প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ৮:৩৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
দারিদ্র্যজয়ী আনোয়ারা বেগম এবার চুঁইঝাল চাষে এক নতুনমাত্রা এনে দিয়েছেন। তিনি বাণিজ্যিক ভাবে শুরু করেছেন চুঁইঝাল চাষ। ইতোমধ্যে তার সাফল্য দেখা দিয়েছে। এর আগে তিনি শুরু করেছিলেন বিষমুক্ত সবজির আবাদ। বিশেষ করে হাইব্রিড বেগুন চাষ। অতিসম্প্রতি আনোয়রা বেগম একটি চুঁইঝাল গাছ বিক্রি করেছেন সাড়ে ৬হাজার টাকা। এতে তিনি দারুণ উৎসাহবোধ করছেন বলে জানান।
ভোজনরশিকের মন্তব্য : ‘মাছের রাজার রুই-মাংশ স্বাদে চুঁই’। রসনাবিলাসে রন্ধনশিল্পে মাংশের স্বাদ আনতে চুঁইঝাল অতুলনীয়। আর তাই যশোর খুলনা অঞ্চলে হোটেল গুলোতে অতুলনীয় স্বাদে মাংশে ব্যবহৃত হচ্ছে চুঁইঝাল। ফলে ভোজনরশিকদের কাছে চুঁইঝাল মাংশের কদর বেড়েছে। দামও বেশ চড়া। প্রতি কেজি চুঁইঝাল ৫শ থেকে ১৫শ টাকা।
চুঁইঝালের রান্নাকরা মাংশ ভোজন রশিকদের কাছে অতুলনীয় তৃপ্তিদায়ক। এর স্বাদ-গন্ধ অতুলনীয়। ঔষধি গুণেও তুলনাহীন এই চুঁইঝাল।
আয়ুর্বেদীয় শাস্ত্রমতে, চুঁইঝাল বাত ব্যথার এক কার্যকর মহাষৌধ। চুঁইঝাল লতাজাতিয় বহুবর্ষজীবী মসলাজাতিয় উদ্ভিদ। ছায়াযুক্ত স্থান চুঁইঝাল চাষের অধিক উপযোগী। বড় ও মাঝারী গাছের নিচে চারা লাগালে তা ক্রমশই প্রাকৃতিক নিয়মে গাছ আকড়ে ধরে উপরে উঠতে থাকে। এ গাছের লতা জাতিয় কান্ডই তীব্র ঝাঝালো। যা মানুষ মাংশ রান্না উপাদেয় করতে ঝাল বা মরিচ হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। সাধারণ তরিতরকারিতেও চুঁইঝাল ব্যবহারের রেওয়াজ দীর্ঘদিনের।
নারী উদ্যোক্তা মধ্যবয়সী আনোয়ারা বেগম একজন কঠোর পরিশ্রমী ও মিতব্যয়ী। অভাবের সংসারে দিনরাত পরিশ্রমে এবার তার ভাগ্যাকাশে সম্ভাবনার আরও একটি পাখা মেলেছে এই মসলা জাতিয় উদ্ভিদ চুঁইঝাল। এর আগে তিনি বিষমুক্ত সবজির আবাদের পাশাপাশি ‘কেঁচো কম্পোষ্ট’ সার উৎপাদন ও উন্নতজাতের ক্যাম্বেল হাঁস ও ছাগল পালন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তার উপার্জিত অর্থে দুই ছেলের লেখাপড়ার যাবতিয় খরচ জোগানোর পাশাপাশি সংসার নির্বাহ করতেন তিনি। তার হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল ঘরে তুলেছেন তিনি। এখন তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে চাকরী পাওয়া দুই সন্তানের গর্বিত জননী। সেদিনের কুঁড়েঘর থেকে এখন ছাদওয়ালা পাকাঘরের বাসিন্দা।
আনোয়ারা বেগম ঝিকরগাছার সবজিপল্লী বারবাকপুর গ্রামের আব্দুল খা এর স্ত্রী। আব্দুল খা একজন অলস ও অকর্মণ্য কৃষক। ফলে আনোয়রা-আব্দুলের সংসারে অভাব পিছু ছাড়তো না। এবস্থায় সংসারের হাল ধরেন স্ত্রী আনোয়ারা বেগম। তার প্রচেষ্টায় বড় ছেলে সাদ্দাম হোসেন ব্যাপোডিল ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স (ইইই) ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে লেখাপড়া শেষ করে বর্তমানে এক্মি ল্যাবরেটরিজে সহকারী ইঞ্জিনিয়ারিং ও ছোট ছেলে শরিফুল ইসলাম যশোর পলিটেকনিক কলেজ থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে চাকরীরত।