প্রকাশ: সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০, ১০:৫৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন, বিতর্ক, একে অন্যের বিরুদ্ধে রাজনীতির রঙ ছড়ানো উত্তেজনার মধ্যে অবশেষে অনুষ্ঠিত হয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলন। আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)’র মৃত্যুর দুই মাস পর অনুষ্ঠিত এই জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে শায়খুল হাদিস আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরীকে (চট্টগ্রাম) সংগঠনের আমির নির্বাচিত করা হয়েছে। মহাসচিব হয়েছেন আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। নিজেদের বারবার অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করা হেফাজতে ইসলাম কার্যত রাজনৈতিক দলাদলিতে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, ধর্ম চর্চার অধিকার সবার আছে, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি বন্ধ হোক।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৬০ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। সোমবার (১৬ নভেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রূপগঞ্জ থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জাব্বার খান (পিনু), নায়েবে আমির, হেফাজতে ইসলাম এবং মহাসচিব, খেলাফত মজলিস ড. আহমদ আব্দুল কাদের, চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্কলার্স ফোরাম বাংলাদেশ, যুগ্ম-মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সূফীজম ঢাকা, লেখক, গবেষক, কলামিস্ট ও ইসলামী চিন্তাবিদ মূফতী শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী, অপরাজেয় বাংলা সদস্য সচিব এইচ রহমান মিলু। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
মুফতী শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বলেন, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, সঞ্চালক ও দর্শকবৃন্দ যারা যেখান থেকে আজকের এই আলোচনা অনুষ্ঠান দেখছেন সবাইকে জানাচ্ছি আন্তরিক মোবারকবাদ এবং মাহে রবিউল আউয়ালের বিদায় লগ্নে রাসুলে আকরাম (সাঃ) এর প্রতি অসংখ্য দুরুদ সালাম পেশ করছি। রাসুলের ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ। ভালোবাসা ঈমানের পূর্বশর্ত। ভালোবাসা না থাকলে কেউ পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারে না। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে। এক. আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে অধিক প্রিয় হওয়া। দুই. কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা। তিন. কুফরিতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো অপছন্দ করা। (বুখারি, হাদিস : ৬০৪১) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি তার নিকট তার পিতা, সন্তান এবং সকল মানুষ অপেক্ষা প্রিয়তম হয়েছি।” (বুখারী ১৫, মুসলিম ১৭৮নং) এই ভালোবাসা নামই হলো মুমিনের ঈমান। কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে মন থেকে ভালোবাসবে না। শুধু তা-ই নয়, যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাকে আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন। সর্বোত্কৃষ্ট ভালোবাসা হলো, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসা। ভালোবাসা হতে পারে মা, বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী, পুত্র কিংবা অন্য আত্মীয়দের জন্য। যা অবশ্যই জায়েজ পদ্ধতিতে। কিন্তু আজ আমাদের সমাজে ভালোবাসা শব্দটি অপাত্রেই বেশি ব্যবহার হচ্ছে। যার দরুন খোদ ভালোবাসা শব্দটিই কলুষিত হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং রাসুলকে ভালোবাসাই হলো হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতে ইসলাম মানে নবীর সুন্নত অনুসরণ। হেফাজত মানে সংরক্ষণ। আমি এই শান্তির ধর্ম ইসলামকে বিশ্বাস করবো এবং সংরক্ষণ করবো, এটার প্রতিনিধিত্ব করবো, এটাই হেফাজতে ইসলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সম্মান, মর্যাদা, সুরক্ষা এবং ইসলামের কোন বিধি বিধানের মর্যাদা লঙ্গন না হওয়া এর সুরক্ষার জন্যই হেফাজতে ইসলামের সৃষ্টি।