প্রকাশ: সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০, ২:০৬ এএম | অনলাইন সংস্করণ
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের এক বছর পর অবশেষে বাংলাদেশ ব্যাংক আরও দুইজন ডেপুটি গভর্নর পেতে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর (ডিজি) পদে নিয়োগ পেতে প্রস্তাব করা হয়েছে ২০১৬ সালে রিজার্ভ চুরি ঘটনায় তৎকালীন আলোচিত মহাব্যবস্থাপক কাজী সাইদুর রহমানের নাম। যিনি ওই সময় ফরেক্স রিজার্ভ এ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ছিলেন। রিজার্ভ চুরির ঘটনার ৩ মাসের মাথায় রংপুরে বদলি করা হয় তাকে। এরপর ক্ষমতার অপব্যবহার করে আবার ফিরে আসেন একই বিভাগে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
গত ২২ বছর ধরে ঘুরে ফিরে ওই বিভাগে দায়িত্ব পালন করে আসছেন কাজী সাইদুর রহমান। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধান অনুযায়ী, টানা তিন বছরের অধিক কেউ একই ডিপার্টমেন্টে কাজ করতে পারেন না।
সূত্র মতে, ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে দুই কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কায় আর বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার গেছে ফিলিপাইনে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কা থেকে দুই কোটি ডলার ফেরত পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই বছরের ১৫ মার্চ গভর্নরের পদ থেকে পদত্যাগ করেন ড. আতিউর রহমান। একই দিনে দুই ডেপুটি গভর্নর আবুল কাসেম ও নাজনীন সুলতানাকেও সরিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে পালন করে ফরেক্স রিজার্ভ এ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট। রিজার্ভ চুরির ঘটনাটি ফরেক্স রিজার্ভ বিভাগ জানলেও চার দিনের মধ্যেও কাউকে জানায়নি। ওই সময় ফরেক্স রিজার্ভ এ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপকের (জিএম) দায়িত্বে ছিলেন কাজী সাইদুর রহমান।
১৯৯৯ সাল থেকে একই বিভাগে দায়িত্ব পালন করায় সমালোচনার মুখে ২০১৬ সালের মে মাসে তাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রংপুর অফিসে বদলি করা হয়। এরপর ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি পান কাজী সাইদুর রহমান। ফিরে আসেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে। গত ২২ বছর ধরে ঘুরে ফিরে ফরেক্স রিজার্ভ এ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে দায়িত্ব পালন করে আসছেন কাজী সাইদুর রহমান। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধান অনুযায়ী টানা তিন বছরের অধিক কেউ একই ডিপার্টমেন্টে কাজ করতে পারবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষস্থানীয় কোন কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের এক বছর পর সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের দুইজন ডেপুটি গভর্নর পদে ৯ জনের নাম সুপারিশ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নাম প্রস্তাব পাঠিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এদের মধ্যে কাজী সাইদুর রহমানের নামও রয়েছে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবিএম রুহুল আজাদ বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সব শর্ত ও যোগ্যতা অনুযায়ী দুই ডেপুটি গভর্নর প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। সংক্ষিপ্ত তালিকার প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ডেপুটি গভর্নর পদের জন্য সাক্ষাৎকার নেয়া হয় না। কারণ তারা আগে থেকেই নিযুক্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ দিতে দেরি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এতদিন বাংলাদেশ ব্যাংকে ডেপুটি গভর্নরের পদ ছিল তিনটি। গত বছরে পদ সংখ্যা বৃদ্ধি করে চারটি করা হয়েছে। তবে শর্ত দেয়া হয়েছে চার জন ডেপুটি গভর্নরের মধ্যে একজনকে নিয়োগ দিতে হবে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে। ২০১৯ সালের অক্টোবরে ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দু’জন ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ দিতে আবারও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকে ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্নরা ডেপুটি গভর্নর পদে আবেদন করতে পারবেন বলে পরের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে একটি শর্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়।