প্রকাশ: সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০, ২:২১ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুল করিমকে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে দু’জন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ-উর-রহমান তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর বিচারক তাদের কারাগারে পাঠান। জবানবন্দি দেওয়া দু’জন হলেন- শেফ মাসুদ ও ওয়ার্ডবয় অসীম চন্দ্র পাল। একইদিনের আরেক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লাহ মামলার আসামি মাইন্ড এইড হাসপাতালের পরিচালক ফাতেমা তুজ-যোহরা ময়নাকে চারদিনের রিমান্ডে পাঠান। এর আগে গত ১০ নভেম্বর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম মামলার ১০ আসামিকে সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- মাইন্ড এইডের মার্কেটিং ম্যানেজার আরিফ মাহমুদ জয়, কোঅর্ডিনেটর রেদোয়ান সাব্বির, কিচেন সেফ মাসুদ, ওয়ার্ডবয় জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম চন্দ্র পাল, লিটন আহাম্মদ, সাইফুল ইসলাম পলাশ ও ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান।
১০ নভেম্বর দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশীদ বলেন, ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে ৮ থেকে ৯ জন লোক মিলে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করছেন। কেউ মাথায়, কেউ বুকে আঘাত করেছেন। কাউকে আবার এএসপি আনিসুল করিমের হাত বাঁধতেও দেখা গেছে। তারা সবাই হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়, ক্লিনার, এখানে কেউ চিকিৎসক ছিলেন না। তাই আমাদের কাছে মনে হয়েছে এটি স্পষ্ট হত্যাকা-।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে আদাবর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সিসিটিভি ফুটেজে উপস্থিত ১০ জনের সবাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা জানান, পারিবারিক ঝামেলার কারণে আনিসুল মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ৯ নভেম্বর দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আনিসুলকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালটিতে ভর্তির কিছুক্ষণ পরই কর্মচারীদের ধস্তাধস্তি ও মারধরে তার মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেন পরিবার।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করায় কর্মচারীরা তাকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। ঘটনার পর হাসপাতালের অ্যাগ্রেসিভ ম্যানেজমেন্ট রুমে তাকে মারধরের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, হাসপাতালে ঢোকার পরই আনিসুল করিমকে ৬ থেকে ৭ জন টেনে-হিঁচড়ে একটি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তাকে মাটিতে ফেলে চেপে ধরেন। হাসাপাতালের ব্যবস্থাপক আরিফ মাহমুদ তখন তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মাথার দিকে থাকা দুইজন হাতের কনুই দিয়ে আনিসুল করিমকে আঘাত করছিলেন। এ সময় একটি কাপড়ের টুকরা দিয়ে আনিসুল করিমের হাত পেছনে বাঁধা হয়। চার মিনিট পর তাকে যখন উপুড় করা হয়, তখনই ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি। এ ঘটনায় সোমবার রাতে প্রথমে ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। পরে আরও একজনকে আটক করা হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ৩৩ ব্যাচের ছাত্র আনিসুল করিম ৩১তম বিসিএসে পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। এক সন্তানের জনক আনিসুলের বাড়ি গাজীপুরে। সর্বশেষ আনিসুল করিম বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনারের দায়িত্বে ছিলেন।