ভাস্কর্য কোনভাবেই ইসলাম অসঙ্গত নয়: ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ১০:৫২ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
আফগানিস্তানের অনুকরণে সম্প্রতি বাংলাদেশেও ভাস্কর্য ভাঙার দাবি তুলেছে কওমি বা দেওবন্দি হিসেবে পরিচিতদের একটি অংশ। দিন যত যাচ্ছে আমরা আরও অসহিষ্ণু হয়ে উঠছি। ধর্মকে ব্যাপকহারে ব্যবহার হচ্ছে লোভের অংশ হিসেবে। ধর্মকে রাজনীতির অংশ পরিণত করতে করতে, একে পেশাও বানিয়ে ফেলা হয়েছে। পেশা থেকে তা ক্ষমতার কেন্দ্রে পৌঁছানোর সাঁকোও হয়ে উঠেছে। জল কিন্তু বহুদূর গড়িয়েছে। এদের এখনি প্রতিরোধ করতে হবে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৬৮ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া এর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোটের সভাপতি হাফেজ মাওলানা জিয়াউল হাসান, সাবেক স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী, সর্ব ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি কে এম লোকমান হোসেন। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন, ধন্যবাদ জানাই বিজ্ঞ সঞ্চালক ও ভোরের পাতাকে আজকে আমাকে এই সংলাপে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। দেখুন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আজকে সংলাপের বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। সারা বিশ্ব যখন এই করোনার ভয়াল থাবার মধ্যে প্রায় মুমূর্ষু অবস্থার মধ্যে আছে সেখানে বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনার অদম্য, দক্ষ ও চৌকশ নেতৃত্বে বাংলাদেশ তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক সেই মুহূর্তে একটি অনর্থক বিষয় নিয়ে জল ঘোলা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আসলে ব্যাপারটা ভাস্কর্য নয়, ভাস্কর্য কার করা হচ্ছে সেখানেই তাদের আপত্তি। ভাস্কর্য মূর্তি নয়, ভাস্কর্য কোনভাবেই ইসলাম অসঙ্গত নয়। আল্লাহ এবং রাসুল ছাড়া আর কারো প্রতিকৃতি করা যাবেনা যার দারা কোন পৌত্তলিকতা করা যাবে না বা মান্য করা যাবেনা। আজকে এত বছর অন্য প্রসঙ্গ সামনে এনে এই হাদিসটির ব্যাবহার করে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সমাজে ও রাষ্ট্রে কোন্দল পাকাতে চাচ্ছে। ধর্মকে অবমাননা করার কথা শুধুমাত্র তারাই বুঝে যারা এই ধর্মকে ব্যবহার করে দেশের ইতিহাস মুছে দেওয়ার নোংরা ষড়যন্ত্র করছে আর ভাস্কর্য কখনোই ধর্ম অবমাননা করার মাধ্যম হয়না ভাস্কর্য মানে ইতিহাসকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা। প্রতিমা, ভাস্কর্য ও মূর্তি। প্রতিমা হল মানুষ যার আরাধনা উপাসনা করে, ইহকালে-পরকালে মঙ্গল চায়, ভুলের ক্ষমা চায় ইত্যাদি। ভাস্কর্য হল মানুষসহ কোনো প্রাণী বা কোনো কিছুর মূর্তি যাকে মানুষ রাখে সম্মান দেখতে বা সৌন্দর্য্য বর্ধন করতে, যার মানুষ আরাধনা বা উপাসনা করে না। ইসলামে ভুল ব্যখ্যা দিয়ে কিছু রাষ্ট্র বিরোধী লোক আছে তারা উল্টা পাল্টা কথা বলে এদেরকে ডিজিটাল আইনের আওতায় আনা হোক। ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে যে বিধিনিষেধ ছিল না তার ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত রয়েছে। আবু বকর (রাঃ) এর শাসনামলে আমর বিন আসের মিশর অভিযানে ফারাও ও স্ফিংস ভাস্কর্য অক্ষত ছিল। সাদ বিন আবি ওয়াক্কাসের ইরাকে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সময়ও কোনো মূর্তি ভাঙ্গা হয়নি। ধর্মের দোহাই দিয়ে কিছু দিন আগেই একজন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো। এই ঘটনাগুলোর দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয় না বলেই পরবর্তীতে অন্য কোনো ব্যক্তি, অন্য কোনো স্থানে সাহস পায় ধর্মকে ব্যবহারের। লালমনিরহাট কেবল উদাহরণ মাত্র। প্রতীক মাত্র। ধর্ম ছাড়াও সাধারণ গুজব ছড়িয়ে দেশের আনাচে কানাচেতে প্রায়ই নানান ঘটনা ঘটছে। যার নেই প্রতিকার।