রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
বরিশালে কালের সাক্ষী
১৫০ বছরের পুরাতন উলানিয়া জামে মসজিদ
বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশ: শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২০, ১:৪১ পিএম আপডেট: ২১.১১.২০২০ ২:৫৪ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ

প্রায় ১৫০ বছর আগে ইংরেজি ১৮৬১ সালে বর্তমান বরিশাল মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া গ্রামে এ মসজিদটি নির্মিত হয়। নির্মাণের আলাদা বৈশিষ্টের কারণে এই মসজিদটি সবার দৃষ্টি কেড়েছে। সর্বশেষ ২০১১ সালের মে মাসে মসজিদটি সংস্কার করা হয়। সংস্কার শেষে মসজিদটি পর্যটকসহ সবার প্রশংসা লাভ করে। মসজিদটির গোড়ার কথা পঞ্চদশ সালে এ অঞ্চল ছিল মগ-পর্তুগীজ জলদস্যুদের আক্রমণে পর্যদুস্ত হয়। বলা হয়ে থাকে, এই মগ হার্ম্মাদদের প্রধান কেন্দ্র ছিল চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ। এদের দমনে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব সুবেদার শায়েস্তা খানকে পাঠান। শায়েস্তা খান তার পুত্র উমেদ খান ও বিশাল রণতরী সৈন্য গোলাবারুদ নিয়ে জলদস্যু প্রতিহত করতে এগিয়ে আসেন। মেহেন্দিগঞ্জের গোবিন্দপুরে কেল্লা তৈরী করা হল। স্থানীয়ভাবে যা সংগ্রাম কেল্লা নামে পরিচিত ছিল। এই অভিযানে মো. হানিফ নেতৃত্ব দিয়ে বীরত্ব প্রদর্শন করেন। মগ-পর্তুগীজ-হার্ম্মাদরা বিতাড়িত হলেন। কিন্তু পারস্য বংশোদূত হানিফ খান এদেশকে ভালোবেসে থেকে গেলেন। মো. হানিফের এক কন্যা সন্তান ছিল।
 মো. হানিফের ভ্রাতস্পুত্র ও জামাতা এবং উত্তরাধিকারী শেখ মো. হাবিজ পরবর্তীকালে সংগ্রাম কেল্লা থেকে সামান্য পশ্চিমে উলানিয়া অঞ্চলে এসে বসবাস করেন। মো. হাবিজের পুত্র শেখ মো. সদরুদ্দিনের আমলেই মূলত উলানিয়া জমিদারি প্রতিষ্ঠিত হয়। তার ৩ পুত্র ছিল। এরা হলেন- নয়া রাজা চৌধুরী, কালা রাজা চৌধুরী ও হাসান রাজা চৌধুরী। তাদের সময়েই বসত বাড়িটিকে উঁচু প্রাচীর ঘেরা দুর্গের মত করে নির্মাণ করা হয়। এরপর বাড়ির প্রধান ফটকের পাশেই নির্মাণ করা হয় একটি মসজিদ। এটিই মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া জামে মসজিদ নামে পরিচিত।
মসজিদটির বৈশিষ্ট- ১৮৬১ সালে প্রতিষ্ঠার পর মসজিদটি কয়েকবার সংস্কার করা হলেও মূল অবয়ব এখনও অক্ষণœ রয়েছে। ৩ গম্বুজ বিশিষ্ঠ এই মসজিদটি অনেক অনেকটা তাজমহল আকৃতির। মসজিদের সামনে বাধানো চওরা, পুকুর রয়েছে। মূল গৃহের আগে লোহার ৬ খামের ওপর প্রতিষ্ঠিত জাফরির কাজ রয়েছে। এখানে বিমের ছাদ রয়েছে। মসজিদের তিনটি দরজা। মসজিদের ভেতরে একসাথে শতাধিক মুসল্লি নামাজ পড়তে পারে। মসজিদের আর একটি বৈশিষ্ট রয়েছে যা তাকে অন্য মসজিদের থেকে আলাদা করেছে। সেটি হলো মসজিদ গাত্রে শিলালিপি। এই মসজিদ গাত্রের পুরানো শিলালিপীটি এখন আর নেই। তবে একই রকম শিলালিপী উৎকীর্ণ রয়েছে। মসজিদের বাহিরের গাত্রে চিনে মাটির টুকরা দিয়ে গড়া রয়েছে। মসজিদটি মূলত মোগলরীতিতে তৈরি। ভেতর ও বাহিরের গাত্রে জ্যামিতিক লতাপাতা ও ফলের নকশা রয়েছে।
শিলালিপি-মসজিদে মূল নামাজ ঘরে ৩টি প্রবেশ পথ রয়েছে। ৩টি দরজার মধ্যে মাঝেরটি অপেক্ষাকৃত বড় এবং এটির দুই পার্শ্বের দুই দেয়ালে নকশার নিচে উৎকীর্ণ শিলালিপি ছিল। ডানদিকের দেয়ালে উৎকীর্ণ কোরআন শরীফের আয়াত ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অধিকাংশ লেখা টিকে আছে। বা’ দিকের দেয়ালে উৎকীর্ণ ছিল মসজিদ প্রতিষ্ঠা বিষয়ক বক্তব্য। এগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আগেই ফটোগ্রাফি করে রাখা হয়েছিল। অতঃপর এই ফটোগ্রাফি ব্যবহার করেই নতুন শিলালিপি খোদাই করে মসজিদের গাত্রে উৎকীর্ণ করা হয়েছে।
শিলালিপিতে ১০টি লাইন থাকলেও সবগুলো এখন আর নেই। ১৯৯৩ সালে প্রতœতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটিকে সংরক্ষণযোগ্য ঘোষণা করেন। জমিদারীর পক্ষে আপনজন, কিছু সংস্কার করে। ২০০৩ সালে ইঞ্জিনিয়ার হারুন অর রশিদ মসজিদ সংস্কারে ভূমিকা রাখেন। এরপর কুয়েত ভিত্তিক মসজিদে সাহায্য দানকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ইঞ্জিনিয়ার মো. এস কীওয়ান মসজিদটি সংস্কারের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলে মসজিদের ব্যাপক সংস্কার সাধিত হয়। সংস্কার শেষে মসজিদের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সৌন্দর্য বহুগুণে বর্ধিত হয়। বর্তমানে মসজিদটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে বহু পর্যটক আসেন।
মসজিদ কমিটির সম্পাদক ইউসুফ চৌধুরী দৈনিক ভোরের পাতাকে বলেন, মসজিদ কমিটি ও মুসল্লিদের সাহায্য সহযোগিতায় ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয় গত মে মাসে। তিনি আরও বলেন এছাড়াও ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের রচয়িতা ও বিশিষ্ট কলাম লেখক আবদুল গফফার চৌধুরী মসজিদ কমিটিকে মসজিদ সংস্কার করার জন্য ১০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছিলেন’। এর বাইরে সংস্কারের জন্য বড় কোন অনুদান পাওয়া যায়নি। পুরাকীর্তি হিসেবে মসজিদটি সংস্কারের জন্য সরকারের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। সরকারিভাবে মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নিলে এ মসজিদটি হতে পারে দক্ষিণাঞ্চলের একটি পর্যটনকেন্দ্র। এ ব্যপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জামাল মোল্লা জানান, মসজিদ কমিটি থেকে আমার কাছে কোন সহযোগিতা চাওয়া হয়নি। তবে আমি সব ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতা করবো। মসজিদটি মেঘনা নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। সরকার নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীভাঙন রোধে কাজ করা হয়। কিন্তু এতে কোন উপকার হয়নি। বরং নদীভাঙন অব্যাহত থাকায় ঝুঁকিতে রয়েছে কালের সাক্ষী প্রাচীনতম এই মসজিদটি।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]