প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২০, ১:৪৩ এএম | অনলাইন সংস্করণ
করোনা ভাইরাসের তীব্র প্রকোপ আর সরকারি ছুটি ঘোষণার পর কর্মহীন হয়ে পরা ২০হাজার মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি, গল্পের ছলে এভাবেই বলছিলেন 'আমাল ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ইসরাত করিম ইভ'। করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর কারণে সরকারি ছুটি ঘোষণা করার পর কিছুটা সময় পরিবারের সাথে ঘরবন্দী কাটাতে হয়েছে, আমরা যেহেতু মানুষের জন্য কাজ করে থাকি; তাই বেশীদিন ঘরবন্দী থাকতে পারিনি, করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পরা মানুষের হাহাকারে বের হতে হয়েছে ঘর থেকে৷
২০১৫ সালে আমাল ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে; বস্তি ও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের গরীব, অসহায় নারীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, শিক্ষাগত উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্যোগে-দুর্ভোগে কাজ করে যাচ্ছে। ইসরাত করিম ইভ আরও বলেন, কিশোরী-তরুণীদের আমরা শিখিয়ে থাকি মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার গুরুত্ব । তাদের যৌন নিপীড়ন থেকে বাঁচার কৌশল ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সামাজিক-মানসিক কাউন্সিলিং করে থাকি । চর অঞ্চলের মেয়েদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার মাধ্যমে বাল্যবিবাহ রোধ ও যৌতুকের অভিশাপের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছি নিয়মিতই, ইসরাত করিম ইভ আমাল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গড়ে তোলেছেন নারীদের কারিগরি শিক্ষাদানকেন্দ্র যেখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছে নারীরা। এছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেছেন যেখানে সেবা দিচ্ছেন আমাল ফাউন্ডেশনের কর্মীরা আর বিনামূল্যে সেবা নিচ্ছে চরাঞ্চলের মানুষ, প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষ ও রোহিঙ্গারা। সাম্প্রতিক সময়ে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে সারা দেশ ব্যাপী 'রুখে দাড়াও নামে' এক ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে আমাল ফাউন্ডেশন, এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মেয়েরা নিজেদের রক্ষা করার কৌশল শিখছে এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া কৃষকদের বিজ, সার, কীটনাশক দিচ্ছে এই সংগঠনটি যেন কৃষকেরা আবার ঘুরে দাড়াতে পারে।
নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসরাত করিম ইভ বলেন, সন্তানদের পারিবারিক শিক্ষার প্রতি জোর দিতে হবে এবং নারীর প্রতি সম্মানের ব্যাপারটি শিখিয়ে পড়িয়ে বুঝিয়ে দিতে পারলেই সহিংসতা অনেকাংশে কমে আসবে, এছাড়া প্রত্যেক এলাকায় তরুণরা যদি কোন কমিটি গড়ে তোলে, অন্যায় হলে বা হতে চলেছে এমন অবস্থায় সেই তরুণরা কঠোরভাবে অবস্থান নিলে নারীর প্রতি সহিংসতাসহ সব ধরনের অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে বলে মনে করেন আমাল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।
মানুষের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করা ইভ সুফলও পেয়েছেন, আন্তর্জাতিক ফোর্বস ম্যাগাজিন প্রতিবারের মতো এবছরও ঘোষণা করে তাদের চোখে এশিয়ার সফল অনূর্ধ্ব ৩০-এর মধ্যে ৩০ জন তরুণের নাম। সেই তালিকায় সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ ক্যাটাগরিতে স্থান পায় সামাজিক সংগঠন আমাল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ইশরাত করিম ইভ । ফোর্বসের ওয়েবসাইটে তরুণ উদ্যোক্তা ইসরাত করিম ইভকে নিয়ে লেখা হয়, 'বাল্যবিবাহ, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার, তালাকপ্রাপ্ত ও বিধবা নারীদের নিয়ে কাজ করেন তিনি। বর্তমানে বিভিন্ন গ্রামের ৫২ হাজারের বেশি মানুষকে নিয়ে কাজ করছে ইশরাত করিম ইভ এর আমাল ফাউন্ডেশন।'
জন্মস্থান বগুড়ায় শৈশব কাটানো এই নারী থাকছেন ঢাকায়, স্বপ্ন নারীর পুরুষের সমতা সমাজে ফিরিয়ে আনার। এখনো নারীদের দেখা হয় বৈষম্যের চোখে, ইসরাত করিম ইভ এর স্বপ্ন সমাজকে এমন অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার; যেখানে নারীদের পারিশ্রমিক দেওয়া হবে পুরুষের সমান, দেখা হবে সম্মানের চোখে ।
আপাতত সমাজ নিয়ে ভাবতে ভাবতে নিজেকে নিয়ে তেমন কোন পরিকল্পনা নেই, তবে 'আমাল ফাউন্ডেশন' এর জন্য তার মতো আরও দশজন নারীকে তৈরি করার পর পিএইচডি করবেন বলে জানান তিনি ।