প্রকাশ: রোববার, ২৯ নভেম্বর, ২০২০, ৩:২৫ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
বিশিষ্ট পদার্থ বিজ্ঞানী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সংস্থার চেয়ারম্যান মোহসেন ফাখরিজাদে হত্যার কঠিন প্রতিশোধ নেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল মোহাম্মাদ বাকেরি।গত শুক্রবার রাতে এক বার্তায় তিনি ঘোষণা করেন, বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও শয়তান ইহুদিবাদী সরকারের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা ইরানের আরেকজন বিজ্ঞানীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। খবর পার্সটুডের।শহীদ ফাখরিজাদেকে ইরানের প্রতিরক্ষা শিল্পের শীর্ষস্থানীয় একজন ব্যবস্থাপক হিসেবে উল্লেখ করে বাকেরি বলেন, তিনি ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে আজকের পর্যায়ে নিয়ে আসার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।ফাখরিজাদেকে হত্যায় ইরানের প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য বড় রকমের ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, তবে শত্রুদের জেনে রাখা উচিত শহীদ ফাখরিজাদে যে পথ দেখিয়ে দিয়ে গেছেন তা কখনো বন্ধ হওয়ার নয়।ইরানের বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সংস্থার চেয়ারম্যান মোহসেন ফাখরিজাদে শুক্রবার সন্ধ্যায় এক সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন।ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গণযোগাযোগ বিভাগ জানিয়েছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তেহরানের অদূরে দামাভান্দ কাউন্টির আবসার্দ শহরের একটি সড়কে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ফাখরিজাদেকে বহনকারী গাড়িতে হামলা চালায়।এ সময় ইরানের এই পদার্থবিজ্ঞানীর দেহরক্ষীদের সঙ্গে সন্ত্রাসীদের সংঘর্ষ হয় এবং মোহসেন ফাখরিজাদে গুরুতর আহত হন। তাকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
হত্যা করেছে মোসাদ : ইরানের অন্যতম পরমাণুবিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিযাদে হত্যাকান্ডের ঘটনায় ইসরায়েল জড়িত বলে মনে করছেন তিনজন মার্কিন কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে দুই জন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা। এ খবর দিয়েছে আমেরিকার প্রভাবশালী পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস। এতে মোসাদের হাত থাকার বিষয়েও ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
গত শুক্রবার ইরানের রাজধানী তেহরানের কাছে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন তিনি। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ‘এই হত্যাকান্ডের কথা আমেরিকা আগে থেকে কতটুকু জানতো তা পরিষ্কার নয় তবে ইসরায়েল ও আমেরিকা নানা বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করে থাকে।’এছাড়া এ বিষয়ে নিউইয়র্ক টাইমস যোগাযোগ করলেও কোনো মন্তব্য করেনি হোয়াইট হাউস ও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ।
এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও ফাখরিযাদেকে হত্যায় ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হাত রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। ইসরায়েলের লেখক ও সাংবাদিক ইয়োসি মেলম্যানের একটি টুইট রিটুইট করেছেন ট্রাম্প। সেই টুইটে মেলম্যান লিখেছেন, তেহরানের পূর্বদিকে মোহসেন ফখরিজাদেহকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি ইরানের গোপন সামরিক কর্মসূচির প্রধান ছিলেন এবং বহু বছর ধরে মোসাদের টার্গেটে ছিলেন। তার মৃত্যু ইরানের জন্য একটি বড় মনস্তাত্ত্বিক এবং পেশাদার আঘাত।’এছাড়াও ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় মোহসেন ফাখরিজাদেকে তার ভাষায় ইরানের ‘পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি’র কারিগর বলেও দাবি করেছেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ২০১৮ সালের একটি অনুষ্ঠানে ইরানবিরোধী আলোচনা করতে গিয়ে বিজ্ঞানী ফাখরিযাদের নাম বার বার উল্লেখ করেছিলেন। সেসময় তিনি হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘স্মরণ রাখবেন নামটি হচ্ছে ফাখরিজাদে’।ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ টুইটবার্তায় বলেছেন, ইরানি পদার্থবিজ্ঞানীর কাপুরুষোচিত হত্যাকান্ডে ইসরায়েলের হাত থাকার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে এবং এই ঘটনায় বোঝা যায়, যারা এ হত্যাকান্ড চালিয়েছে তারা নিজেদের অসহায়ত্বের কারণে একটা যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করছে।তিনি আন্তর্জাতিক সমাজ বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে তাদের নির্লজ্জ দ্বৈত নীতি পরিহার করে এই ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানানোর আহ্বান জানান।