#অটো প্রমোশন নিয়ে আরও সময় নিয়ে ভাবা উচিৎ: ড. সরিফা সালোয়া ডিনা।
#অনলাইন শিক্ষা কখনোই শ্রেণিকক্ষের বিকল্প হতে পারেনা: ড. মো: নূরে আলম আবদুল্লাহ।
#শেখ হাসিনার সুদক্ষ পরিকল্পনার কারণে বাংলাদেশে করোনা তেমন বিস্তার করেনি: হাফিজুর রহমান আলম।
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২০, ১০:২৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
বর্তমানে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে স্থগিত রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। যদিও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সরকার যতটা সম্ভব শিক্ষার্থীদের বইমুখী রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু দ্রুত এ সংকটের মোকাবিলা করতে না পারলে শিক্ষাব্যবস্থা পিছিয়ে পড়বে। এ বিষয়ে অতি দ্রুত এবং বিকল্প কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া না গেলে শিক্ষাব্যবস্থায় এক অদৃশ্য বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তাই করোনা পরবর্তী শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করছে সরকার।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৭১ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর এর উপ- উপাচার্য অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয়া ডিনা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো: নূরে আলম আবদুল্লাহ, জার্মান আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা হাফিজুর রহমান আলম। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
অধ্যাপক ড. সরিফা সালোয়া ডিনা বলেন, অত্যন্ত সময়োপযোগী বিষয় নিয়ে আজকে সংলাপে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোয় ভোরের পাতা কর্তৃপক্ষ ও সঞ্চালককে আন্তরিক অভিবাদন জানাই। আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি বাংলাদেশের জাতির পিতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি এবং তার সুযোগ্য তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি, যার যুগোপযোগী চিন্তা ও কর্ম উদ্যোগের কারণে আজ এই করোনার মহামারীর মধ্যেও তিনি দেশের অর্থনীতি, চিকিৎসা ব্যবস্থাসহ শিক্ষা খাতেও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। এই সমস্ত দিকের তুলনায় বিশ্বে অনেক দেশের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে আছি আমরা। করোনা গত ১৮ই মার্চ থেকে শুরু হয়ে ধারাবাহিকতায় আজ পর্যন্ত সকল কিছু স্বাভাবিক পর্যায়ে আসলেও স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি ছাড়াও সকল কিছুই প্রায় স্বাভাবিক পর্যায়ে এসে পড়েছে। আমরা যদি অতীতে যদি তাকাই তাহলে দেখতে পাবো বিগত যে মহামারি গুলো পৃথিবীতে এসেছিল তার সব গুলোতেই ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এই যে নো মাস্ক নো সার্ভিস চালু হওয়ার পরেও দেশে এখনো অসচেতনতা এখনো কমে নেই। হাট-বাজারে এখনো মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। ১৮ই মার্চের থেকে দেশে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হলো সেখানে আমাদের রাষ্ট্র একটা দিগন্তকারি পদক্ষেপ নিয়ে এটা করেছিল। আমাদের জাতির যারা ভবিষ্যৎ, ভবিষ্যতে যারা এই জাতিকে নেতৃত্ব দিবে তাদের কোথায় চিন্তা করে সরকার এখন অব্ধি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে। তাদেরকে নিরাপদে রাখবার প্রয়াস এইসব করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত নানা কৌশল, নানা পরীক্ষা করেও শারীরিকভাবে যে পড়াশুনার ব্যবস্থা করা যায় স্কুল-কলেজে এই অবস্থায় আমরা এখনো পৌছতে পারিনি। তবে স্বাস্থ্যবিধি পালন করে আমাদের কিন্ত একদিন না একদিন ক্লাসরুমে ফিরতেই হবে। সরকার ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত বিধিবিধান প্রণয়ন করেছে। যা এখন নেট দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে আমরা যেটাই করতে যাই না কেন তার আগে করোনার বহুমাত্রিক রূপ ও তার ভয়াবহ প্রভাব মাথায় রেখেই করতে হবে। নিতে হবে সঠিক সিদ্ধান্ত। এবং তা বাস্তবায়নে ছক কষতে হবে নিখুঁতভাবে। প্রতিষ্ঠান খোলার আগে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাসরুমভিত্তিক আসনবিন্যাস, স্বাস্থ্য-সুরক্ষা সরঞ্জামাদির সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করেই তা করতে হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব কতটা নিশ্চিত করা যাবে তা কিন্তু ভাববার বিষয়। আমরা দেখেছি ইউরোপ-আমেরিকায় স্কুল কলেজ খোলার পরে এক সপ্তাহের মধ্যে লক্ষাধিক শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং পরে তড়িঘড়ি করে তা আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছ। ফলে আমাদের মত এই ঘনবসতির দেশে এখন পর্যন্ত স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
অধ্যাপক ড. মো: নূরে আলম আবদুল্লাহ বলেন, ১৬মার্চ সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার ঘোষণা দেন এবং সেটা ২২ মার্চ থেকে কার্যকর হয় এবং পুরো দেশে লকডাউন অবস্থায় চলে যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার মত অবস্থা তখনো ছিলোনা এখনো নেই কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি করোনা সংক্রমণ আরও বাড়ছে। আমার আগের বক্তা তার বক্তব্যে বলেছেন, বিশ্বের অনেক দেশেই এই করোনার সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছিল এবং পরে তার ফলাফল খারাপ দেখে তা পুনরায় আবার বন্ধ ঘোষণা করেছে। এই ক্ষেত্রে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার মত কোন কাজ করেননি কারণ আমরা একটি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় আছি শিক্ষা নিয়ে। অনলাইন শিক্ষার দ্বারা আমাদের সমাজে একটা ব্যাপক বৈষম্য তৈরি হয়েছে। কিভাবে সেটি আমি বলছি। আমরা যারা শহরে আছি, আমার নিজের সন্তানরাও অনলাইনে ক্লাস করছে। আমাদের শিখকদেরও অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার মত প্রযুক্তি আছে। কিন্তু আমরা যদি একেবারে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো সেখানে শিক্ষকদের অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার মত পর্যাপ্ত ফ্যাসিলিটি নাই তার কাছে। আবার সেদিকে শিক্ষার্থীর দিকে তাকালেও দেখতে পাবো, গ্রামে বেশিরভাগ পরিবারের মধ্যে তার ছেলে-মেয়েকে স্মার্ট ফোন দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষার্থীদের জন্যও চালু করা হয়েছে টিভিতে সীমিত আকারে পাঠদান। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও টিভিতে প্রাথমিকের ক্লাস চালু করেছে। যদিও প্রান্তিক জনপদে টিভি না থাকারও একটা বিষয় আছে এখানে। আবার যাদের টিভি আছে তারাও মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে সঠিকভাবে ক্লাসে যোগদান করতে পারছে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি অনুমোদন নিয়ে ‘জুম’ অ্যাপস ও অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে সীমিত আকারে তাদের পাঠ ও পঠন চালু করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ফলে গ্রামে গঞ্জে অনলাইনে শিক্ষা ব্যবস্থা তেমন আশাতীত ভূমিকা রাখছে না বললেই চলে। তাই আমি আপনাদের মত একমত যে, তাই আমার কাছে অনলাইন ক্লাস শ্রেণিকক্ষের বিকল্প কখনোই হয়ে উঠতে পারে না।
হাফিজুর রহমান আলম বলেন, আজকের ভোরের পাতা সংলাপের বিষয় বস্তু-করোনার দ্বিতীয় আঘাত: কোন পথে শিক্ষা ব্যবস্থা; নিষঙ্গে বলতে চায়, পুরো পৃথিবীতে শিক্ষা ব্যবস্থা বাধার মুখে। লাইভ ক্লাস রুমে যে শিক্ষাটা হয়, সেটা অনলাইন প্রযুক্তি যতই ভালো হোকনা কেন সেটা বিকল্প হতে পারেনা। কিন্তু তারপরেও এখানে একটা প্রশ্ন থেকে যায়, ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় জননেত্রী শেখ হাসিনা ওয়াদা করেছিলেন ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে। আজকে তিনি যদি তার কথা না রাখতে সক্ষম না হতেন তাহলে আজকে ৬০% বা ৭০% বলেন যারা অনলাইনে শিক্ষা নিতে পারছে তারাও কিন্তু এর থেকে বঞ্চিত হতেন। জার্মানিতে আজকে স্কুল কলেজ এখনো খোলা কিন্তু এখানে সরকারের একটা বৃহৎ অংশ এটার বিরোধিতা করছেন। যেকোনো মুহূর্তে এটা বন্ধ হতে পারে আবার নাও হতে পারে। কিন্তু এখানে আইন কঠোরভাবে মানা হচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশে একটা বৃহৎ শ্রেণি আছ যারা এই স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। জার্মানিতে এমন একটা শ্রেণি আছে যারা এই আইন মানে না কিন্তু তারা সংখ্যায় কম। শিক্ষা ব্যবস্থা জার্মানিতে তেমন খারাপ অবস্থায় পরেনি। বাংলাদেশে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উনি যখন যে সিদ্ধান্ত নেন, সেটি অবশ্যই মানববান্ধবভাবে চিন্তা করে জনগণের জন্য নেন। জার্মানের মত উন্নত একটা দেশে এখন করোনা যেভাবে মোকাবেলা করছে সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত সুনিশ্চিত, সুদক্ষ ও সুন্দর পরিকল্পনার কারণেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ এখনো বাংলাদেশে তার পুরোপুরি বিস্তার করতে পারেননি।