#মহামারিতে সরকারের বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের কারণে দেশের অর্থনীতি সাফল্য দেখিয়েছে: ড. আতিউর রহমান।
#আমাদেরকে কঠোরভাবে করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে: সিদ্দিকুর রহমান।
#দেশে করোনাকালীন সময়ে ই-কমার্স ও ই-ব্যাংকিং ভালো উন্নতি করেছে: ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ।
কোভিড-১৯-এ বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি। বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র চীন ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে। বড় অর্থনীতি না হলেও যে কটি দেশে প্রবৃদ্ধি হবে, তার মধ্যে আছে বাংলাদেশ। সারা বিশ্বে এমন দুর্গতির মধ্যেও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে আশার কথাই শুনিয়েছে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর আভাসও পাওয়া যাচ্ছে। করোনা মহামারির মধ্যেও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে দেশের পদ্মা সেতুর কাজ। ৪২টি পিলারের ওপর দাঁড়াবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। দ্রুত সময়ে এই সেতু নির্মাণ শেষ হোক-এটাই প্রত্যাশা। পদ্মা সেতু সহ করোনায় দেশে সকল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৬১ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক এবং এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
ড. আতিউর রহমান বলেন, ধন্যবাদ সঞ্চালক নাসির সাহেবকে তিনি দেশের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটকে সংলাপের শুরুতেই সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। এখনো বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিক দিকেই আছে। কিন্তু আতঙ্কের বিষয় এই যে, হটাত করে দেশে করোনার মৃত্যুর হার বেড়ে গিয়েছে, শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতে এই মৃত্যুর হার বেড়ে গিয়েছে। আমাদের নিজেদের ধারণা এই ভাইরাসটিকে আগামী কয়েক মাসে অন্তত একটা কার্যকরী টিকা না আসা আগ পর্যন্ত আমরা নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারি তাহলে এর প্রভাব আমাদের সমাজ, অর্থনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা সব কিছুর উপরেই পড়বে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নীতি ও প্রণোদনা বাস্তবায়নের পরে আমরা একটা মিশ্র জীবন-জীবিকার পদক্ষেপ নিয়েছিলাম যার সুফল আমরা ভোগ করছি এখন। অর্থনীতিতো বেড়ে যাচ্ছিলো এবং করোনা নিয়ন্ত্রণও ভালোভাবে করছিলাম আমরা। এটাকে সবসময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কিন্তু আমাদের মধ্যে একটা কমপ্লেক্সিসিটি এসে পড়েছে যে, আমরা দলে দলে পর্যটনে যাচ্ছি, ঘুরতে যাচ্ছি কোন ধরনের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই। মন্ত্রী পরিষদ ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, এভাবে যদি স্বাস্থ্যবিধি না মানা হয় তাহলে এক-দুই দিনের মধ্যেই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এই ব্যাপারে কোনভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না, বিশেষ করে শহর এলাকায় মানুষজন এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় বের হলেই মাস্ক পরিধান করতে হবে। এভাবে যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারি এবং এই ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি তাহলে দেশে অর্থনীতি যে ভালো গতিতে চলছে তা আরও ভালো হবে আমি বিশ্বাস করি। আমরা যে অর্থনীতিতে এতো ভালো ভাবে আগাচ্ছি এর পিছনে কয়েকটি খাত কাজ করছে। এইযে বলা হচ্ছে , আমরা অনেক দেশের থেকে ভালো করছি এর সোর্স কি? এই সোর্সগুলোর মধ্যে প্রথমত হচ্ছে দেশের কৃষি আমাদেরকে রক্ষা করেছ। আমাদের রক্ষা কবজ হচ্ছে আমাদের কৃষি। যদি অনেক পণ্য আমাদেরকে আমদানি করতে হতো বিশেষ করে খাদ্য পণ্য আমদানি করতে হতো তাহলে আমাদের অনেক টাকা থাকলেও এই মহামারির কারণে আমদানি করা সম্ভব হতোনা। দ্বিতীয় যে খাতটি হচ্ছে আমাদের রেমিটেন্স। আমাদের রেমিটেন্স আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। সরকারের অত্যন্ত বিচক্ষণ নীতির কারণে যে প্যাকেজ দিয়েছিলেন রেমিটেন্সের জন্য এটা খুব ভালো কাজ করছে। আমি মনে করি, এই করোনার মধ্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক দৃঢ়তার সাথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমি আমার বক্তব্যের শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সেই ব্যক্তিকে, যিনি আমাদেরকে একটি পতাকা এনে দিয়েছেন, যার জন্ম না হলে আমরা এই স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম না। সেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ তার পরিবারের নিহত সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। এবং গতকালকে আমাদের আরেকজন সহযোদ্ধা শেখ নাসের সাহেবের স্ত্রী, শেখ হেলাল উদ্দিনের মা মিসেস রাজিয়া নাসের মারা গিয়েছেন, তার মৃত্যুতে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। মহামারি শুরুর প্রথম দিকে গত ৮ই মার্চ আমাদের হঠাৎ করে ফোন দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসায় যেতে বলে যেহেতু আমরা বঙ্গবন্ধু জন্মশত বার্ষিকী উৎযাপন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য। এবং সেখানে আমরা দীর্ঘক্ষণ আলাপ আলোচনা করি। সেখানে রেহানা আপাও ছিলেন, পুতুলও ছিলেন। সেখানে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতেই অনেকেই অনেক ধরনের প্রপোজাল দেন কিন্তু উনারা দুই বোন একমত ছিলেন যে আমরা কোনভাবেই কোন ধরনের বড় অনুষ্ঠান করবো না। আমরা কোনভাবেই দায়ী নিতে পারবো না যে, এই রকম একটা মহামারি আমাদের দেশের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়বে। সেখান থেকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজে অক্টোবর মাস থেকে উনি প্রতিটা দিন এমনকি শনিবারের দিনেও বাসা থেকে মিটিং করে যাচ্ছেন। উনি এমন কোন দিন নেই যে তিনি মিটিং করছেন না। তিনি প্রতিটা মিটিংয়েই বলছেন যে মাস্ক পড়েন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন। কিন্তু আমরা ঢাকা শহরে আমরা শিক্ষিত সমাজের বেশির ভাগ লোকই কিন্তু অন্যায় কাজটি করে যাচ্ছি। একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন তার দেশের মানুষকে কোন আহ্বান জানান আমাদের নিজের ভালোর জন্য, সেখানে আমরা এই যে কোন ধরনের সাড়া দিচ্ছিনা এটা সবচে বড় দুঃখের বিষয়। গত দুই-তিন দিন আগে আমরা কক্সবাজারে যেভাবে মানুষের মহা উৎসব দেখলাম, আজকে সকালে পঞ্চগড়ে যে মহা উৎসব দেখলাম; এসব দেখে তো আমারা বাহিরের দেশকে নিয়ে যতটা না ভীত তার থেকে বেশি ভীত আমাদের নিজেদের দেশের মানুষদের নিয়ে। আমাদের এখানে মহামারি যে পর্যায়ে আছি সেখান থেকে যদি আরও বাড়ে সেটা কিন্তু আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলে। আমার লোকজন যদি আক্রান্ত হয়, আমি যদি ইন্ডাস্ট্রি না চালাতে পারি তাহলে কিভাবে হবে। আমাদের এখন কঠোরভাবে এই স্বাস্থ্যবিধিটাকে মেনে চলতে হবে।
ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুই প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন এই জাতি দেশ প্রেমিক জাতি, স্বাধীনচেতার জাতি। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ ছিল একটা বিরল যুদ্ধ যাতে প্রমাণ হয়েছে আমরা একটা মানবিক জাতি। আমরা যদি সাড়া পৃথিবীর যুদ্ধ বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখতে পাবো সেনাবাহিনী ছাড়া আর কেউ তেমন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই হেমিলনের বাঁশিওয়ালার মতো সাড়া জাতিকে জনযুদ্ধে সম্পৃক্ত করার ফলেই মাত্র ৯ মাসে আমরা স্বাধীনতা লাভ করতে পেরেছি। আমরা সুনামির সময়, সিডরের সময় দেখেছি সারা দেশে মানুষজন উদার করে একে অন্যকে সাহায্য করেছে। এই মানবিক বৈশিষ্ট্য সারা বিশ্বে আর কোথাও নেই। প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০০টির বেশি সার্কুলার জারি করেছে। আমাদের দেশের যেসকল দেশ প্রেমিক আছেন ইন্ডাট্রিয়ালিস্ট, সাংবাদিক, চিকিৎসক, ব্যাংকার, কৃষক, শ্রমিকদের স্যালুট জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনেকেই বলেছিলেন দেশে কারফিউ দিতে, কিন্তু উনি তা করেননি। এটার সুফল আমরা পেয়েছি। আমাদের সাপ্লায় চেইন ভেঙ্গে যায়নি। আমাদের শিপমেন্ট বন্ধ থাকলেও কৃষি উৎপাদন বন্ধ হয়নি। এই করোনার সময়ে দেশে আমাদের ই-কমার্স ও ই-ব্যাংকিং খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। আমরা একটা ঘটনা ভালো ভাবেই জানি কোটোয়ালী পারাতে তরমুজ চাষিরা ইউএনওকে এসে বলেছে, আমাদের তো মাথায় হাত দেওয়ার মতো অবস্থা, আমরা কোনভাবেই তরমুজ বিক্রি করতে পারছিনা। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা ছুটিতে ছিল এবং ইউএনও তাদেরকে সাথে নিয়ে একটা সফটওয়্যার বানিয়ে ই-কমার্সের মাধ্যমে প্রতিদিন ২০লক্ষ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে বলেছিলেন ডিজিটাল বাংলাদেশ, সেটা কিন্তু আমাদের কাছে রুপকথার মতো মনে হয়েছিল, কিন্তু তার সুফল কিন্তু আজ আমরা ভালোভাবেই ভোগ করছি। বর্তমান প্রজন্মের কাছে শেখ হাসিনা এক সাহসী রাজনীতিকের নাম; যাঁর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় ভবিষ্যতের বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে চলেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি পাল্টে গেছে। তিনি মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে সব বিরূপ পরিস্থিতিকে নিজের অনুকূলে নিয়ে এসেছেন। তাঁর মন্ত্রিসভায় যুক্ত হয়েছেন অভিজ্ঞ ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক। কিছু বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা সত্ত্বেও উন্নয়ন সহযোগী ও অংশীদার বানিয়ে ফেলেছেন রাশিয়াসহ অন্য অনেক দেশকে। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধুত্বের বন্ধন আরো সুদৃঢ় হয়েছে। এই সরকারের উন্নয়নের মডেল অন্যান্য দেশের কাছে প্রশংসিত হচ্ছে।