#পাকিস্তানী প্রেতাত্মারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে: হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান।
#বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে আমরা সামনে এগিয়ে নিতে চাই: রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সিদ্দিকী।
#দেশে অস্থির পরিবেশ সৃষ্টির জন্য একটি গোষ্ঠী এসব পাঁয়তারা চালাচ্ছে: সেলিম শামসুল হুদা চৌধুরী।
সম্প্রতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানিয়ে সমাবেশ করেছে মৌলবাদী দুই নেতা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তাদের আস্ফালন দিন দিন বেড়ে চলেছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মাথাচাড়া দিতে দেয়া হবে না। বাংলার মাটি কখনোই মৌলবাদীদের জন্য ছিলোনা এবং থাকবেও না।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৭৩ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। রবিবার (২৯ নভেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান, অভিনেতা ও চিত্রনায়ক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সিদ্দিকী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম শামসুল হুদা চৌধুরী। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, আজকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে। আজকে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি। যে পরাজিত শক্তি ১৯৭১ সালে ধর্মের কথা বলে পাকিস্তান ও ইসলামকে এক করে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল ইসলামী দলগুলো দিয়ে, সে একই শক্তি আজ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা আজ দেখছে আজ আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি এবং একই সাথে মুজিব শতবর্ষ উৎযাপন করতে যাচ্ছি তাই তারা এটা সহ্য না করতে পেরে আমাদের এই বাংলাদেশে ফের ধর্মান্ধতার অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। ধর্মান্ধতা কী ভয়ংকর তা আমরা আফগানিস্তানে দেখেছি। মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতায় জিহাদিদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত ‘ইসলামিক খেলাফতেও’ দেখেছি। ভারতের মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশসহ কয়েকটি রাজ্যে শিবসেনা ও বজরংয়ের দ্বারা দলিত ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর যে ভয়াবহ অত্যাচার চলেছে, তাও দেখেছি। তারা একটি নন ইস্যুকে বড় ইস্যু বানিয়ে পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ভাস্কর্য একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়। ভাস্কর্যের ব্যাপারে ও মূর্তির ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে দুইটি আয়াত আছে। ভাস্কর্যের বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা সাবার ১৩ নং আয়াতে বলেছেন: “তারা সুলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী উপাসনালয় ও দুর্গ, ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত। হে দাউদ পরিবার! (এসব নেয়ামতের জন্য) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। (যদিও) আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পসংখ্যকই কৃতজ্ঞ।” (৩৪:১৩)। এখানে আমরা বুজতে পারলাম হজরত সুলায়মান (আ.) এর সময় তার অনুসারীরা ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিল। হজরত সুলায়মান (আ.) একজন নবী ছিলেন। সব নবীরাই শিরকের বিরুদ্ধে ছিলেন। যদি ভাস্কর্য হজরত সুলায়মান (আ.) এর অনুসারীরা তার আদেশ অনুযায়ী নির্মাণ করেছিলেন; যদি এটি শিরক হতো তাহলে হজরত সুলায়মান (আ.) এটি কখনোই করতেন না। এখন তারা বলছে এটা হজরত সুলায়মান (আ.) এর সময় জায়েজ ছিল কিন্তু এখন জায়েজ না। এখন প্রশ্ন হলো, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে সূরা আল আহযাব ৬২ নং আয়াতে বলেছেন, “যারা পূর্বে অতীত হয়ে গেছে, তাদের ব্যাপারে এটাই ছিল আল্লাহর রীতি। আপনি আল্লাহর রীতিতে কখনও পরিবর্তন পাবেন না।” (৩৩:৬২)। আল্লাহ তায়ালা এই আয়াত দ্বারা এটা বুজাতে চেয়েছেন, অর্থাৎ পূর্ববর্তী নবীদের আমলে আল্লাহ তায়ালা হালাল ও হারামের বিষয়ে যা নিয়ম করে দিয়েছিলেন তাই এখনো প্রযোজ্য হবে। যদি হজরত সুলায়মান (আ.) এর সময় ভাস্কর্য জায়েজ হয়ে থাকে তাহলে এখন কেন নাজায়েজ হবে। এখন যে এটা নাজায়েজ হবে এটা নিয়ে আল্লাহ তায়ালা অন্য কোন আয়াতে কিছুই বলেননি।
রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাগারের রোজনামচা বইতে পড়েছি, উনার নিজের হাতের লেখা থেকে আমরা পেয়েছি যে, আমি একজন বাঙালি, আমি বাঙ্গালী, আমি মানুষ, আমি মুসলমান- একবার মরে, দুইবার মরে না। উনি অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন। ইসলাম নিয়ে উনার কোন সমস্যা ছিলোনা। কিন্তু উনি যখন একটি দেশকে শাসন করেছিলেন, দেশে একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার জন্ম দিয়েছিলেন, সেই অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারাবাহিকতায় তারই কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উনিও তার পিতার মত একজন ধর্মপরায়ণ মানুষ। তিনি তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েন, এবং সম্প্রতি আমরা শুনেছি উনি সকাল বেলা অন্য কিছু করার আগে জায়নামাজ আগে খুঁজেন। যিনি অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ একজন মানুষ, যিনি দেশের মানুষের জন্য সারাক্ষণ কাজ করেন। একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এই অসাম্প্রদায়িক চেতনাটা কি আসলে। বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ আছে। এখানে মুসলমান ধর্মের মানুষ আছে, হিন্দু ধর্মের মানুষ আছে, বৌদ্ধ ধর্মের মানুষ আছে, খ্রিস্টান ধর্মের মানুষ আছে। আমরা সবাই মিলে একটি সোনার বাংলায় বসবাস করছি। আজকে সবাই মিলে একটি সম্প্রীতির বাংলাদেশে বসবাস করছি। একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে আমি চায়, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীন মানুষ হিসেবে আমি মনে করি অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশে বসবাস করছি এবং এই অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে আমরা সামনে এগিয়ে নিতে চায়।
সেলিম শামসুল হুদা চৌধুরী বলেন, শুরুতেই আমি স্মরণ করবো যে মানুষটি আমাদের একটি স্বাধীন বাংলা উপহার দিয়ে গিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখে আমি আমার বক্তব্য শুরু করতে চাচ্ছি। আমার যেটা মনে হচ্ছে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী প্রাক্কালে একটা পরিকল্পিত গোষ্ঠী দেশ ও সমাজকে অস্থির করার জন্য পায়তারা করছে যাতে দেশে একটা অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মূর্তি বা ভাস্কর্য মাত্রই শিরকের উপকরণ-এমন কোন কথা নেই বরং যেটি যে উদ্দেশ্যে বানানো হয় সেটিকে সেভাবে বিবেচনা করতে হবে। ’৭১-এর ঘাতক ও দালালদের বিচারে ফাঁসি দেওয়ার সময় হেফাজতের রাজনৈতিক চরিত্র প্রকাশ পায়। ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের যাতে বিচারে চরম দণ্ড দেওয়া হয়, সেজন্য শাহবাগ চত্বরে লাখ লাখ যুবজনতার সমাবেশ শুরু হয় এবং গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে ওঠে। তখন এর পাল্টা আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জামায়াত ও বিএনপি চক্রান্ত চালায়। হাজার হাজার মাদ্রাসাছাত্র এনে হেফাজতি অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করে। আজকে ৪৯ বছর হয়ে গেল, আমাদের যে লক্ষে পৌঁছানর কথা ছিল সে লক্ষে পৌছাতে পারছিনা কারণ বার বার আমাদেরকে পিছনের দিকে টেনে নামানো হচ্ছে। এই যে ৩০ লক্ষ মানুষ এই দেশের জন্য নিজের জীবন দিয়েছেন, দু লক্ষ মা-বোন ইজ্জত হারা হয়েছেন; তাদের আত্মত্যাগ কোথায় যাবে? আজকে যারা ধর্মের নামে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন তারা কি বুজেন না যে দেশের মানুষ গুলো কিন্তু ঘুমিয়ে নেই। আমরা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এটার বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছি নিয়মিত।