#আল্লাহর রহমতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ করোনাকে ভালোভাবেই মোকাবেলা করে যাচ্ছে: বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জাব্বার খান।
#হেফাজত কোন রাজনৈতিক দল নয়: ড. আহমদ আব্দুল কাদের।
#রাসুলকে ভালোবাসার নামই হলো হেফাজতে ইসলাম: মুফতী শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী।
#হেফাজতের সম্পূর্ণ বিষয়টায় আমার কাছে পলিটিক্যাল লাগছে: এইচ রহমান মিলু।
পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন, বিতর্ক, একে অন্যের বিরুদ্ধে রাজনীতির রঙ ছড়ানো উত্তেজনার মধ্যে অবশেষে অনুষ্ঠিত হয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলন। আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)’র মৃত্যুর দুই মাস পর অনুষ্ঠিত এই জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে শায়খুল হাদিস আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরীকে (চট্টগ্রাম) সংগঠনের আমির নির্বাচিত করা হয়েছে। মহাসচিব হয়েছেন আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। নিজেদের বারবার অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করা হেফাজতে ইসলাম কার্যত রাজনৈতিক দলাদলিতে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, ধর্ম চর্চার অধিকার সবার আছে, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি বন্ধ হোক।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৬০ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। সোমবার (১৬ নভেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রূপগঞ্জ থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জাব্বার খান (পিনু), নায়েবে আমির, হেফাজতে ইসলাম এবং মহাসচিব, খেলাফত মজলিস ড. আহমদ আব্দুল কাদের, চেয়ারম্যান, ইসলামিক স্কলার্স ফোরাম বাংলাদেশ, যুগ্ম-মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সূফীজম ঢাকা, লেখক, গবেষক, কলামিস্ট ও ইসলামী চিন্তাবিদ মূফতী শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী, অপরাজেয় বাংলা সদস্য সচিব এইচ রহমান মিলু। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জাব্বার খান (পিনু) বলেন, আমাকে আজকের সংলাপে আমন্ত্রণ করার জন্য ভোরের পাতাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা ইসলাম ধর্মটাকে যেমন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছাড়া চিন্তা করতে পারিনা তদ্রূপ বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া এই বাংলাদেশ বিনির্মাণে আরও কারও চিন্তা আমাদের মাথায় আসেনা। তখন আমি ছিলাম তরুণ কলেজের ছাত্র যখন দেশে মা-বোনেরা নির্যাতিত হচ্ছিলো। তখন আমরা ঘরে বসে না থেকে আমাদের এই দেশকে যেকোনো ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে এই দেশকে এই পৈশাচিক হানাদার বাহিনীদের কাছ থেকে মুক্ত করতে হবে। তখন আমাদের ভূমিকা যেটা ছিল, সেটা থেকে কখনো বিচলিত হয়নি। এখন এই দেশ স্বাধীন হয়েছে, এই দেশের যে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে এটার জন্য আমি অত্যন্ত গর্বিত যে আমাদের জাতির পিতার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজ দায়িত্বে এটা করে যাচ্ছেন। উনিও তার বাবার মতো এই বাংলার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, উনার কাছে এখন যে উন্নয়ন প্রকল্প আছে এটা যেন উনি এই বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য এইগুলো বাস্তবায়ন করে যেতে পারে। আমি একটা জিনিষ বিশ্বাস করি, যার কাজ যাকেই সাজে। অন্যত্র গেলে লাঠি বাজে। তাই ধর্ম নিয়ে আমি বেশি কথা বলতে চাচ্ছিনা। আমাদের ইসলাম ধর্ম আমাদের শিক্ষা দিয়েছে শান্তির জন্য, এবং আমি এটা বিশ্বাস করি, এই ইসলাম ধর্ম দিয়ে সাড়া পৃথিবীতে যেন শান্তি বজায় থাকে। আমাদের জন্য ঐ শান্তির পথটায় সবচে বড় পদ। বাংলাদেশের প্রতি আল্লাহ তাআলার অবশ্যই রহমত আছে কারণ যেখানে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই যেখানে এই করোনার জন্য হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটা নিতান্তই অনেক কম। আল্লাহর রহমতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ করোনাকে ভালোভাবেই মোকাবেলা করে যাচ্ছে।
ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, হেফাজত কোন রাজনৈতিক দল নয়, এটা হচ্ছে একটি ধর্মীয় সংগঠন। এটা একটি উন্মুক্ত সংগঠন। যে কোন ব্যক্তি যিনি ইসলাম বিশ্বাস করেন, যিনি রাসুল (সাঃ) কে মহব্বত করেন; তিনি আলেম হলেও পারবেন বা যে কোন রাজনীতি দল করলেও পারবেন না করলেও পারবেন। ইসলামের যে মূল বিষয় আছে এই গুলোর বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদের প্রতিরোধ করা, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা, ইসলামী মূল্যবোধকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য চেষ্টা করা, এর জন্য সংগ্রাম করা, আন্দোলন করা। কাজেই এই যে মিডিয়াই রাজনৈতিক হেফাজতের নাম দেওয়া হচ্ছে এটা আসলে ঠিক না। হেফাজতের সাথে বিএনপি-জামায়াতকে সংযুক্ত করে নিউজ করা; এটা হচ্ছে একটা সস্তা প্রচারণা। এটা করে শুধুই বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমি এটার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)’র মৃত্যুর পর অনেকেই ধারণা করেছে হেফাজত শেষ হয়ে গিয়েছে কিন্তু এটা শেষ হয়নাই। গতকাল রবিবার শান্তিমূলক ভাবে এর কমিটি গঠন করা হয়েছে, এর সম্মেলন করা হয়েছে এবং দুই মাস পর অনুষ্ঠিত এই জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে শায়খুল হাদিস আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরীকে (চট্টগ্রাম) সংগঠনের আমির নির্বাচিত করা হয়েছে। মহাসচিব করা হয়েছে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীকে। গতকাল রোববার সারা দেশ থেকে আসা পাঁচ শতাধিক প্রতিনিধির অংশগ্রহণে এই জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনে (কাউন্সিল) অনুষ্ঠিত হয়। কোন ঝগড়া-কোন্দল ছাড়ায় এটা সফলভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে। মিডিয়াঅঙ্গনের সেকুলার বিশ্বাসী লোকেরা যারা ইসলামকে সহ্য করতে পারেনা তারাই মূলত এইসব প্রচার করে বেড়াচ্ছে। যেটা আসলে নয়, সেটা চিৎকার করে বলটা খুবই বেমানান। তাই আমার অনুরোধ রইলো হেফাজতকে রাজনীতির সাথে জড়িত বলা থেকে আপনারা বিরত থাকুন।
মুফতী শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বলেন, সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, সঞ্চালক ও দর্শকবৃন্দ যারা যেখান থেকে আজকের এই আলোচনা অনুষ্ঠান দেখছেন সবাইকে জানাচ্ছি আন্তরিক মোবারকবাদ এবং মাহে রবিউল আউয়ালের বিদায় লগ্নে রাসুলে আকরাম (সাঃ) এর প্রতি অসংখ্য দুরুদ সালাম পেশ করছি। রাসুলের ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ। ভালোবাসা ঈমানের পূর্বশর্ত। ভালোবাসা না থাকলে কেউ পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে পারে না। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে। এক. আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে অধিক প্রিয় হওয়া। দুই. কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা। তিন. কুফরিতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো অপছন্দ করা। (বুখারি, হাদিস : ৬০৪১) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি তার নিকট তার পিতা, সন্তান এবং সকল মানুষ অপেক্ষা প্রিয়তম হয়েছি।” (বুখারী ১৫, মুসলিম ১৭৮নং) এই ভালোবাসা নামই হলো মুমিনের ঈমান। কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে মন থেকে ভালোবাসবে না। শুধু তা-ই নয়, যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসবে, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাকে আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন। সর্বোত্কৃষ্ট ভালোবাসা হলো, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ভালোবাসা। ভালোবাসা হতে পারে মা, বাবা, ভাই, বোন, স্ত্রী, পুত্র কিংবা অন্য আত্মীয়দের জন্য। যা অবশ্যই জায়েজ পদ্ধতিতে। কিন্তু আজ আমাদের সমাজে ভালোবাসা শব্দটি অপাত্রেই বেশি ব্যবহার হচ্ছে। যার দরুন খোদ ভালোবাসা শব্দটিই কলুষিত হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং রাসুলকে ভালোবাসাই হলো হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতে ইসলাম মানে নবীর সুন্নত অনুসরণ। হেফাজত মানে সংরক্ষণ। আমি এই শান্তির ধর্ম ইসলামকে বিশ্বাস করবো এবং সংরক্ষণ করবো, এটার প্রতিনিধিত্ব করবো, এটাই হেফাজতে ইসলাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সম্মান, মর্যাদা, সুরক্ষা এবং ইসলামের কোন বিধি বিধানের মর্যাদা লঙ্গন না হওয়া এর সুরক্ষার জন্যই হেফাজতে ইসলামের সৃষ্টি।
এইচ রহমান মিলু বলেন, আমি এখানে বিজ্ঞ আলোচকদের বক্তব্য শুনছিলাম। হেফাজত আসলেই কোন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেনি; এটা আমরা জানি, সমর্থন করি। কিন্তু একটা জিনিষ বুজতে হবে, লোহা যখন খনিজ থেকে উত্তোলন করি সেটা কিন্তু আমরা সরাসরি পিস্তল বা অন্য কোন ধাতু হিসেবে পায়না। লোহাটা আপনি কার হাতে তুলে ধরছেন এবং সেই লোহাটা আপনি কি হিসেবে ব্যাবহার করছেন, সেটার দায় দায়িত্ব নির্ভর করে যে এই লোহাটা কাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। হেফাজত ইসলাম সংগঠন হলো; ঠিক আছে এই বিষয়টা, আপনি ধর্মীয় কাজ করবেন, সামাজিক সচেতনতার কাজ করবেন। এটাতে দ্বিমত করবার কিছুই নেই। আমরা যারা মুসলমান আছি তারা এটাকে সাধুবাদ জানাতেই পারি। কিন্তু হেফাজতের একটা অংশ যখন জামায়াতদের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রলোভনের উপর ভিত্তি করে, বিশেষ করে বাবু নগরী গ্রুপ হিসেবে আমরা যাদের চিনি, তারা যখন ৫ই মে শাপলা চত্তরে সরকার পতনের আন্দোলন হিসেবে নিয়ে গেলেন, ৩০০ কোটি টাকা লেনদেন করলেন; সেই ধরনের কাজে যখন হেফাজত ইসলামের ব্যানার চলে আসে তখনতো আমাদের সে জায়গাটাতে আপত্তি থাকবেই। এটা শুধু হেফাজত ইসলামের একটি গ্রুপকে প্রশ্নবিদ্ধ করেনা, সমস্ত হেফাজত ইসলামকে গ্রুপকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কারণ যে অরাজকতা সৃষ্টি করে ৫ই মে শাপলা চত্তরে যে ঘটনা ঘটেছে সেখানে কিন্তু হেফাজতের অন্য গ্রুপকে আলাদা করে দেখিনি। বরং আমরা দেখেছি তারা প্রত্যেকেই সেদিন কিরকম অরাজকতা করেছে সেখানে। কোরআন শরীফ পর্যন্ত তারা সেদিন পুড়িয়ে দিয়েছে। এর দায় দায়িত্ব কে নিবে? নিশ্চয়ই হেফাজত ইসলামকে নিতে হবে। ইসলাম মানেই পবিত্র কোরআন শরীফ। পবিত্র কোরআন শরীফ মানেই মহান আল্লাহ্র সরাসরি নির্দেশ। এটা আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মারফতে আমাদের কাছে সরাসরি এসেছে। আল্লাহ পাক বলেছেন, এই গ্রন্থের হেফাজতকারী আমি আল্লাহ্ নিজেই। মুহাম্মদ (সা.) থেকে শুরু করে আজ ১৪০০ বছরের বেশি সময় হয়ে গেছে এখনো এর কোন বিকৃত হয়নি যেখানে অন্যান্য ধর্মের অনেক গ্রন্থ বিকৃত হয়েছে সেখানে পবিত্র কোরআন অবিকৃত আছে এখনো। সেই কোরআনের হেফাজতকারী স্বয়ং আল্লাহ্ পাক নিজে নেন সেখানে ইসলামের হেফাজত করার আমদের কি কোন সুযোগ আছে, আমাদের কি কোন ক্ষমতা আছে। এই নামটা নিয়েই আমার আপত্তি আছে। ইসলামের হেফাজত করার আমি, আপনি কে? সমস্ত পৃথিবীর মাত্র ১৭ কোটির একটি দেশে মাত্র ৫-৬ লাখ মানুষ নিয়ে আপনারা সমস্ত পৃথিবীর ইসলামকে হেফাজত করবেন! এই সম্পূর্ণ জিনিষটায় পলিটিকাল আমার কাছে।