নৈরাজ্য সৃষ্টি কারীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে: হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ১০:৪৮ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
আফগানিস্তানের অনুকরণে সম্প্রতি বাংলাদেশেও ভাস্কর্য ভাঙার দাবি তুলেছে কওমি বা দেওবন্দি হিসেবে পরিচিতদের একটি অংশ। দিন যত যাচ্ছে আমরা আরও অসহিষ্ণু হয়ে উঠছি। ধর্মকে ব্যাপকহারে ব্যবহার হচ্ছে লোভের অংশ হিসেবে। ধর্মকে রাজনীতির অংশ পরিণত করতে করতে, একে পেশাও বানিয়ে ফেলা হয়েছে। পেশা থেকে তা ক্ষমতার কেন্দ্রে পৌঁছানোর সাঁকোও হয়ে উঠেছে। জল কিন্তু বহুদূর গড়িয়েছে। এদের এখনি প্রতিরোধ করতে হবে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৬৮ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া এর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান, সাবেক স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি কে এম লোকমান হোসেন। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান বলেন, ভাস্কর্যের বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা সাবার ১৩ নং আয়াতে বলেছেন: “তারা সুলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী উপাসনালয় ও দুর্গ, ভাস্কর্য, হাউযসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত। হে দাউদ পরিবার! (এসব নেয়ামতের জন্য) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। (যদিও) আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পসংখ্যকই কৃতজ্ঞ।” (৩৪:১৩)। এই সূরার একটি আয়াতে তামাসিল আরবি শব্দ রয়েছে যার বাংলা অর্থ হচ্ছে ভাস্কর্য। আরেকটি সুরা ইব্রাহিমের ৩৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: '(স্মরণ কর সে সময়ের কথা) যখন ইব্রাহীম বললেনঃ হে পালনকর্তা, এ শহরকে তথা মক্কাকে শান্তিময় ও নিরাপদ করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তান-সন্ততিকে মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন।' মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে সংগ্রামে অভিজ্ঞ হযরত ইব্রাহীম (আ.) সত্য-সন্ধানী মানুষের হৃদয়কে তৌহিদের বাণীর মাধ্যমে আলোকিত করেছেন এবং অজ্ঞতার আঁধারে ডুবে-থাকা একদল মানুষকে আলোর পথে এনেছেন। এই দুইটি আয়াতের মধ্যে তামাসিলা শব্দের অর্থ হচ্ছে ভাস্কর্য আর পরের আয়াতে যে আসনাম আরবি শব্দটি রয়েছে যার অর্থ প্রতিমা পূজা। এখন স্বাধীনতা বিরোধী মৌলবাদীরা যাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে কোন অবদান নেই, যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় বসে বসে তামাশা দেখেছে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যখন এই দেশে অরাজকতা চালিয়েছে তখন তারা তাদের বিরুদ্ধে রুখে না দাড়িয়ে তাদের সহযোগিতা করেছে তারা আজকে এই অপ্রাসঙ্গিক বিষয় টেনে এনে এটাকে নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। ৭১-এর আগে, ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে ও পরবর্তীতে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক শ্রেণির তথাকথিত আলেম-উলামা যা করেছেন এর কারণে সমাজে তাদের সম্বন্ধে স্বাভাবিকভাবেই একটি নেতিবাচক ধারনা বিদ্যমান। যেখানে দেশ প্রেমকে ঈমানের অঙ্গ বলা হচ্ছে, সেখানে তারা ওই সময় এই হানাদার বাহিনীদের বিরুদ্ধে না গিয়ে তাদের আরও উৎসাহিত করেছেে এবং আজকে তারা এই দেশের জন্য যারা নিজের জীবন দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ধারক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করছে। শেষে এটাই বলব, এ দেশ ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার। আমরা চাই, সবাই তার নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে। এক্ষেত্রে যারা বিরোধ সৃষ্টি করতে চাইবে তাদেরকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা যারা ধর্মের নামে অধর্ম করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার পায়তারা করার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।