প্রকাশ: সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০, ১:৩৩ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
আর্মেনিয়ার সরকার সেদেশের প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ানকে হত্যার একটি অপচেষ্টা নস্যাৎ করে দিয়েছে। গত শনিবার এক বিবৃতিতে দেশটির ন্যাশনাল সিকিউরিটি সার্ভিস (এনএসএস) এ তথ্য জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চক্রান্তকারীরা নিকোল পাশিনিয়ানকে হত্যা করে ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা করছিল।এ ঘটনায় এনএসএস-এর সাবেক প্রধান আর্তুর ভেনেতসিয়ান, রিপাবলিকান পার্টির পার্লামেন্টারি পার্টির সাবেক প্রধান ভাহরাম বাঘদাসারিয়ান এবং যুদ্ধ স্বেচ্ছাসেবক আশোট মিনাসায়ানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার পর তার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন সেটি নিয়েও নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করেছে সন্দেহভাজনরা।কারাবাখ যুদ্ধে দৃশ্যত আজারবাইজানের কাছে শোচনীয় পরাজয়ের পর এমনিতেই নিজ দেশে চাপের মুখে রয়েছেন নিকোল পাশিনিয়ান। তার পদত্যাগের দাবিতে দেশটিতে ব্যাপক বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটেছে। এর মধ্যেই এ হত্যাচেষ্টার ঘটনা ঘটলো।আর্মেনিয়ার সরকারি হিসাবে, কারাবাখ যুদ্ধে দেশটির দুই হাজার ৩৭১ আর্মেনীয় সেনা নিহত হয়েছে। সর্বশেষ যুদ্ধ বন্ধে গত মঙ্গলবার একটি চুক্তিতে উপনীত হয় রাশিয়া, আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া। আজেরি বাহিনী আর্মেনিয়ার কাছ থেকে কারাবাখের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর শুশা দখলের পর এ চুক্তিতে উপনীত হয় তিন দেশ। শুশা কারাবাখের দ্বিতীয়বৃহত্তম শহর। আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধ হলেও চুক্তিতে রাশিয়া যুক্ত হয়েছে মূলত মধ্যস্থতাকারী হিসেবে।ওই চুক্তির বিরোধিতা করে আর্মেনিয়ার রাজধানী ইয়ারাভানে হাজার হাজার মানুষ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা প্রধানমন্ত্রীকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দিয়েও স্লোগান দিনে। বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট ভবনেও ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। তবে নিকোল পাশিনিয়ান বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধে এই চুক্তি মেনে নেওয়া ছাড়া তার কাছে আর কোনও উপায় ছিল না।নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলটি আজারবাইজানের ভেতরে অবস্থিত হলেও ইয়েরেভান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করছে আর্মেনীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। ১৯৮০-এর দশকের শেষদিকে অঞ্চলটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। ১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মুহূর্তে সংঘর্ষ চূড়ান্ত আকার ধারণ করে। ১৯৯৪ সালে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত এই সংঘর্ষে ৩০ হাজার মানুষ নিহত হয়। পরে ২০১৬ সালের শুরুতেও সংঘাতে জড়ায় দুই পক্ষ।অঞ্চলটি নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের পুরনো সংঘাত গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে আবার শুরু হয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, এ সংঘাতে এরইমধ্যে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। উভয়পক্ষেরই দুই হাজারেরও বেশি করে মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। তবে এবারের যুদ্ধে আর্মেনিয়ার দখল থেকে নিজেদের হারানো ভূখন্ড ফেরত পেয়েছে আজারবাইজান। মূলত এর ফলেই নিজ দেশে ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী।