মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারি: রাশেদ চিশতীরা জামিন পাচ্ছে কীভাবে?
ভোরের পাতা ডেস্ক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ৯:৫৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

দেশের ইতিহাসে পারিবারিকভাবে সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি হিসেবে পরিচিত ‘ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারি’।
ব্যাংকটির সাবেক অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক চিশতী ও তার পরিবার সরাসরি এর সঙ্গে জড়িত বলে তদন্তে প্রমাণ পায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে আসে- মহিউদ্দীন খান আলমগীর, মাহাবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী এবং তার ছেলে রাশেদুল হক চিশতীসহ পরিবারের সদস্যরা ব্যাংকটি থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার উপরে তুলে নেন। এতে ভয়াবহ সংকটে পড়ে ব্যাংকটি। আমানতকারীরাও টাকা তুলে নিতে থাকে। এর প্রভাব পড়ে ব্যাংকিংসহ পুরো আর্থিক খাতে। 

এরপর বের হতে থাকে এ ব্যাংক নিয়ে ব্যাংকটির সেসময়ের চেয়ারম্যান সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দীন খান আলমগীর ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক বাবুল চিশতীর একের পর এক লুটপাটের প্রমাণ। 

এ কেলেঙ্কারি তদন্তে গঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিটি দুই জনের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে উঠে আসে পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক ছাড়াই চেয়ারম্যান ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান-এমডির যোগসাজশে ব্যাংকটির অধিকাংশ শাখায় ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। যার ভাগ মহিউদ্দীন খান আলমগীর ও বাবুল-রাশেদ চিশতির ব্যাংক হিসাবে ঢোকে। পে অর্ডারের মাধ্যমে এ টাকা নেয়া হয়। কেবল তাই নয়, চাকরি দিয়েও টাকা নেন মহিউদ্দীন খান ও বাবুল চিশতী।

এমন প্রেক্ষাপটে ২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপে পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন মহিউদ্দীন খান আলমগীর ও মাহাবুবুল হক চিশতী। এরপর একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর এমডি একেএম শামীমকে বরখাস্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

কেলেঙ্কারির এই ঘটনা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে দেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করতে হয়। 
তবে এতো বড় লুটপাটের পরও ’বিচারের দীর্ঘসূত্রতার’ সুযোগ নিচ্ছেন জড়িতরা। দ্রুত তদন্ত শেষ করে বিচার সম্পন্ন না হওয়ায় আইনের ফাঁক দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন তারা। ব্যাংকটির সে সময়ের চেয়ারম্যান মহিউদ্দীন খান আলমগীর রয়ে গেছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

কেলেঙ্কারির নায়ক সে সময়ের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহাবুবুল হক চিশতী ও তার ছেলে রাশেদুল হক চিশতী কারাগার থেকে বের হতে হয়ে উঠছেন বেপরোয়া। মামলা লড়তে নিয়োগ করেছেন সিরাজুল হক‘স অ্যাসোসিয়েটকে।

চিশতী পরিবারের পক্ষে এখন আইনি লড়াই করছেন চেম্বারের আইনজীবী শাহারিয়া কবির বিপ্লব ও তৌফিকা করিম। এরইমধ্যে এ কেলেঙ্কারির পাঁচ মামলায় নিম্ন আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন বাবুল চিশতীর ছেলে রাশেদ চিশতী। 

তবে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন মানি লন্ডারিংয়ের দুই মামলার কারণে কারাগারে আছেন আলোচিত এই পিতা-পূত্র।
এ ধরনের আসামিদের জামিন ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতা আর্থিক খাতের জন্য দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের আশঙ্কা, এতে অপরাধীরা আরও উৎসাহিত ও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে। 

এ ধরনের মামলার আসামিদের জামিন যাতে না হয় এবং মামলা যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি হয় সে দাবি জানিয়েছেন তারা।
ব্যাংকিং খাতের এই কেলেঙ্কারি নিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ’ব্যাংকিং খাতের এই দুর্দশা থেকে উত্তরণের একটাই পথ এবং এটা কোনো রকেট সায়েন্স এর বিষয় না। এর সঙ্গে জড়িত বা যারা ফিনান্সিয়াল ক্রাইম করেছে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

’কিন্তু মুশকিলের বিষয় হলো, অপরাধীরা জামিন পাওয়ায় এটা প্রমাণিত হয় যে, এতো বড় ফিনান্সিয়াল ক্রাইমে যারা জড়িত, যারা এই সম্পত্তি লুট করছেন বা এর পেছনে যারা আছেন তাদের একটা অংশ অত্যন্ত পাওয়ারফুল ও ক্ষমতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। যে কারণে তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।’

তিনি বলেন, ‘এটা শুধু তাই নয় যে, তার ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে । এ ক্ষেত্রে এই বিষয়ে কোথায় কী নিয়ম কানুন হবে বা কী সিদ্ধান্ত হবে- এসবও ডিক্টেট করার ক্ষমতা রাখে তারা। এই মামলার ক্ষেত্রেও তারা সেগুলাই করে যাচ্ছে।’

দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থাটির বাংলাদেশের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ’ক্ষমতার এই অপব্যবহারের কারণে আর্থিক খাতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না । এর প্রভাব পড়ছে অন্যান্য খাতেও।’

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আরো বলেন, ’ব্যাংকিং খাতের এই অবস্থার যারা হোতা তারা রাষ্ট্রক্ষমতার কাঠামোকে প্রায় দখল করে ফেলেছে। এটাকে স্টেট ক্যাপচার বলা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব নিয়ন্ত্রক সংস্থাই এখন তাদের হাতে জিম্মি।’

ফারমার্স ব্যাংক কেলেঙ্কারি নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ’রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাবে ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগ একটি বড় ত্রুটি। বড় বড় আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত পরিচালক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। এটা করা হলে লোকজন কিছুটা সতর্ক হতো। 
’তবে বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধীরা উল্টো ভোগবিলাসের জীবন যাপনের সুযোগ পায়। এটা একটা বিকৃত প্রণোদনার মতো। টাকা পয়সা চুরি করলেও তাদের কিছু হয় না। এর ফলে অন্যরা আর্থিক অনিয়ম করতে উৎসাহিত হয়।’

সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন বলেন, ’দেশের আইনি কাঠামোয় গলদ আছে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে একই পরিবারের ৪-৫ জন সদস্য দীর্ঘ মেয়াদে থাকছে। এগুলোও সংস্কার করতে হবে। নইলে অনিয়ম বারবার ঘটবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ’সরকারের নীতি-নির্ধারকদের সঙ্গে ব্যাংকের ঋণ খেলাপিদের বেশ ভালো যোগাযোগ দেখা যাচ্ছে। যে কারণে এ খাতের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। সহসা এই সমস্যার কোনো সমাধান হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না।” 

তিনি বলেন, ’তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। আর্থিক অনিয়মের কারণে ফারমার্স ব্যাংক পুনর্গঠন করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সাবেক চেয়ারম্যান ম খা আলমগীরসহ অনেক অপরাধীরই  কিছু হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে কথা হয় বেসরকারি আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক ও আর্থিক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতির মূলে রয়েছে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসনের অভাব। এটি নিশ্চিতে সরকার কমিশন গঠনের কথা বলেছিল। কিন্তু সেখানেও দেখা গেছে সদিচ্ছার অভাব। ফলে এ বিষয়ে এখনও কোনো অগ্রগতি হয়নি।’ 
পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘ইতিমধ্যে আর্থিক কেলেঙ্কারির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে দোষী সাব্যস্ত কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছেন। সেখানেও দেখা যাচ্ছে, বিচারিক প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা। 

’এই সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ জামিন নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। চূড়ান্ত বিচারে দোষী প্রমাণিত হওয়ার আগে যে কেউ শর্তসাপেক্ষে জামিন নিতে পারেন। কিন্তু এ ধরনের স্পর্শকাতর মামলায় অভিযুক্তরা জামিনে থাকলে তা আর্থিক খাতের দুর্বৃত্তদের আরও উৎসাহিত করে। ’

তিনি বলেন, ‘কেউ দোষী না নির্দোষ আমরা যদি দ্রুত সময়ে সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যে সে বিচার শেষ করতে পারতাম তাহলে কারও জামিনে বের হওয়ার সুযোগ থাকত না।’

কেন আমরা বিচার দ্রুত শেষ করতে পারছি না, তা এখনকার সময়ের বড় প্রশ্ন উল্লেখ করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘সরকার চাইলেই এ ধরনের মামলা বিশেষ বিচারিক আদালতের মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পারে।’

দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ’এটি একটি বড় অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো ব্যাংককে অপরাধের জন্য নাম পরিবর্তন করতে হয়নি। এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা।’

তিনি বলেন, ’মে মাসে রাশেদুল হক চিশতীর এক সঙ্গে চার থেকে পাচঁটি মামলায় জামিন হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে হাইকোর্টে আমরা দুটি মামলায় জামিন স্থগিত করেছি। তারা এখন জেলে আছে। 

’আমরা প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে চাচ্ছি হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক দ্রুত এসব মামলা বিচারিক আদালতে নিষ্পত্তি হোক। বিচারিক আদালত জামিন দিলে আমরা উচ্চ আদালতে সেটি চ্যালেঞ্জ করব। নিম্ন আদালত একতরফাভাবে এমন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]