প্রকাশ: শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২০, ৮:৪৮ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
১০ বছর আগে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে বিয়ে করেন সোনিয়া আক্তার ইভানা। সেই স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির মিথ্যা তথ্য দিয়ে করেছেন আরো দুটি বিয়ে। এর মধ্যে একজন আইনজীবী ও অপরজন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী। তাদেরও এটি দ্বিতীয় সংসার হওয়ায় দিনের বেলায় যেতেন ইভানার কাছে। আর এতেই বেশ সুযোগ হয় ইভানার। তাদের অজান্তে রাতে সময় দিতেন পুলিশ কর্মকর্তা স্বামীকে। এভাবেই তাদের কাছ থেকে দুই কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
ইভানার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায়। তার প্রথম স্বামীর নাম জব্বারুল ইসলাম। তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মদুনাঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ। আর ঢাকার বনানীর এ-ব্লকের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন ইভানা। সেখানে যাতায়াত রয়েছে প্রথম স্বামী জব্বারুলের। তাদের সংসারে একটি ছেলে রয়েছে।
ইভানার দুই স্বামীর অভিযোগ, প্রথম স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির মিথ্যা তথ্য দিয়ে পর পর দুটি বিয়েতে জড়ান ইভানা। এ বিষয়ে জেনেও চুপ ছিলেন জব্বারুল। তার পরিকল্পনাতেই বিয়ের ফাঁদ পেতে অর্থ-সম্পদ হাতিয়ে নেন ইভানা।
দুই স্বামীর একজন ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম জানান, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বনানীর একটি বারে ইভানার সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরে প্রেম থেকে তা গড়ায় বিয়ে পর্যন্ত। পরের বছরের জুনে আইনি প্রক্রিয়ায় বিয়ে হয় তাদের। এটি ছিল জহুরুলের দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ না হওয়ায় রাতে ইভানাকে সময় দিতে পারতেন না তিনি। ফলে দিনের বেলায় যেতেন তার বনানীর বাসায়।
সবশেষ চলতি বছরের ১৩ নভেম্বর রাতে ইভানাকে ফোনে না পেয়ে পরদিন সকালে তার বনানীর বাসায় হাজির হন জহুরুল। সেখানে গিয়ে তিনি ইভানাকে একজনের সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখতে পান। পরে ওই ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে প্রথম স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা জব্বারুল ইসলাম বলে জহুরুলকে জানান ইভানা।
জহুরুল ইসলাম বলেন, ওই সময় জব্বারুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনিও ইভানাকে স্ত্রী বলে পরিচয় দেন। তবে প্রথম স্বামীর সঙ্গে ইভানার ছাড়াছাড়ির বিষয়টি তুললে তিনি তা অস্বীকার করেন। ইভানার সঙ্গে তার কখনো ছাড়াছাড়ি হয়নি বলে দাবি করেন। একই সঙ্গে তারা আমাকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করারও হুমকি দেন। পরে নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বনানী থানায় একটি জিডি করি এবং ওই দিনই ইভানাকে তালাক দেই।
প্রতারণার মাধ্যমে ইভানা তার কাছ থেকে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, দুই মাস আগে ব্ল্যাকমেইল করে আমার মালিকানাধীন ৫০ লাখ টাকা মূল্যের পেট্রাস রেস্টুরেন্টটি লিখে নেয় ইভানা। এছাড়া বিয়ের পর ১৬ লাখ ও ৪০ লাখ টাকা দামের দুটি গাড়ি এবং ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা নিয়েছে। এর মধ্যে প্রথমপক্ষের ছেলেকে কানাডায় পাঠানোর কথা বলে ক্যামব্রিয়ানে ফাইল জমা বাবদ নিয়েছে ২০ লাখ টাকা। পরে ক্যামব্রিয়ানে খোঁজ নিলে এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
জহুরুল ইসলামের আগে রেজাউল করিম নামের এক আইনজীবীকে বিয়ে করেছিলেন ইভানা। দীর্ঘদিনের পরিচয় তাদের। তাকেও প্রথম স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন ইভানা। এক সময় বিয়েতে জড়ান তারা। রেজাউল করিমেরও এটি ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ না হওয়ায় জহুরুলের মতো তিনিও দিনের বেলায় সময় দিতেন ইভানাকে। যাতায়াত করতেন ইভানার নিকেতনের বাসায়। একপর্যায়ে তিনিও জেনে যান ইভানার বাসায় প্রথম স্বামী জব্বারুলের যাতায়াতের কথা। তবে এ বিষয়ে জব্বারুলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও রেজাউলকে ধরা দেননি তিনি।
প্রতারণার মাধ্যমে ইভানা প্রচুর অর্থ-সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছেন দাবি করে আইনজীবী রেজাউল করিম বলেন, আমার কাছ থেকে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ইভানা। বর্তমানে তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। প্রতারণার বিষয়টি জেনে সঙ্গে সঙ্গেই তাকে তালাক দেই। ইভানার এ প্রতারণার পেছনে ভূমিকা রয়েছে প্রথম স্বামী জব্বারুল ইসলামের। মূলত তারই পাতা ফাঁদ এটি।
এ বিষয়ে জানতে পুলিশ কর্মকর্তা জব্বারুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে তিনি বর্তমানে ছুটিতে ঢাকায় রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশের একটি সূত্র।