প্রকাশ: শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২০, ১:৪১ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক মর্গে মৃত নারী ধর্ষণের ঘটনায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে মুন্না ভগত নামের এক ডোমকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার আটকের পর তাকে আদালতে রিমা-ের জন্য আবেদন করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে মুন্না। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ১০ রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।
মৃত্যু বা হত্যার পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে আসা নারীর মরদেহে একই পুরুষের বীর্যের উপস্থিতি পায় ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ। পরীক্ষার জন্য কয়েকটি এইচভিএসে (হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াব) ফরেনসিক ডিএনএ ল্যাবে পাঠানো হয়। সেখানে আলামতসমূহের পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করা হয়। কয়েক নারীর মরদেহে পাওয়া বীর্য একই ব্যক্তির বলে ডিএনএ পরীক্ষায় উঠে আসে। এরপর নড়েচড়ে উঠে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। বিষয়টি অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে অনুসন্ধান শুরু করে সিআইডির ঢাকা মেট্রো-পশ্চিম বিভাগ। তদন্তে ও ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টে স্পষ্ট হয়, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এবং কাফরুল থানা এলাকা থেকে মর্গে আসা ওই সব নারী ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা অথবা ধর্ষণজনিত কারণে আত্মহত্যা বলে প্রতিয়মান হয়। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিআইডির ঢাকা মেট্রো-পশ্চিম বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সিআইডি কর্মকর্তারা প্রাপ্ত আলামত ও প্রতিটি অপরাধ সংগঠনের প্রক্রিয়া বা মোডাস অপরেন্ডি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিশ্লেষণপূর্বক এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, কোনো না কোনোভাবে ভিকটিমদের মৃতদেহের ওপরে কোন ব্যক্তি বিকৃত যৌন লালসা চরিতার্থ করেছে। পরে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে মর্গে রাখা মৃত নারীদের ধর্ষণের অভিযোগে মুন্না ভগত (২০) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে সিআইডি। সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার মুন্না সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে ৪ বছর ধরে ডোম জতন কুমার লালের সহকারী হিসেবে কাজ করছে। ঘটনায় সিআইডির তদন্ত প্রক্রিয়ায় উঠে আসে, প্রত্যেকটি মৃতদেহেরই ময়নাতদন্ত একটি হাসপাতালের মর্গে করা হয়েছে। সিআইডি গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে নতুন ইঙ্গিত বা ক্লু পাওয়ায় প্রত্যেকটি মৃতদেহ মর্গে আনার পর তার কার্যধারা বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা যায় সবগুলো ক্ষেত্রেই ময়নাতদন্তের জন্য আনীত মরদেহসমূহ পরবর্তী দিনে লাশ কাটার অপেক্ষায় মর্গে রেখে দেয়া হতো। এ প্রেক্ষিতে সিআইডি কর্মকর্তারা মর্গে কর্মরত ডোমদের ওই মামলার ময়নাতদন্তকালীন গতিবিধি পর্যালোচনা করে দেখেন যে, হাসপাতালের ডোম আলোচ্য পাঁচটি ঘটনার সময় রাত্রীকালীন লাশ পাহাড়া দেওয়াসহ মর্গে অবস্থান করে। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে ও গোপনে তথ্য সংগ্রহ করলে সিআইডির অনুসন্ধানে ডোম মুন্না ভগত এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণ পায়। বিষয়টি টের পেয়ে তাৎক্ষণিক গা ঢাকা দেয় মুন্না। সিআইডির কাছে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয় এবং এরই প্রেক্ষিতে শেরে বাংলা নগর থানায় একটি মামলা করে সিআইডি। মামলা নং-৪০। তদন্তকারী কর্মকর্তার নেতৃত্ব একটি দল ওই রাতেই ১০টার দিকে তাকে গ্রেফতার করে।
তদন্তকারী কর্মকর্তার চাহিদা মোতাবেক আসামির ডিএনএ আলামত সংগ্রহ করে ল্যাবে প্রেরণ করা হলে ডিএনএ ল্যাব হতে আসামির প্রাপ্ত ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে এইচভিএসে (হাই ভ্যাজাইনাল সোয়াব) থাকা ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে মিলে যায়। এত বিজ্ঞানভিত্তিক তদন্ত দ্বারা উক্ত ঘটনার আসামি মুন্না কর্তৃক মৃত দেহের ওপর বিকৃত যৌনাচারের বিষয়টি প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ৫ মরদেহে একই ব্যক্তির বীর্যের উপস্থিতি মেলার পর ঘটনার ভয়াবহতায় তদন্তের শুরুতে আমরা সিরিয়াল কিলার কিংবা সিরিয়াল রেপিস্টদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে ধরে তদন্ত শুরু করেছিলাম। তবে সুরতহাল কিংবা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মরদেহে আঘাতের চিহ্ন না পাওয়ায় তদন্তে মোড় আসে। এরপরই মর্গেই মৃত নারীদের ধর্ষণ করা হতে পারে সন্দেহে তদন্ত শুরু সিআইডির তদন্ত টিম।
তদন্তে উঠে আসে, চলতি বছরের গত মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটায় ডোমের সহকারী মুন্না ভগত। তদন্তকালেই ঘটনার গভীরতা ও ভয়াবহতা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। ডিএনএ ল্যাবে পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত ৫টি মৃতদেহে গ্রেফতার মুন্নার বীর্যের আলামত মিলেছে। মর্গে মৃত যেসব নারীদের ধর্ষণ করেছে তাদের প্রত্যেকের বয়স ছিল ১২ থেকে ২০ বছর। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে মুন্না। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ১০ রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।