প্রকাশ: সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২০, ১০:৩৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
সম্প্রতি একটি ইসলামি রাজনৈতিক দল ও তাদের অনুসারীদের বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ভাস্কর্য বিরোধী নতুন আন্দোলন শুরু হয়েছে। যদিও আল কোরআন এবং এর ব্যাখ্যা সম্বলিত তাফসির গ্রন্থে ইসলাম ধর্ম ভাস্কর্য নির্মাণ বা প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেছে, এমন কোনও বক্তব্য নেই। প্রতিটি মুসলমানের কথায়-কাজে মুগ্ধ হয়ে যেন বিশ্বের মানুষ বুঝতে পারে, ইসলামের সঙ্গে সন্ত্রাসের কোনও সম্পর্ক নেই। কিন্তু তাদের যেটা করা উচিত, সেটা না করে, করছে উল্টোটা। বাঙ্গালির সংস্কৃতিরই শক্তি আছে বাঙালির মুক্তি ও গৌরবের সৌধ ও ভাস্কর্য রক্ষার। সুতরাং বিজয় মাসের লগ্নে মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হোক।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৭৪ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। সোমবার (৩০ নভেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং বাংলাদেশ হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট ড. ওয়ালি-উর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আফজাল হোসেন, খ্রিষ্টান এসোসিয়েশন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
উইলিয়াম প্রলয় সমদ্দার বলেন, আজকের আমার বক্তব্যের শুরুতেই বলতে চাচ্ছি, আজকের এই যে আন্দোলন এটার লক্ষ কি? ভাস্কর্য নাকি বঙ্গবন্ধু? ১৯৭২ সালের পরে স্বাধীনতার বিরোধী গোষ্ঠীর টার্গেট কি ছিল? স্বাধীন বাংলাদেশ নাকি বঙ্গবন্ধু? ১৯৭৫ সালের পরে নানা কায়দায় নানা প্রক্রিয়াই বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তারা তাতে সক্ষম হয়নি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ফিরে আসার পর ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের গণহত্যায় সাহায্যদানকারী জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দেন এবং তাদের সন্ত্রাস দমন করেন। মনে হয়েছিল বাংলাদেশ ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের কবলমুক্ত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের এই আশা সত্য প্রমাণিত হয়নি। দেশে জামায়াত-বিএনপির সন্ত্রাসের রাজনীতির সময় হেফাজত ছিল একটি মাদ্রাসাভিত্তিক ইসলামি শিক্ষা আন্দোলন। রাজনীতির সঙ্গে তার কোনো যোগ ছিল না বলা হতো। জামায়াত দেশের মানুষের কাছে ঘৃণ্য ও প্রত্যাখ্যাত রাজনৈতিক দল হওয়ার পর তাদের একদল হেফাজতে ঢুকে পড়ে এবং হেফাজতকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের চেষ্টা চালাচ্ছে এখন। আজ সারা পৃথিবীর কাছে বঙ্গবন্ধু হচ্ছে উন্নয়নের ট্রেডমার্ক। সুতরাং আজকের যে আন্দোলন হচ্ছে এটাতে ভাস্কর্য শুধু একটা ফ্যাক্ট মাত্র। এর মূল টার্গেট হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু মানুষের হৃদয়ে যেভাবে গেঁথে গেছে এর ধারাকে কমিয়ে আনা যায় কিনা! এখন সময় রুখে দাঁড়ানোর। এই বাংলাদেশে মৌলবাদীদের আর এক ইঞ্চিও ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।