শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
একাত্তরের চেতনা দিয়েই রুখতে হবে মৌলবাদ
ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪৯ পিএম আপডেট: ৩০.১১.২০২০ ১:২০ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ

সাম্প্রতিক সময়ে ভাস্কর্য নির্মাণের বিরুদ্ধে আবারও মাঠে নেমে দেশ ও জাতিকে বিভ্রান্ত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েছে কথিত মৌলবাদী একটি সংগঠন। যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সরাসরি বিরোধিতায় নামে। এমনকি আমাদের সংগ্রামকে ভিন্নখাতে নিতে সেদিন তারা হানাদার পাকিস্তানিদের পক্ষ অবলম্বন করে। পাকিস্তানি পক্ষ নিয়ে তারা নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। এসময় তারা দেশের বীর সন্তান যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, তাদেরকে কাফের উপাধি দিয়ে হিন্দুস্তানের দালাল বলে অভিহিত করে। এমনকি তারা আমাদের মা-বোনকে গণিমতের মাল বলে ঘোষণা করে পাকিস্তানি আর্মির হাতে তুলে দেয়। হত্যা খুন ধর্ষণ বাড়িঘরে আগুন দিয়ে মানবতা বিরোধী কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়ে তারা। এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে রাজাকার বাহিনী গঠন করে। এই রাজাকারবাহিনী সরাসরি আমাদের আশা-আকাক্সক্ষার বিপরীতে অবস্থান নেয়। এরা পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করে দেশ জুড়ে বিভীষিকা ছড়িয়ে দেয়।  রাজাকাররা  নিরীহ বাঙালির বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ইচ্ছেমত লুটতরাজে লিপ্ত হয়। এই ঘৃণিত রাজাকার বাহিনী পাক সেনাদের সহায়তা করতে পোষা গরু, ছাগল, হাস-মুরগি নিয়ে তাদের ক্যাম্পে পৌঁছে দেয়।

এসময় কারো বাড়িতে যুবতী মেয়ের সন্ধান পেলে তাকে জোর করে ধরে নিয়ে পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে পৌঁছে দিয়ে প্রচুর ইনাম অর্জন করেছে। এই সব রাজাকারদের কাজ ছিল শান্তিপ্রিয় বাঙালিকে হত্যা করা। পাকিস্তানি সেনারা রাজাকারদের সহায়তায় লাখ লাখ বাঙালিকে হত্যা করে। রাজাকার এবং পাকিস্তানি বাহিনী মিলে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার অপরাধে গ্রামকে গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে। ঘরবাড়ি লুটপাট করে বাঙালির ভেতরে আতঙ্ক ছড়িয়ে নিজেদের অর্থ প্রাচুর্য বাড়িয়েছে। হাজার হাজার মাইল দূরের পাকিস্তানিরা গ্রামবাংলার সড়ক লোকজনকে চিনতো না। এই রাজাকাররা তাদেরকে সেই সব রাস্তা ঘাট মানুষজনকে চিনিয়ে দিয়েছে। এমনকি স্বাধীনতার ঊষা লগ্নে তাদেরই একটি ঘাতক বাহিনী আল বদর দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। লক্ষ্য ছিল জাতিকে মেধাশূন্য করা। এই সব মানবতাবিরোধী কর্মকা-ে যারা জড়িত ছিল তারা সেদিন ইসলামের দোহাই দিয়েই এই সব অপকর্ম করেছে। যদিও এদের এসব অপকর্মের সঙ্গে শান্তির ধর্ম ইসলামের ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। তারপরও তারা নিজেদের স্বার্থে সেদিন ইসলামকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করে। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরে এসে সেই গোষ্ঠীটি আবারও সোচ্চার হয়েছে। ৭১ সালে তৎকালীন চরমোনাইয়ের পীরসাহেব আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। ৭০ সালের নির্বাচনে তিনি তৎকালীন জামায়াতের নেতা মওলানা আব্দুর রহিমের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বরিশাল অঞ্চল চষে বেড়ান। এসময় তিনি নিজের লেখা ‘ভোট দেবেন কাহাকে’ নামক একটি চটি বই লিখে তা নিজের মুরিদদের ভেতরে বিতরণ করেন। এসময় বিভিন্ন সভা সমাবেশে তিনি ইসলামকে রক্ষার জন্য জামায়াতের প্রতীক দাঁড়িপাল্লায় ভোট দানের আহ্বান জানান। তিনি ঘোষণা করেন যদি ইসলাম এবং পাকিস্তানকে জিন্দা রাখতে চান তাহলে আমার পরামর্শমত আপনাদের ভোট জামায়াতের প্রতীক দাঁড়িপাল্লাতে দেন। তখন সারা বাংলায় নৌকার জোয়ার। এসময় তিনি বাঙালিকে ইসলামের দোহাই দিয়ে এই ধরনের অপপ্রচারে মেতে ওঠেন।

বর্তমানে সেই পীরের উত্তরসূরী মওলানা ফজলুল করীম তার পূর্বসূরীর শেষ ইচ্ছা পূরণে মাঠে নেমেছে। তার সঙ্গে যোগ দিয়েছে অরাজনৈতিক সংগঠনের লেবেল আটা হেফাজত। যাদের মূল লক্ষ্য দেশকে অস্থিতিশীল করে ফায়দা লুটা। আর এই ফায়দা হচ্ছে ৭১ সালের পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়া। তাই তারা ভাস্কর্য নির্মাণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ভাস্কর্যকে তারা মূর্তির সঙ্গে তুলনা করে ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করতে চায়। যা আমাদের স্বাধীনতার মূল চেতনা আর মূল্যবোধের পরিপন্থি। স্ব^াধীনতা সংগ্রাম যাদের কাছে কাফেরদের লড়াই বলে বিবেচিত। যাদের কাছে ৭১’র সংগ্রাম ছিল ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই। সেই সব চিহ্নিতদের কাছে আমাদের সংস্কৃতি কোনভাবেই বন্ধক দেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা ইসলামের আদর্শে বিশ্বাসী। তাদের মত আমরা ধর্মব্যবসায়ী নই। বরং আমরা ধর্মভিরু।

প্রকৃত ইসলামের সুবাতাস এই সব চিহ্নিত ধর্মব্যবসায়ীদের গা জ্বলার কারণ। এরা নতুনভাবে আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যের বিরুদ্ধে আঘাত হানতে চায়। তাদের ধৃষ্টতা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ত্রিশ লাখ রক্তের সাগর পেরিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এসময় তিনলাখ মা বোন তাদের সম্ভ্রম দিতে বাধ্য হয়েছেন। এই রক্ত আর সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা, পাতাকা, ভৌগলিক স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কোন চক্রান্তকারীদের চক্রান্তে সেই মূল্যবোধ ধ্বংস হতে পারে না। দেশের ষোলকোটি বাঙালি কোনদিনই এই চক্রান্তকারী আর ষড়যন্ত্রকারীদের সে সুযোগ দেবে না। আমরা ৭১’র চেতনা দিয়েই এই সব চক্রান্ত প্রতিহত করব ইনশাআল্লাহ।  



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]