প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২০, ১১:৫৮ এএম | অনলাইন সংস্করণ
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল) সংক্ষেপে তিতাস গ্যাসের পরবর্তী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বানাতে দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী মো. আব্দুল ওহাব মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে একটি অদৃশ্য কালো সিন্ডিকেট। যিনি বর্তমানে তিতাস গ্যাসের উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিষয়ক মহাব্যবস্থাপক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে যেন কোনো ধরণের দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করা না হয়, সে কারণে বেসরকারি টেলিভিশনের কয়েকজন সাংবাদিক যাদের মধ্যে কেউ কেউ ছাত্রজীবনে শিবিরের সাথী ছিল তিনিও রয়েছেন। শুধু সংবাদ চাপা দেয়ার জন্যই কোটি টাকার লেনদেনও হয়েছে বলে তিতাসের অভ্যন্তরীণ বিশস্ত সূত্র ভোরের পাতাকে নিশ্চিত করেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গ্যাস চুরি থেকে শুরু করে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়া, অবৈধ সম্পদ অর্জনের, অফিসের নারী কর্মীদের কুপ্রস্তাব দেয়ার মতো গর্হিত অভিযোগও রয়েছে এই প্রকৌশলী মো. আব্দুল ওহাব ওরফে ওহাব তালকুদারের বিরুদ্ধে।
এই ওহাব তালুকদারের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্তের নির্দেশ দেয়। দুদকের তৎকালীন উপ পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম স্বাক্ষরিত (স্বারক নং: ০০.০১.০০০০.৫০২.০১.০৯০.১৮/৩৭৯৮৪) চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকৌশলী আব্দুল ওহাব তালুকদার গাজীপুর জোনে তিতাস গ্যাসের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় অনিময়, দুর্নীতি ও ঘুষ গ্রহণের মাধ্যমে অবৈধ গ্যাস সংযোগ, গ্রাহকের বিল কমানো, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা , বিচ্ছিন্ন সংযোগে অনুমোদন ছাড়াই পুনঃসংযোগ দিয়ে কোটি কোটি আত্নসাৎপূর্বক অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। ওই সময় বিষয়টির তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন। তবে অদৃশ্য শক্তির চাপে এবং সিন্ডিকেটের কালো থাবায় সেই তদন্তটিকে প্রভাবিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার তল্লা বায়তুল সালাহ জামে মসজিদে এসি বিস্ফোরণে ৩৫ জনের প্রাণ গিয়েছে। হাসাপাতালে অগ্নিদগ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিয়ে ফিরেছেন আরো ৩ জন এবং অর্ধ শতাধিক মুসল্লী আহতও হন। ওই ঘটনার পর তিতাস গ্যাসের পক্ষ থেকে দুর্নীতিবাজ ওহাব তালকুদারকেই তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়। নির্ধারিত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দিয়ে অবশেষে দুইজন গ্রাহকের ওপর দায় চাপিয়ে দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তা তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছিলেন। তবে নিজের অন্য দুর্নীতিবাজ শিষ্যদের বাঁচাতেই তিনি এমনটা করেছিলেন বলে খোদ তিতাস গ্যাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি জানিয়েছেন ভোরের পাতাকে।
এদিকে, ১৮ জুলাই ২০১৯ সালে প্রেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বরাবর প্রকৌশলী ওহাব তালুকদারের যোগসাজসে নারায়াণগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ঘুষের বিনিময়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়া এবং গ্যাস চুরির বিষয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছিল।
গাজীপুরে দায়িত্ব পালনকালে এই ওহাব তালুকদার কেজিতে মেপে ঘুষের টাকা গ্রহণ করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তিতাস গ্যাসের কয়েকজন মহাব্যবস্থাপক ও উপ-মহাব্যবস্থাপক ভোরের পাতাকে নিশ্চিত করেই বলেছেন, এমন একজন দুর্নীতিবাজকে যদি তিতাস গ্যাসের এমডি করা হয়, তাহলে দেশের জন্যই ক্ষতি হবে। কেননা তিনি ব্যক্তিগত সম্পদ বাড়াতে রাষ্ট্রীয় সম্পদ অবৈধভাবে বিক্রি করে দিয়েছেন এবং ভবিষ্যতেও এমনটাই করবেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রকৌশলী মো. আব্দুল ওহাব ওরফে ওহাব তালুকদারকে গত তিনদিন ধরে ফোন করা হলেও ফোন ধরেননি। এমনকি তাকে এ প্রতিবেদক দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য প্রয়োজন এমন একটি ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি তার প্রতিউত্তর দেননি। সর্বশেষ মঙ্গলবার সকালে তার অফিসে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।