প্রকাশ: সোমবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২০, ১১:৫৫ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
ইরানের অন্যতম শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিতের অঙ্গীকার করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, হত্যাকারী ও এর নির্দেশদাতাদের সাজা নিশ্চিত করাই ইরানের অগ্রাধিকার। ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ওই মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত গবেষণা ও উদ্ভাবনী সংস্থার প্রধান মোহসিন ফাকরিজাদেহকে বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সন্ত্রাসী ও তার দেহরক্ষীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর গুরুতর আহত ফাকরিজাদেহকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে চিকিৎসক দল তাকে বাঁচাতে সবরকম চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। আর কিছুক্ষণ আগে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এক বিবৃতিতে ফাকরিজাদেহকে ‘দেশের বিশিষ্ট পরমাণু ও প্রতিরক্ষামূলক বিজ্ঞানী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। বলেছেন, ‘হত্যাকারী এবং যারা এ হত্যাকান্ডের আদেশ দিয়েছিল, তাদের জন্য দৃষ্টান্তমুলক সাজা নিশ্চিত করাটাই এখন ইরানের অগ্রাধিকারে বিষয়।’ এ সম্পর্কে আর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেননি খামেনি। ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ইরানের চারজন পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যার শিকার হন। এসব হত্যায় আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইসরায়েল জড়িত বলে অভিযোগ করে আসছে ইরান। ২০১৮ সালের মে মাসে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সংক্রান্ত এক উপস্থাপনায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বিশেষভাবে মোহসিন ফাকরিজাদেহ’র নাম উল্লেখ করেন।
সংযম রক্ষার আহ্বান জাতিসংঘের :ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহ হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ।গতকাল ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জাতিসংঘের একজন মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার প্রেক্ষাপট তৈরি হওয়ায় সংস্থাটি সব পক্ষকে সংযম রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে। বিজ্ঞানী হত্যার বদলা নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন ইরানের শীর্ষ ধর্মীয় নেতা ও দেশটির প্রেসিডেন্ট। এমন প্রেক্ষাপটে ফাখরিজাদেহর হত্যাকান্ডের ঘটনায় উপসাগরীয় অঞ্চলে নতুন করে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।জাতিসংঘের মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা যেকোনো হত্যাকান্ড বা বিচারবহির্ভূত হত্যার নিন্দা জানাই।’ গত শনিবার তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সংযম দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছি। এই অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়তে পারেএমন যেকোনো পদক্ষেপ এড়ানোর আহ্বান জানাই।’ ফাখরিজাদেহকে হত্যার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে ইরান।পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ দাবি করেছেন, এ ঘটনায় ইসরায়েলের হাত রয়েছে। ফাখরিজাদেহকে ইরানের গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিবেচনা করে থাকে পশ্চিমা বিশ্বের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
অভিযোগ অস্বীকার ইসরায়েলের : ইরানের অন্যতম শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যার অভিযোগ তোলা হলেও তা অস্বীকার করেছে তেল আবিব। দেশটির নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও সেটেলমেন্ট অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক মন্ত্রী তাজাচি হানেগবি গত শনিবার দাবি করেছেন, তেহরানের ওই বিজ্ঞানীকে হত্যার নেপথ্যে কে আছে, সে বিষয়ে তাদের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই।
উল্লেখ্য, হানেগ বিইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।ইসরায়েলের টিভি চ্যানেল এন১২-এর মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে ইসরায়েলি মন্ত্রী হানেগবি বলেন, ‘এটা কে করেছে, সে সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। আমি দায়ী বলে মুখবন্ধ তা নয়, আসলেই আমার কাছে কোনও সূত্র নেই।’পশ্চিমা বিশ্বের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো মোহসেন ফাখরিজাদেহকে ইরানের গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। এ ছাড়া কূটনীতিকেরা প্রায়শই তাকে ‘ইরানের বোমার জনক’ আখ্যা দিয়ে থাকেন।গত শনিবার ইরানের পক্ষ থেকে মোহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার সামরিক উপদেষ্টা হোসেইন দেহাগান বজ্রপাতের মতো অপরাধীদের আঘাত করার অঙ্গীকার করেন।ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভাদ জারিফ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের এই কাজের নিন্দা’ করার আহ্বান জানিয়েছেন। ইরানের জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত মজিদ তখত রাভঞ্চি বলেছেন, ‘এই হত্যাকান্ড আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, যা এই অঞ্চলে বিপর্যয় ডেকে আনার জন্য তৈরি।’২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিবিষয়ক এক উপস্থাপনায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বিশেষভাবে ফাখরিজাদেহর নাম উল্লেখ করেছিলেন।