প্রকাশ: রোববার, ২৯ নভেম্বর, ২০২০, ১০:৪৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
সম্প্রতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানিয়ে সমাবেশ করেছে মৌলবাদী দুই নেতা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তাদের আস্ফালন দিন দিন বেড়ে চলেছে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মাথাচাড়া দিতে দেয়া হবে না। বাংলার মাটি কখনোই মৌলবাদীদের জন্য ছিলোনা এবং থাকবেও না।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৭৩ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। রবিবার (২৯ নভেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান, অভিনেতা ও চিত্রনায়ক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ সিদ্দিকী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, জাতীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম শামসুল হুদা চৌধুরী। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, আজকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে। আজকে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি। যে পরাজিত শক্তি ১৯৭১ সালে ধর্মের কথা বলে পাকিস্তান ও ইসলামকে এক করে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল ইসলামী দলগুলো দিয়ে, সে একই শক্তি আজ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা আজ দেখছে আজ আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি এবং একই সাথে মুজিব শতবর্ষ উৎযাপন করতে যাচ্ছি তাই তারা এটা সহ্য না করতে পেরে আমাদের এই বাংলাদেশে ফের ধর্মান্ধতার অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। ধর্মান্ধতা কী ভয়ংকর তা আমরা আফগানিস্তানে দেখেছি। মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতায় জিহাদিদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত তথাকথিত ‘ইসলামিক খেলাফতেও’ দেখেছি। ভারতের মধ্যপ্রদেশ, উত্তর প্রদেশসহ কয়েকটি রাজ্যে শিবসেনা ও বজরংয়ের দ্বারা দলিত ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর যে ভয়াবহ অত্যাচার চলেছে, তাও দেখেছি। তারা একটি নন ইস্যুকে বড় ইস্যু বানিয়ে পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। ভাস্কর্য একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়। ভাস্কর্যের ব্যাপারে ও মূর্তির ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে দুইটি আয়াত আছে। ভাস্কর্যের বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা সাবার ১৩ নং আয়াতে বলেছেন: “তারা সুলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী উপাসনালয় ও দুর্গ, ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত। হে দাউদ পরিবার! (এসব নেয়ামতের জন্য) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। (যদিও) আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পসংখ্যকই কৃতজ্ঞ।” (৩৪:১৩)। এখানে আমরা বুজতে পারলাম হজরত সুলায়মান (আ.) এর সময় তার অনুসারীরা ভাস্কর্য নির্মাণ করেছিল। হজরত সুলায়মান (আ.) একজন নবী ছিলেন। সব নবীরাই শিরকের বিরুদ্ধে ছিলেন। যদি ভাস্কর্য হজরত সুলায়মান (আ.) এর অনুসারীরা তার আদেশ অনুযায়ী নির্মাণ করেছিলেন; যদি এটি শিরক হতো তাহলে হজরত সুলায়মান (আ.) এটি কখনোই করতেন না। এখন তারা বলছে এটা হজরত সুলায়মান (আ.) এর সময় জায়েজ ছিল কিন্তু এখন জায়েজ না। এখন প্রশ্ন হলো, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে সূরা আল আহযাব ৬২ নং আয়াতে বলেছেন, “যারা পূর্বে অতীত হয়ে গেছে, তাদের ব্যাপারে এটাই ছিল আল্লাহর রীতি। আপনি আল্লাহর রীতিতে কখনও পরিবর্তন পাবেন না।” (৩৩:৬২)। আল্লাহ তায়ালা এই আয়াত দ্বারা এটা বুজাতে চেয়েছেন, অর্থাৎ পূর্ববর্তী নবীদের আমলে আল্লাহ তায়ালা হালাল ও হারামের বিষয়ে যা নিয়ম করে দিয়েছিলেন তাই এখনো প্রযোজ্য হবে। যদি হজরত সুলায়মান (আ.) এর সময় ভাস্কর্য জায়েজ হয়ে থাকে তাহলে এখন কেন নাজায়েজ হবে। এখন যে এটা নাজায়েজ হবে এটা নিয়ে আল্লাহ তায়ালা অন্য কোন আয়াতে কিছুই বলেননি।