প্রকাশ: সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪৯ পিএম আপডেট: ৩০.১১.২০২০ ১:১৮ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
গণবিরোধী ফ্রান্সের সংবিধানের ২৪ নম্বর সংশোধনীর বিরুদ্ধে উত্তাল হয়ে উঠেছে ফ্রান্স। বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে প্যারিস সহ অন্যান্য শহরেও। গতকালও প্যারিসের পথে পথে বিক্ষোভ করেছে হাজার হাজার তরুণ। পুলিশ কর্মকর্তাদের ছবি প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে প্রস্তাবিত আইনের প্রতিবাদে গত শনিবার থেকে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। ফ্রান্সের রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভে উত্তাল বিভিন্ন শহরে এ সময় পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সেøাগান দেন বিক্ষোভকারীরা।
রাজধানী প্যারিস, বোরডে, লিল, মোস্তপেলিয়ে, নন্তেসসহ দেশটির বহু শহরে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে পড়ে। এ সময় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ার কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। দিনভর বিক্ষোভ সংঘর্ষে ৪৬ জনকে আটক করা হয়েছে এবং ২০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিবিসির খবর মারফত এ তথ্য জানা যায়। এদিকে, ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুধু প্যারিসেই ৪৬ হাজার মানুষ শনিবারের বিক্ষোভে অংশ নেয়।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশের ছবি ও ভিডিও ধারণে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পুলিশের নিরাপত্তা বিল পাস করে ফ্রান্সের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ। বিলটি আইনে পরিণত হতে এখন সিনেটে পাস হওয়ার অপেক্ষা। আইনটি কার্যকর হলে কোনো দায়িত্বরত পুলিশের ছবি প্রকাশ করলে এক বছর পর্যন্ত কারাদ- অথবা ৪৫ হাজার ইউরো পর্যন্ত জরিমানা গুণতে হবে। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, পুলিশ সদস্যদের চেহারা দেখা না গেলে বা শনাক্ত করা সম্ভব না হলে, পুলিশের নির্যাতনের ঘটনা আরো বেড়ে যাবে। একইসঙ্গে এই আইনকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলেও মনে করছেন অনেকে। তারা আরো বলেন, সংবিধানের ২৪ নম্বর অনুচ্ছেদে সংশোধনী আনা পুলিশের নিরাপত্তা বিল সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাকে আঘাত হানবে এবং পুলিশের নৃশংসতা তুলে ধরার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
অন্যদিকে সরকার বলছে, বিলটির মাধ্যমে অনলাইনে পুলিশকে উত্ত্যক্তের ঘটনা কমবে। কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের ছবি বা ভিডিও তুললে এক থেকে তিন বছরের জেল হবে অভিযুক্তের। সম্প্রতি পুলিশের জন্য নয়া এই নিরাপত্তা আইন পাশ হয় ফ্রান্সের সংসদের নিন্ম কক্ষে। সিনেটের সদস্যরা এতে অনুমোদন দিলেই দেশজুড়ে এই আইনকে কার্যকর করা হবে বলে ঘোষণা করে ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর প্রশাসন। এরপরই এই আইন বাতিলের দাবিতে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়েছে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস সহ বিভিন্ন শহরে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে প্যারিসের কেন্দ্রস্থলে কৃষ্ণাঙ্গ সঙ্গীত প্রযোজক মাইকেল জেকোলারকে তার স্টুডিওর ভিতরে ও বাইরে নিয়ে মারধর করে তিন পুলিশ। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। মারধরের সেই ভিডিও টুইটারে ১৩ কোটিরও বেশি বার দেখা হয়। প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সঙ্গীত প্রযোজককে মারধরের এ ঘটনাকে অগ্রহণযোগ্য এবং লজ্জাজনক বলে আখ্যা দেন। দ্রুত পুলিশ ও নাগরিকদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। পরিস্থিতি সামলাতে অভিযুক্ত তিন জন-সহ মোট চারজন পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ডও করে প্রশাসন। এ ঘটনায় ফ্রান্সজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীর আচরণ ও কর্মকা- নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় থেকে শুরু করে, ফুটবল তারকা এমবাপ্পেসহ অনেকে পুলিশের আচরণের প্রতিবাদ জানায়।