নোয়াখালীতে ১২০ শয্যার কোবিড -১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে নানা সংকটে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এই অবস্থায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় বিশেষায়িত হাসপাতালটি কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে তা নিয়ে শংকা প্রকাশ করছেন খোদ চিকিৎসকগণ।
জেলা শহরের মাইজদী শহীদ ভুলু ষ্টেডিয়ামের প্যাভিলিয়ন ভবনের প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় স্থাপিত কোবিড -১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালটিতে গত ১৯ আগষ্ট কেন্দ্রিয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার পাশাপাশি দুটি ভেন্টিলেটর ও তিনটি হাইপ্লো নেজাল ক্যানোলা সম্বলিত ৮ শয্যার একটি হাই কেয়ার ইউনিটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছিল। কিন্তু জনবল ও আর্থিক সংকটে শুরুতেই সব আয়োজন মুখ থুবড়ে পড়ে। বরারদ্দ না থাকায় উদ্বোধনের পরের সপ্তাহ থেকে সিলিন্ডারগুলো রিফিল করা যাচ্ছে না। যার কারণে কেন্দ্রিয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা বিকল হয়ে আছে, দক্ষ জনবলের অভাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া দুটি ভেন্টিলেটর অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তিনটি হাইপ্লো নেজাল ক্যানোলা এবং হাই কেয়ার ইউনিটের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে আছে।
অন্যদিকে বরাদ্দ না থাকায় রোগীদের খাবার ও চাহিদা মতো ওষধ সরবরাহ করতে না পারার কারণে চিকিৎসকদের সাথে রোগীদের ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে।
জেলা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সভাপতি ডঃ ফজলে এলাহী খান জানান, শুরু থেকে ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স এবং আউট সোসিং ১৭ জন কর্মী দিয়ে হাসপাতালটি পরিচালিত হচ্ছিল। কিন্তু আউট সোসিং জনবলের জন্য এ পর্যন্ত কোন বরাদ্দ না আসায় তাদের সবাই চাকুরি ছেড়ে চলে গেছেন। জুন মাস থেকে সব ধরণের বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসক, নার্স এবং রোগীদের থাকা খাওয়া ও ওষধ দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
কোভিড ১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালের সমন্বয়ক ডা. নিরূপম দাস জানান, হাসপাতালটিতে কোভিড সংক্রমণের প্রথম দিকে গড়ে ৭০/৮০ জন রোগী ভর্তি ছিল। এখন তা নেমে ৪/৫ জনে এসেছে। কার্যত ৮০ বেডের এ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য ৬০ বেড ও সন্দেহভাজন করোনী রোগীদের জন্য আলাদা ২০ বেডের আইসোলেশন ইউনিট রয়েছে। আইসিইউ এবং ভেন্টিলেটর চালু না হওয়ার আগ পর্যন্ত জটিল রোগীদের চিকিৎসা এখানে সম্ভব নয়।
সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার বলেন, এ মাসের শেষের দিকে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ভেন্টিলেটর দুটি চালু করা যাবে। এছাড়া বরাদ্দ পেলে কেন্দ্রিয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা সচল করা যাবে।
জেলার সার্বিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমার আওতাধীন জেলার ৮টি স্বাস্থ্য কমপেক্স রয়েছে। প্রত্যেক স্বাস্থ্যকমপেক্সে ১০ বেড করে ৮০ বেডের আইসোলেশন ইউনিট চালু আছে। এরমধ্যে সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্যকমপেক্সে ২টি করে অক্সিজেন কনসেনন্ট্রেটর এবং ১০ বেডের চাটখিল স্বাস্থ্য কমপেক্সে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম চালু আছে। এসব স্বাস্থ্য কমপেক্সে চিকিৎসা কাজে নিয়োজিতদের সুরক্ষা সামগ্রী এবং অক্সিজেন সংকট নেই।
এদিকে শীতে করোনার সংক্রমন বাড়তে পারে, এমন আশংকা আলোচনায় থাকলেও সংক্রমনকে তেমন একটা পাত্তা দিচ্ছেন না জেলার অধিকাংশ মানুষ। শারীরিক দুরত্ব দুরের কথা, মাস্ক পরতে ৭০ ভাগ মানুষের অনিহা। সরকারি বিধি নিষেধ ও স্বাস্থ্য বিধি না মানার প্রবনতা সর্বত্র। জেলা শহর মাইজদী, বানিজ্যিক শহর চৌমুহনী ও উপজেলা সদরের হাট-বাজার, দোকানপাট, যানবাহন, মসজিদ ও গুরুত্বপুর্ণ স্থানসহ সর্বত্র একই চিত্র। সম্ভাব্য করোনায় রোগীদের মধ্যে আগের মতো নমুনা পরীক্ষার আগ্রহ দেখা যায় না। গত তিন মাস আগে জেলার আবদুল মালেক মেডিকেল কলেজ ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিসিআর ল্যাবে মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হতো। এখন এ সংখ্যা চার থেকে পাঁচশত। এর মধ্যে ৮০ ভাগ বিদেশগামী।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান জানান, করোনার সংক্রমণ রোধে মাস্ক ব্যাবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, সরকারি-বেসরকারী দপ্তর সহ জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী নেতা, মসজিদের ইমামসহ বিভিন্ন ধর্মী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। “মাস্ক ব্যাবহার না করলে সেবা দেওয়া হবে না” এটি নিশ্চিত করতে এখন থেকে নিজ দপ্তরের প্রবেশ পথে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মাস্ক ব্যাবহার ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা ও কোভিড হাসপাতালে বেড সংখ্য বাড়ানো এবং প্রত্যেক উপজেলায় ১০ বেডের পূর্ণাঙ্গ অক্সিজেন সিস্টেম ও আইসোলেশন সিস্টেম চালু করাসহ আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।