সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
ফের জঙ্গি তৎপরতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২০, ১:৪১ পিএম আপডেট: ২১.১১.২০২০ ২:৪৭ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ

২০১৬ সালে হলি আর্টিজানের ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর সারা দেশে সাঁড়াশি অভিযানে জঙ্গি তৎপরতা থিতিয়ে পড়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকেও দাবি করা হয়েছিল জঙ্গিবাদী তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সব জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জামিনে থাকা ও সন্দেহভাজন জঙ্গিদের নজরদারিতে রাখার দাবিও করা হয়েছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও তৎপরতার মধ্যেই ফের সংগঠিত হতে শুরু করেছে জঙ্গিরা। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের মতাদর্শে বিচ্ছিন্নভাবে সংগঠিত হওয়া এসব জঙ্গিরা নানা নামে  গোপনে তৎপরতা চালাচ্ছে। পুলিশের উপর্যুপরি অভিযানে প্রায় সামর্থ হারানো এসব জঙ্গি নিজেদের সামর্থ ফেরাতে অনলাইনে রিক্রুটমেন্ট, বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ, গ্রুমিং চালিয়ে যাচ্ছে। যথারীতি তাদের এসব জঙ্গি তৎপরতায় জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসার শিক্ষার্থীরা।

গত কয়েক মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতার প্রস্তুতিকালে এবং নানা তৎপরতার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিরাই এসব তথ্য দিয়েছে পুলিশকে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী এবং গতকাল শুক্রবার সিরাজগঞ্জে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ৮ জঙ্গিকে। এদের মধ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) আঞ্চলিক আমির ও সেকেন্ড ইন কমান্ডসহ রয়েছেন কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি। বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহীতে আটক জঙ্গিদের কাছ থেকে তথ্য পেয়েই সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর পৌরসভার শেরখালী উকিলপাড়া এলাকার জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। বৃহস্পতিবার রাত থেকে র‌্যাবের টানা ১০ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান শেষ হয় গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে। আস্তানা ঘিরে রাখার পর কয়েকদফা গুলি বিনিময় শেষে চার জঙ্গির আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে গতকালের অভিযান শেষ হয়। আত্মসমর্পণ করা চার জঙ্গি হলেন জেএমবির রাজশাহী অঞ্চলের সেকেন্ড ইন কমান্ড পাবনার সাথিয়ার কিরণ ওরফে হামিম ওরফে শামিম (২২), একই এলাকার নাইমুল ইসলাম (২১), দিনাজপুরের কোতোয়ালির আতিউর রহমান (২২) এবং সাতক্ষীরার তালার আমিনুল ইসলাম ওরফে শান্ত (২৫)। এর আগে রাজশাহীতে আটক চারজন হলেন- জেএমবির রাজশাহী আঞ্চলিক আমির নাটোরের বাগাতিপাড়ার জুয়েল আলী ওরফে হাবিবুল্লাহ ওরফে মাহমুদ (৩৩), খুলনার খালিশপুরের আশরাফুল ইসলাম (২৪), পাবনার সাথিয়ার আলিফ হোসেন (২০) এবং সাতক্ষীরার নালতার জুয়েল শেখ (২২)। অভিযান শেষে দুপুর ১২টায় র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার শাহজাদপুরের ওই বাড়িটির পাশেই এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, চার জঙ্গি আত্মসমর্পণের পর বাড়িটি তল্লাসি করে দু’টি বিদেশি পিস্তল, গান পাউডার, ফিউজ, জিহাদি বই, বিভিন্ন নির্দেশনামূলক বই, একটি চাপাতি ও দু’টি রামদা উদ্ধার করা হয়।

ব্রিফিংয়ে মোস্তফা সারোয়ার জানান, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় রাজশাহীর শাহ মখদুম এলাকায় এক জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে মাহমুদ, জুয়েল ও আশরাফুল নামের তিনজনকে আটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাত ২টার দিকে র‌্যাবের একটি দল শাহজাদপুর উপজেলা সদরের উকিলপাড়া একটি বাড়ি ঘিরে রাখে। অভিযানে শাহজহাদপুর থানাপুলিশ সহযোগিতা করে।

র‌্যাব-১২ এর মিডিয়া অফিসার (সহকারী পুলিশ সুপার) মুহাম্মদ মহিউদ্দিন মিরাজ জানান, চলতি নভেম্বর মাসের ৫ তারিখে ছাত্র পরিচয়ে তারা শাহজাদপুরের শেরখালির (উকিলপাড়া) ফজলুল হক মাস্টারের এই বাড়িটি ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। তাবলিগ জামাতের সঙ্গে মিশে তারা নিজেরা সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। গতকাল তাদের সাংগঠনিক মিটিং ছিল। বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় বিষয়টি জানার পরই বাড়িটি ঘিরে ফেলে র‌্যাব। র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ গতকাল ভোররাতে অভিযান শুরু করলে র‌্যাবের অবস্থান টের পেয়ে জঙ্গিরা র‌্যাবকে উদ্দেশ্য করে ৪-৫ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। হতাহতের ঘটনা এড়াতে র‌্যাব কৌশল পরিবর্তন করে বাড়িটি ঘিরে রাখে। পরবর্তীতে র‌্যাবের অতিরিক্ত পরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ারের নেতৃত্বে সকাল ১০টার দিকে নতুনভাবে অপারেশন পরিচালনা করা হয়। র‌্যাবের বোমা ডিসপোজাল ইউনিট ওই আস্তানায় প্রবেশ করে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান। দীর্ঘসময় পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কিরণ, নাইমুল, আতিয়ার এবং আমিনুল ইসলাম শান্তসহ চারজন জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেন। এরপরই র‌্যাব সদস্যরা তাদের গ্রেফতার করে। এর আগে সকাল নয়টার দিকে র‌্যাব সদর দফতর থেকে হেলিকপ্টারযোগে শাহজাদপুরে আসেন র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সরোয়ার। গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের র‌্যাবের সদর দফতরে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এদেরকে শাহজাদপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে র‌্যাবের মিডিয়া অফিসার জানান।

স্থানীয় কয়েকজন জানান, শাহজাদপুরে এর আগে জঙ্গি ছিল না। হঠাৎ করে জঙ্গিদের অবস্থান তাদের আতঙ্কিত করে তুলেছে। তারা বলেন, ভয়ঙ্কর জঙ্গিগোষ্ঠী শাহজাদপুরে ঘাপটি মেরে ছিল তারা বুঝতেই পারেনি। তবে বড় ধরনের ক্ষতিসাধনের আগেই র‌্যাব তাদের গ্রেফতার করায় তারা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

এদিকে গতকাল রাজধানীর উত্তরার একটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে কিছু অবিস্ফোরিত বোমা উদ্ধার হয়েছে। উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর রোডে বোমা রয়েছে এমন খবর পেয়ে নির্মাণাধীন একটি বাড়ি ঘিরে গতকাল বিকাল ৪টায় অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে ঢাকা-১৮ আসনে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন ওই এলাকায় চারটি বোমা বিস্ফোরিত হয়েছিল। ওই ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যমতে উত্তরার ওই স্থান থেকে কিছু অবিস্ফোরিত বোমা উদ্ধার করা হয়।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের মুখে জঙ্গি তৎপরতা প্রায় বন্ধ ছিল। অনেক সামর্থও হারিয়ে ফেলিছিল তারা। কিন্তু গত কয়েক মাসে তারা ফের সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ খবর আগে থেকেই ছিল আইনশঙ্খলা বাহিনীর কাছে। তবে বড় কোনো নাশকতা ঘটানোর সামর্থ এই মুহূর্তে জঙ্গিদের নেই বলেই মনে করেন আইনশঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

হলি আর্টিজান হামলার পর উপর্যুপরি অভিযান ও বন্দুকযুদ্ধে নতুনভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করা জঙ্গিদের শীর্ষনেতাসহ অন্তত ৬৬ জন নিহত হয়। পুলিশের তরফ থেকে দাবি করা হয় জঙ্গিদের মেরুদ- ভেঙে দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে মধ্যপ্রাচ্যেও ইসলামিক স্টেটস বা আইএস উৎখাত হওয়ার পর গত কয়েক বছরে বাংলাদেশেও জঙ্গিদের তৎপরতার দেখা মেলেনি। ২০১৭ সালে পান্থপথের অলিও হোটেলে বিস্ফোরণের পর ২০১৯ সালের ২৯ এপ্রিল ঢাকার গুলিস্তানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের উপর বোমা হামলা হলে আবার আলোচনায় আসে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি। এর কয়েক মাসের মধ্যে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের যাত্রাপথে বোমার বিস্ফোরণ, মালিবাগে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) কার্যালয়ের সামনে পুলিশের গাড়িতে বোমা বিস্ফোরণ, খামারবাড়ি ও পল্টনে ট্রাফিক পুলিশ বক্সে একই সময় দুটি কার্টুনে বোমা উদ্ধারের ঘটনা জঙ্গি তৎপরতার ইঙ্গিত দিয়ে যায়।

এসব ঘটনার পর গত সম্প্রতি কোরবানির ঈদ ও অগাস্ট মাস সামনে রেখে দেশে হামলার শঙ্কায় সতর্ক হয়ে ওঠে পুলিশ। মূলত গত ১১ আগস্ট সিলেটে নব্য জেএমবির কমান্ডারসহ ৫ জঙ্গি গ্রেফতার হওয়ার পর এমন আশঙ্কা করা হয়েছিল। ওই সময় পুলিশ জানিয়েছিল, গ্রেফতারকৃতরা হজরত শাহজালাল (র.) মাজারে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পুলিশের তৎপরতার কারণে তারা মিশন সফল করতে পারেনি। পরে তথ্য পেয়ে পুলিশ নগরীর মিরাবাজারের উদ্দিপনের ৫১ নম্বর বাসা থেকে নব্য জেএমবির সিলেট আঞ্চলিক কমান্ডার ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাইমুজ্জামানকে আটক করে। তার তথ্যেও ভিত্তিতে শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে আরও চারজনকে আটক করে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]