প্রকাশ: রোববার, ২৯ নভেম্বর, ২০২০, ২:০৯ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
ক্রীড়া প্রতিবেদকটি টোয়েন্টি মেজাজে শুরু করতে চেয়েছিলেন খুলনার ব্যাটসম্যানরা। তাই প্রথমেই ছন্দ পতন। একে একে ব্যাটসম্যানদের আত্মহুতিতে একসময় মাত্র ৮৬ রানে থামে তারকাবহুল খুলনা। সাকিব, মাহমুদুল্লাহরা কেউ দাঁড়তেই পারেননি ক্রিজে। সবাই যোগ দেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। তবে চট্টগ্রামের বোলারদের কৃত্বিত্বকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। এদিন প্রথম থেকেই বোলাররা চড়াও হন খুলনার ব্যাটসম্যানদের উপরে। এদিন তো পুরানো মুস্তাফিজ ফিরে এলেন সংহার মূর্তিতে। বোলিং করেই গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ব্যাটিংয়ে অনবদ্য জেমকন খুলনাকে স্রেফ উড়িয়ে দিল। ঢাকার পর খুলনাকেও তারা নিজেদের সামনে দাঁড়াতে দেয়নি।
ঢাকাকে চট্টগ্রাম অলআউট করেছিল ৮৮ রানে। এবার খুলনা অলআউট ৮৬ রানে। ২ রানের কম লক্ষে ব্যাটিংয়ে নেমে চট্টগ্রাম জিতেছে আগের ব্যবধানে। ৩৮ বল আগে ৯ উইকেটের জয়ে ‘বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ স্পন্সরড বাই ওয়ালটন’ এ টানা দুই জয় তুলে নিয়েছে মোহাম্মদ মিথুনের দল। বোলাররা ম্যাচের ভিত গড়েও চট্টগ্রামের দুই ওপেনার ছিলেন দুর্দান্ত। লিটন ও সৌম্য এদিনও উইকেটের চারিপাশে বাউন্ডারির ফুলঝুরি ছোটান। পাওয়ার প্লে’তে চট্টগ্রামের রান বিনা উইকেটে ৩৯। হাসান মাহমুদের করা তৃতীয় ওভারে লিটন একাই নেন ১৭ রান। দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম বল পর্যন্ত টানা চারটি বাউন্ডারি হাঁকান। প্রথমটি মিড উইকেট দিয়ে এবং পরেরটি ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট। এরপরের দুইটি কভার ও মিড অন দিয়ে। পরের ওভারে সাকিবকে অবশ্য বেশ সমীহ করেই খেলেছেন ডানহাতি এ ওপেনার।
সৌম্যও কম যাননি। আল-আমিন, শামীম, মাহমুদুল্লাহকে উড়িয়েছেন দারুণভাবে। তবে জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়তে পারেননি এ ব্যাটসম্যান। মাহমুদুল্লাহর হাওয়ায় ভাসানো বল তুলে মারতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন ২৬ রানে। বাকি কাজ সারেন লিটন ও মুমিনুল। ৯ চারও ৪৬ বলে ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন লিটন। মুমিনুল অপরাজিত ৫ রানে।
এর আগে চট্টগ্রামের অসাধারণ বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে খুলনা ১৭.৫ ওভারে অলআউট মাত্র ৮৬ রানে। এখন পর্যন্ত যা টুর্নামেন্টের দলীয় সর্বনিম্ন রান। শেষ ম্যাচে চট্টগ্রামের কাছে ৮৮ রানে অলআউট হয়েছিল বেক্সিমকো ঢাকা। মুুস্তাফিজ ৪ উইকেট নিয়ে গাজী গ্রুপের নায়ক হলেও খুলনা শিবিরে শুরুর ধাক্কা দিয়েছেন স্পিনার নাহিদুল। ডানহাতি স্পিনারের প্রথম ওভারে সাকিবের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন এনামুল হক বিজয়। মিড অনে বল পাঠিয়ে রান নেওয়ার জন্য দৌড় দিলেও সাকিব সাড়া দেননি। ৬ রানে শেষ হয় বিজয়ের ইনিংস। এরপর সাকিব আলগা শটে নাহিদুলের বলে ক্যাচ দেন মোসাদ্দেকের হাতে। এবার সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ৩ রান। নাহিদুলের দ্বিতীয় শিকার খুলনার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। ডানহাতি ব্যাটসম্যান বাজে শটে এলবিডব্লিউ হন ১ রানে। এরপর তাইজুল জোড়া আঘাত হানেন খুলনা শিবিরে। আগের দুই ম্যাচে রানের খাতা না খোলা ইমরুল অবশ্য গতকাল ২১ রান করেন। তিনিও সøগসুইপ করে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন। অমি ১৪ রানে স্ট্যাম্পড হন বাঁহাতি এ স্পিনারের বলে।
নতুন বলে মুস্তাফিজ করেছিলেন ১ ওভার। রান দিয়েছিলেন ২। ১৪তম ওভারে ফিরে ফিজ ভয়ংকর হয়ে উঠেন। ৩ ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নেন। ৮ বলে ১১ রান করা শামীম মুস্তাফিজের সেøায়ার উড়াতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দেন। এরপর রিশাদ (০), আরিফুল হক (১৫) ও আল-আমিন (০) একে একে সাজঘরে ফেরেন। মাঝে আরিফুলের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট শহীদুল (৫)। লোয়ার অর্ডারে উইকেট নিলেও মুস্তাফিজের বোলিং ছিল অসাধারণ। নিখুঁত লাইন ও লেন্থ মেনে বোলিং করেছেন। বোলিংয়ে ছিল বৈচিত্র্য। নিয়মিত স্লোয়ারের সঙ্গে বাউন্স, শর্ট বল করেছেন। মনে হচ্ছিল আগের মুস্তাফিজ ফিরে এসেছেন। চট্টগ্রামের আগের ম্যাচের মতো এ দিনও মোহাম্মদ মিঠুনের অধিনায়কত্ব ছিল নজরকাড়া। প্রতিপক্ষ বাজে ব্যাটি করেছে বটে। তবে মিঠুনের বোলিং পরিবর্তন, মাঠ সাজানো, চাপ ধরে রাখা, এসব চোখে পড়ার মতোই। এদিকে জবাব দিতে নেমে ১৩.৪ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় চট্টগ্রাম। চট্টগ্রামের ওপেনার লিটন দাস হাফ সেঞ্চুরি করেন। ৪৬ বলে ৫৩ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। ২৬ রান করে আউট হন সৌম্য সরকার। ৫ রান করে অপরাজিত থাকেন মুমিনুল হক। খুলনার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ১টি উইকেট শিকার করেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :জেমকন খুলনা : ১৭.৫ ওভারে ৮৬ (এনামুল ৬, সাকিব ৩, ইমরুল ২১, মাহমুদুল্লাহ ১, জহুরুল ১৪, আরিফুল ১৫, শামীম ১১, শহিদুল ৫, রিশাদ ০, হাসান ১*, আল আমিন ০; নাহিদুল ৪-০-১৫-২, শরিফুল ৩-০-১৯-০, মুস্তাফিজ ৩.৫-০-৫-৪, তাইজুল ৩-০-৩০-৩, মোসাদ্দেক ৩-০-৯-০, সৌম্য ১-০-৬-০)। গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম :১৩.৪ ওভারে ৮৭। লিটন দাস *৫৩ সৌম্য সরকার ২৬ মুমিনুল*৫ মাহমুদুল্লাহ ১ উইকেট।