#শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপের কারণেই দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল আছে: ড. শ্রী বীরেন শিকদার।
#আওয়ামী লীগ সবসময় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী: গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার।
#সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান আরও শক্ত করতে হবে: নাসির উদ্দিন আহমেদ।
অফুরন্ত সম্ভাবনার অপর নাম বাংলাদেশ। এ দেশের রয়েছে অমিত সম্ভাবনাময় ষোল কোটি মানুষের বত্রিশ কোটি হাত। ষোল কোটি মানুষ বাংলাদেশের জন্য অভিশাপ নয়, আশীর্বাদ। কেননা আবহমানকাল থেকেই এ দেশের মানুষেরা কর্মনিষ্ঠ, পরিশ্রমী। এক সময়ের অচেনা বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়। দেশে একে একে উন্মোচিত হচ্ছে সম্ভাবনার দ্বার। চার লেন মহাসড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, এলএনজি টার্মিনাল, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, পরিকল্পিত বহুমুখী বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলাসহ উন্নয়নের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে দেশজুড়ে। পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরুর পর থেকেই একের পর এক মেগা প্রকল্প নিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রদায়িক নন, তিনি এখনও এদেশকে জাতির পিতার মতো অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে তুলতে চান, টিকিয়ে রাখতে চান। এই বঙ্গবন্ধুর সম্ভাবনার বাংলাদেশে মৌলবাদীদের কোন ঠাই নেই।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৬৭ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। সোমবার (২৩ নভেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ড. শ্রী বীরেন শিকদার, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী সদস্য এবং সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, সুইডেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল হাসান। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
ড. শ্রী বীরেন শিকদার বলেন, ভোরের পাতার পক্ষ থেকে যে সম্ভাবনার বাংলাদেশ বিষয় নিয়ে আজকের যে সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে তার জন্য সঞ্চালক ও ভোরের পাতাকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এবং বাংলাদেশের সম্ভাবনা এবং সমস্যা নিয়ে এই ভোরের পাতা সংলাপে নিত্তনিয়মিত কথা হয় যা জাতির জন্য, আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। আমি আমার বক্তব্যের শুরুতে গভীর শ্রদ্ধা জানাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যে মহামানবের অবদানে আজ আমারা লাল সবুজের পতাকা নিয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করা দাড়িয়ে আছি, গভীর শ্রদ্ধা সাথে স্মরণ করছি ১৫ই আগস্টের সেই কালো রাতে তার পরিবারের যেসব সদস্যরা শাহাদাৎ বরণ করেছিলেন। গভীর শ্রদ্ধা সাথে স্মরণ করছি ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ ইজ্জত হারা মা বোনদের। গভীরভাবে স্মরণ করি জাতীয় ৪ নেতাকে। আজকে পৃথিবী অনেক বিপদের সম্মুখীন। চীন থেকে শুরু হওয়া করোনা ভাইরাস আজকে সারা বিশ্বকে গ্রাস করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ই মার্চ। পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশ যাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনেক ভালো তারপরেও আমরা দেখেছি সেখানে করোনা নিয়ে গৃহীত পদক্ষেপ গুলো তেমন পর্যাপ্ত মনে হয়নি। সেখানে বাংলাদেশের যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়েছে সেখান থেকে সীমিত থাকার পরেও আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি, সে পদক্ষেপ গুলোর মাধ্যমে আমরা আজ একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে আছি। বাংলাদেশে যখন প্রথম করোনার আবির্ভাব দেখা গেলো তখন বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু অনেক ভীত সঞ্চার ছিল, এর ফলে তারা আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথেই হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করা শুরু করেছিল। এর ফলে হাসপাতালে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সবার মধ্যে একটা ধারণা সৃষ্টি হলো যে, করোনায় আক্রান্ত হলেই যে হাঁসপাতালে যেতে হবে তা না। করোনার পাশাপাশি আমাদের অর্থনৈতিক চাকাকেও সচল রাখতে হবে। আমাদের করোনাও মোকাবেলা করতে হবে তার সাথে সাথে বেঁচেও থাকতে হবে। আমরা ইতিমধ্যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি এবং এর জন্য আমাদেরকে এই কৃষিখাতে যে কার্যক্রমটা অব্যাহত রাখতে হবে। এর সাথে সাথে আমাদের গার্মেন্টস ও রেমিটেন্সের মাধ্যমে যে অর্থনৈতিক গতি তাও যেন অব্যাহত থাকে সেদিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। এই তিন সেক্টরে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপের কারণেই আজকে করোনার এই সময়েও আমাদের অর্থনৈতিক চাকা সচল আছে। শুধু করোনাকালেই নয়, বাংলাদেশের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের মানুষকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষার হাত থেকে মুক্ত করে একটি সুন্দর জীবন নিশ্চিত করার প্রত্যয় নিয়ে স্বাধীনতার সংগ্রাম করেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও তিনি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় নেতৃত্ব দেন। কিন্তু পঁচাত্তরে অগণতান্ত্রিক ও স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির উত্থানের ফলে তা ব্যাহত হয় যা দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার পুনরুজ্জীবিত হয় ১৯৯৬ সালে। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন এবং অগ্রসরতার প্রতি জনগণের বিশ্বাস, আস্থা এবং ভালোবাসাই আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এগিয়ে চলার পাথেয়। জনগণ দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলেই আওয়ামী লীগ বারবার জয়ী হয়।
গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার বলেন, ধন্যবাদ জানাই ভোরের পাতাকে আজকে ভোরের পাতা সংলাপের ১৬৭তম পর্বে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় সম্ভাবনার বাংলাদেশ। এই বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে যার কথা না বললেই নয়, বাংলাদেশকে যিনি সৃষ্টি করেছেন, বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, যিনি নিজের জন্য স্বপ্ন দেখেননি, স্বপ্ন কিভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে তা দেখিয়েছেন। যার ডাকে বাংলার অপামার জনগণ মুক্তিযুদ্ধে নেমে যায়, তার বাংলাদেশ যখন উন্নয়নে পাড়ি দিতে যায় সেই বাংলাদেশকে আবার সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মধ্যে আঁকড়ে ধরে আবারো সেই সাম্প্রদায়িকতার যুগে ফিরে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালায় এক কুচক্রী মহলের আশকারায়। সাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে যারা বসবাস করতে চায় তাদের জন্যই আমাদের এই অগ্রগতি ফিকে পড়ে যায়, কিন্তু আমরা দমে থাকিনি কখনোই, দমানোর জাতি না আমরা। স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে আওয়ামী লীগ-এর এই দেশের প্রতি স্বাভাবিক একটা অধিকার তৈরি হয়েছিল কারণ এদেশের মানুষ প্রাথমিক ভাবে ও প্রধানত আওয়ামী লীগের ওপরই শেষ ভরসা করে। এই ভরসা এ জন্য নয় যে, আওয়ামী লীগ খুব দেশ প্রেমিক রাজনৈতিক দল, বরং এই ভরসা এই কারণে যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি রাজনৈতিক দলকে দিয়ে দেশকে একটি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই আওয়ামী লীগ সবসময় অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিল এবং আছে। আজকে যারা এই সাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে তাদের প্রতি তীব্র নিন্দা জানাই। আজকে এই সম্ভাবনাময় বাংলাদেশকে ঠিক সেই আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা করছে তারা। কিন্তু তাদের সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠিকই এই করোনার মধ্যেও দেশের সকল উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রেখে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গিয়েছেন। স্বপ্ন ছিল সোনার বাংলা গড়ার। সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। শোষণ বৈষম্যর অবসান ঘটিয়ে প্রত্যেক মানুষকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা। জাতির পিতার কাছে জনগণের থেকে প্রিয় আর কিছু ছিল না। স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি চক্র ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে স্বাধীনতার স্থপতি মহাকালের মহাপুরুষকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা, শিশু রাসেল ও নারী সদস্যসহ পরিবার ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয় সকলকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বাংলার ইতিহাসে কলঙ্কময় অধ্যায় সৃষ্টি করে তারা হত্যার রাজনীতির অবতারণা করে। গণতন্ত্রকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করে। হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দিয়ে আইনের শাসন সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করে। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থান করায় বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। শেখ হাসিনা তাঁর পিতার স্বপ্ন সোনার বাংলা নির্মাণে এবং দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেন। বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়ন করেন। খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনেন। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে নানামুখী প্রকল্প চালু করেন। দেশের অর্থনীতির বেশ উন্নয়ন হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়। ভারতের সাথে ফারাক্কা চুক্তি করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যায় রাজনৈতিক সমাধান আনেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেন। শান্তি চুক্তির আওতায় শান্তি বাহিনীর সদস্যরা তাদের অস্ত্র প্রধানমন্ত্রীর হাতে সমর্পণ করে। বিশ্বের ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা বিরল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শিতা ও আন্তরিকতায় এটা সম্ভব হয়েছিল। আজকে এই উন্নয়নের দেশে যারা দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, যারা বহির্বিশ্বে দেশের বিরুদ্ধে আজগুবি নালিশ করে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিতে উসকানি দেয়, শান্তি-সম্প্রীতি বিনষ্ট করে দেশকে কলুষিত করতে চায়, এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ দেশের জনকের বিরুদ্ধে এমন ষড়যন্ত্রমূলক কূটচালের সাহস করতে না পারে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবেই প্রতিরোধ করতে হবে। বাংলাদেশে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে অনন্য নজির স্থাপিত হয়েছে, সে আদর্শ সমুন্নত রাখতে হবে যেকোনো মূল্যে।
উল্লেখ্য, পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে সুইডেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এবং প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল হাসান উপস্থিত থাকলেও তার কারিগরি ত্রুটির কারণে তার মূল্যবান বক্তব্য দিতে পারেননি।