোর্টসহ নানা ধরনের কক্ষ ।
১১) এছাড়া জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকমানের যে কোন অনুষ্ঠান করা যাবে প্রস্তাবিত এই মিলনায়তনে ।
অতএব, কুমিল্লা বীর চন্দ্র মিলনায়তন ও গন পাঠাগার আধুনিকায়নে প্রস্তাবিত নতুন ডিজাইনের বিরুদ্ধে তথা কুমিল্লার উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি কারী দের বিরুদ্ধে কুমিল্লা বাসী কে এখনই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা যে দল বা মতের মানুষ হই না কেন কুমিল্লার উন্নয়নের স্বার্থে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব ইনশাআল্লাহ।
কোন মিথ্যা সংবাদ, অপপ্রচার কিংবা প্রলোভনে প্রলুব্ধ আর হবেনা সচেতন বীর কুমিল্লার জনগণ। কুমিল্লার উন্নয়নের রুপকার, কুমিল্লার গণ মানুষের নেতা হাজী আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার ভাইয়ের উপর আস্থা রাখুন।বিগত দিনে কুমিল্লার যা কিছু উন্নয়ন ও অর্জন হয়েছে- তা হয়েছে কেবলমাত্র হাজী বাহার ভাইয়ের হাত দিয়ে। কুমিল্লা বাসীর উন্নয়নে সারাটি জীবন যিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন- তিনি কুমিল্লার প্রাণ, কুমিল্লার বলিষ্ঠ কন্ঠ হাজী আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার।
লেখক: সাবেক সদস্য, কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক কমিটি,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।