ক্ষমতার কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে বিভক্ত হয়ে যাওয়া হেফাজতে ইসলামের দুটি অংশই ভিন্ন ভিন্ন কৌশলে তৎপরতা চালাচ্ছে। আলোচিত এ সংগঠনের নতুন আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিটি দ্রুত জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিলেও ভিন্ন পথে হাঁটছেন প্রয়াত আমির আল্লামা আহমদ শফীপন্থিরা। তারা দ্রুত কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে পাল্টা কমিটি ঘোষণাসহ যাবতীয় কর্মকান্ডে ধীর নীতি অনুসরণ করছেন।
সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী জানিয়েছেন, হেফাজতের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিকে আরও সম্প্রসারণ করা হবে। যাতে বাদ পড়া নেতাদের স্থান দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত। দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলা, উপজেলা ও থানা কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তৃণমূলের কমিটি গঠনের জন্য শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলছে।’ প্রয়াত আমির আল্লামা শফী অনুসারী হিসেবে পরিচিত সদ্য সাবেক যুগ্মসম্পাদক মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ‘হেফাজতের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
এ বিষয়ে দেশের শীর্ষ আলেম ও সিনিয়র কওমি নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চলছে। দেশের সব জেলার মুরব্বিদের মতামত নিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।’ জানা যায়, আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর পর হেফাজতে ইসলামের পরবর্তী কান্ডারি নির্বাচন কেন্দ্র করে বাগ্যুদ্ধে নেমে পড়েন আহমদ শফী ও জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারীরা। পুরনো কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণার পর একে অন্যের দিকে অভিযোগের তীর ছুড়ছেন। আহমদ শফীপন্থিদের অভিযোগ, একটি শক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে সুকৌশলে বাদ দেওয়া হয়েছে ত্যাগী নেতাদের অংশবিশেষকে। এ নিয়ে ঢাকা ও চট্টগ্রামে একাধিক সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।
বাবুনগরী নেতৃত্বাধীন কমিটি ঘোষণার পর পাল্টা কমিটি গঠনের ঘোষণাও দেন শফীপন্থিরা। এরই মধ্যে ঢাকায় একাধিক বৈঠকও করেন। তৈরি করা হয় পাল্টা কমিটির রূপরেখা। শুরুতে পাল্টা কমিটি ঘোষণা নিয়ে তোড়জোড় থাকলেও পরে ওই নীতি থেকে সরে এসেছেন শফীপন্থিরা। তারা দ্রুত পাল্টা কমিটি ঘোষণা না করে জেলায় জেলায় শীর্ষ আলেম ও কওমি নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিভিন্ন জেলা সফরের জন্য কয়েকটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা এরই মধ্যে বিভিন্ন জেলায় সফরও শুরু করে নিজেদের পক্ষে জনমত সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
আল্লামা শফীপন্থিদের ঠিক বিপরীত চিত্র আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী নেতৃত্বাধীন কমিটির। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলা, উপজেলা, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে চান। এরই মধ্যে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। পাশাপাশি বাদ পড়া নেতাদের ফের কমিটিতে স্থান দিয়ে কমিটি সম্প্রসারণের উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।