সংসদে সম্প্রচারিত বঙ্গবন্ধুর ভাষণের অডিও শুনে এবং বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রয়াত সাংবাদিক বেবী মওদুদ সম্পাদিত ‘বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯৭২-৭৫)’ বইটি পড়ে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধুর ভাষণে সমাজতন্ত্র নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের শেষের একটি অংশ এবং ধর্ম নিরপেক্ষাতা নিয়ে তাঁর বক্তব্যের বেশিরভাগ বাদ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে বক্তব্যের মূল অংশ বাদ পড়েছে। এর পাশাপাশি সমাজতন্ত্র নিয়েও তার বক্তব্যের ছোট একটি অংশ বাদ পড়েছে। এখানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের যে অংশটি বাদ পড়েছে (শেখ হাসিনা ও বেবী মওদুদ সম্পাদিত বইয়ের আলোকে) তা হলো— ‘…তার পরে আসছে ধর্মনিরপেক্ষতা। জনাব স্পিকার ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মকর্ম করার অধিকার থাকবে। আমরা আইন করে ধর্মকে বন্ধ করতে চাই না এবং করবোও না।’
''জনাব স্পিকার, ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্মকর্ম করার অধিকার থাকবে। আমরা আইন করে ধর্মকে বন্ধ করতে চাই না এবং করবোও না। ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা এই রাষ্ট্রের কারও নেই। হিন্দু তাদের ধর্ম পালন করবে, কারও বাধা দেওয়া ক্ষমতা নেই। বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের কেউ বাধাদান করতে পারবে না। খ্রিস্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, কেউ তাদের বাধা দিতে পারবে না।''
‘ধর্ম নিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের বাধা দেওয়ার ক্ষমতা এই রাষ্ট্রের কারও নেই। হিন্দু তাদের ধর্ম পালন করবে, কারও বাধা দেওয়া ক্ষমতা নেই। বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের কেউ বাধাদান করতে পারবে না। খ্রিস্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, কেউ তাদের বাধা দিতে পারবে না।’
ধর্ম নিয়ে সংসদে সম্প্রচারিত বঙ্গবন্ধুর ভাষণের অংশটি হলো—‘আমাদের শুধু আপত্তি হলো এই যে, পবিত্র ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না। ২৫ বছর আমরা দেখেছি— ধর্মের নামে কী জুয়োচুরি, ধর্মের নামে শোষণ, ধর্মের নামে বেইমানি, ধর্মের নামে অত্যাচার, ধর্মের নামে খুন, ধর্মের নামে ব্যাভিচার এই বাংলার মাটিতে চলেছে। ধর্ম পবিত্র। পবিত্র স্থানে রাখতে দেন। একে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না। এখানে যদি কেউ আমাদের বলেন, আমরা অধিকার খর্ব করেছি, অধিকার খর্ব করি নাই। সাড়ে সাত কোটি মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য এই অধিকারটুকু আমাদের খর্ব করতে হয়েছে।’ এই অংশটি অডিও ভার্সনে স্থান পেয়েছে। অর্থাৎ ধর্ম নিরপেক্ষতা নিয়ে যে মূল কথাগুলো বঙ্গবন্ধু সংসদে বলেছিলেন, সম্প্রচারিত ভার্সনে সেটা বাদ দেওয়া হয়েছে।
সংসদে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের অডিও বাজানোর পর যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী গবেষক মাহবুবুর রহমান জালাল তার ফেসবুক পেজে দেওয়া স্ট্যাটাসে সংসদে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ এডিট করে প্রচার করার কথা তুলে ধরেন। সুইজারল্যান্ড প্রবাসী ব্লগার অমি রহমান পিয়ালও এ বিষয়টি উল্লেখ করেন। ভাষণে কোন অংশটি বাদ পড়েছে পিয়াল সেটাও তুলে ধরেন।
ভাষণের ধর্ম নিরপেক্ষতার অংশটি বাদ পড়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘ওটা না থাকলে আমাদের কী করার আছে? আমরা ওই অডিও ভার্সনটি বাংলাদেশ বেতার থেকে নিয়ে এসেছি। আমরা এটাকে এডিট করিনি। আমরা তাদের থেকে যে বক্তৃতা পেয়েছি হুবহু সেটাই শুনিয়েছি। সংসদে এটার কোনও কিছুতেই হাত দেওয়া হয়নি।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় এটার জন্য সংসদকে দায়ী করা হচ্ছে প্রশ্নে স্পিকার বলেন, ‘সংসদ এখানে কিছুই করিনি। যদি কেউ সংসদকে দোষারোপ করেন, তাদের জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই— সংসদ এতে কোনও হাত দেয়নি। ভাষণটি যেভাবে পেয়েছি, সেভাবেই শুনিয়েছি। বাংলাদেশ বেতারে কী হয়েছে সেটা আমরা তো বলতে পারি না। এটা কোথায় পড়েছিল? কে কেটেছে? কে এডিট করেছে? তবে আমাদের সংসদের ছাপানো প্রসিডিংসে যেটা আছে হার্ড কপি। সেটার মধ্যে যে কথাগুলো আছে, তার অনেকটাই অডিও ভার্সনে নেই, এটা ঠিক। শুধু ধর্ম নিরপেক্ষতা নয়, ওর পরেও আরও অনেক কথা আছে, যেটা লিখিত কপিতে আছে, কিন্তু প্রচারিত ভাষণে নেই।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন