প্রকাশ: শনিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২০, ২:৫৯ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
ফ্রান্সের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক জিনেদিন জিদানকে অনেকেই রাখেন সবসময়ের সেরা মিডফিল্ডারদের ছোট্ট তালিকায়। গতি, ড্রিবলিং, নিখুঁত পাস সব মিলিয়ে ছিলেন দুর্দান্ত একজন প্লেমেকার। তার তুলনায় দিয়েগো মারাদোনাকে অনেক এগিয়ে রাখছেন মিশেল প্লাতিনি। তার চোখে ফুটবলে জিদান যা করতে পারেন, আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি তা পারেন কমলা দিয়ে।কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে গত বুধবার মারা যান ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত মারাদোনা। আর্জেন্টাইন কিংবদন্তির স্মরণে পরের দিন বিশেষ সংখ্যা বের করে ফ্রান্সের বিখ্যাত ক্রীড়াদৈনিক ‘এল ইকুইপ।’ সেখানে এক সাক্ষাৎকারে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের মহানায়ককে নিয়ে নিজের শ্রদ্ধার কথা জানান ফ্রান্সের সাবেক অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ও কোচ প্লাতিনি।
‘কয়েক বছর আগে বলেছিলাম, জিদান বল দিয়ে যা করেছে, মারাদোনা তা করতে পারত একটা কমলা দিয়ে। সে ফুটবল খেলেছে তবে একজন স্ট্রিট জাগলার হতে পারত।’
ফ্রান্সের ফুটবল ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়দের একজন হিসেবে বিবেচিত ৬৫ বছর বযসী প্লাতিনির চোখে অবশ্য এরপরও মারাদোনা ইতিহাসের সেরা নন।
‘ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়ের আসনে ম্যারাডোনাকে বসানো কঠিন। আমি তার বিপক্ষে খেলেছি, তবে আমার কাছে ক্রুইফ ছিল সবার সেরা। পেলেও ছিলেন, যিনি ১৯৭০ বিশ্বকাপ জিতেছিলেন এবং তিনি মানুষ না অন্য কিছু ছিলেন।’‘মারাদোনা-পেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা যদি থেকে থাকে, তা আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে, তার কারণ দুই দেশই ইতিহাসের সেরা ফুটবলারকে পেতে চায়।”
জিতে ম্যারাডোনাকে শ্রদ্ধা জানালো নাপোলি
নাপোলির ৯৪ বছরের ফুটবল ইতিহাসে কেবল দুটো স্কুদেত্তো জেতার সুযোগ হয়েছে। আর এই দুটোই ঘরে উঠেছিল ডিয়েগো ম্যারাডোনার জাদুতে। নেপলসের ক্লাবে উৎসবের রং ছড়িয়ে দেওয়া ফুটবল ঈশ্বর তাদের হৃদয়ের এতটাই গহীনে আছেন যে, তার গায়ে জড়ানো ১০ নম্বর জার্সিটা অবসরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ম্যারাডোনার মৃত্যুতে নেপলসও তাই শোকের নগরী।
পৃথিবী ছেড়ে গেলেও নাপোলি সমর্থকদের হৃদয়ে তিনি থেকে যাবেন আজীবন। নেপলস ছাড়ার পরও যেমন মৃত্যুর আগপর্যন্ত ছিলেন। ফুটবল ঈশ্বরকে শ্রদ্ধা জানানোর মঞ্চটাও নাপোলি ভক্তরা পেয়ে গেলেন বৃহস্পতিবার রাতে। ম্যারাডোনা মারা যাওয়ার পর ইতালিয়ান ক্লাবটি প্রথমবার মাঠে নেমেছিল ইউরোপা লিগ ম্যাচ দিয়ে। ঘরের মাঠ স্তাদিও সান পাওলোতে রিয়েকার বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় দিয়ে শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় আর্জেন্টাইন কিংবদন্তিকে স্মরণ করেছে নাপোলি।ম্যাচ শুরুর আগেই হাজারও ভক্ত জড়ো হয়েছিলেন সান পাওলোর বাইরে। খেলা শুরুর আগে নাপোলির সব খেলোয়াড় ম্যারাডোনার নাম লেখা ‘১০ নম্বর’ জার্সি গায়ে মাঠে নেমেছিলেন এবং ম্যাচ শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতা পালন করে সম্মান জানানো হয় বুধবার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওপারের চলে যাওয়া ম্যারাডোনাকে।
বাইরে তখন নাপোলি ভক্তের ঢল। ফুল নিয়ে, ব্যানার হাতে ও পতাকা উড়িয়ে স্টেডিয়ামের বাইরে ‘ডিয়েগো ডিয়েগো’ চিৎকারে মুখোরিত হয়ে ওঠে। তাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য এসেছিল যার হাত ধরে, তার চিরবিদায়ে জল ঝরেছে অনেকের চোখেই।নাপোলিতে ৭ বছর কাটিয়েছেন ম্যারাডোনা। নেপলসের এই ক্লাবটির কাছে ম্যারাডোনাই শেষ কথা। তার মৃত্যুর পর নাপোলির স্টেডিয়ামের নাম পাল্টে যাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। সান পাওলো স্টেডিয়াম হতে যাচ্ছে ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা স্টেডিয়াম।
ম্যারাডোনার কফিন ঘিরে থাকা ভক্তরা
দিনভর লাখো ভক্ত পরিবেষ্টিত ফুটবল কিংবদন্তি ম্যারাডোনার শেষকৃত্যে অংশ নিলেন কেবল ২০/২৫ জনের মতো বন্ধু ও স্বজন। একেবারেই পরিজন ঘেরা ছিল সমাহিত করার সেই আয়োজন। বিবিসি জানায়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের বেল্লা ভিস্তায় বাবা-মায়ের সমাধির পাশেই সমাহিত করা হয় এই ফুটবল ইশ্বরকে। এর আগে প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেস কাসা রোসাদায় ম্যারাডোনার কফিনটি রাখা হয় ভক্তদের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য।করোনা সংক্রমণের শঙ্কা উপেক্ষা করে লাখো ভক্ত সমবেত হয়েছিলেন শেষবারের মতো প্রিয় ফুটবলারের কফিন স্পর্শের আশায়। অভ্যাগতদের সবারই চোখে জল, হাতে ফুল। কারও পরনে ছিল ১০ নম্বর জার্সি নয় ম্যারাডোনার ছবি সম্বলিত পোশাক। কেউ দূর থেকেই প্রিয় মানুষটির হাওয়ায় ছুড়ে দিয়েছেন চুমু।
এদিকে লাখো ভক্তকে সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে আর্জেন্টাইন পুলিশকে। প্রেসিডেন্ট প্যালেস অভিমুখে এক কিলোমিটারের চেয়ে বেশি লম্বা লাইনের ভক্তদের ঠেকাতে পুলিশ এক র্পযায়ে রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসও ছুড়েছে। তবু সামলানো যায়নি ভক্তদের।
নেপলসের স্টেডিয়ামের নতুন নামকরণের ঘোষণা
সদ্য না ফেরার দেশে পাড়ি জমানো আর্জেন্টাইন কিংবদন্তী ফুটবলার দিয়াগো ম্যরাডোনার সম্মানে স্তাদিও সান পাওলোর নামকরণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন ইতালীয় শহর নেপলসের মেয়র লুইজি ডি ম্যাজিস্ট্রিস।
বুধবার এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘সান পাওলো স্টেডিয়ামের নামটি ম্যরাডোনার নামে করা হোক।’নাপোলির সাবেক ফুটবল তারকা ৬০ বছর বয়সী ম্যারাডোনার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবরের পর তার সম্মানে বুধবার পুরো স্টেডিয়ামটি আলোকিত করে রাখা হয়। এ সময় শোকাহত ম্যারাডোনা ভক্তরা সমবেত হন স্টেডিয়ামের বাইরে।
এই ম্যারাডোনার নেতৃত্বেই ১৯৮৭ ও ১৯৯০ সালে দুটি লীগ শিরোপা জয় করেছিল নাপোলি। যার সুবাদে ছড়িয়ে পড়েছিল অখ্যাত ওই নগরীর নাম। কিংবদন্তী ম্যরাডোনার মৃত্যু সংবাদ শুনে রাস্তায় নেমে পড়ে নগরীর শোকার্ত ম্যারাডোনা ভক্তরা।টুইটবার্তায় মেয়র বলেন, ‘দিয়াগো আমাদের নাগরিকদের স্বপ্নদ্রস্টা। তিনি তার প্রতিভা দিয়ে নেপলসকে আলোকিত করেছিলেন। আপনি আমাদের সুখি করেছিলেন। নেপলস আপনাকে ভালবাসে।’নাপোলির মালিক ও সভাপতি অরেলিও দে লরেন্টিয়াস আরএমসি রোডিওকে বলেন,‘ স্টেডিয়ামের নাম হতে পারে সান পাওলো-ম্যরাডোনা।’