পাওনা টাকা না পেয়ে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় দিনমুজুর এক শ্রমিককে প্রকাশ্যে আগুনের ছেঁকা দিয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলার জাফরগঞ্জ বাজারে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার সজল কুমার সাহা (৩৭) জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের সাহা বাড়ির মৃত জয়ন কুমার সাহার ছেলে।
আজ রোববার দুপুরে আহত সজল কুমার সাহা দেবিদ্বার থানায় জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. জহিরুল আলমসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্ত অন্যরা হলেন-একই ইউনিয়নের মো. হুমায়ূন, মো. রুবেল মিয়া, মো. ইদ্রিস মিয়া, শিবলু খান এবং মো. রিপন মিয়া।
আজ রোববার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসাধীন সজলের পুরো পিঠে, চোখে এবং হাতের আঙুলে গরম রডের কালো পোড়া ছেঁকার দাগ। হাসপাতালের বেডে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। নির্যাতনের কালো দাগ দেখিয়ে সজল বলেন, ‘আমি জহির ভাইকে কিছুই বলিনি, তারা আমার কাছে টাকা চাইছে আমি না দিলে তারা আমাকে গরম রডের ছেঁকা দেয়, আমার চোখে ঘুষি মারে, আমি এ নির্যাতনের বিচার চাই।’
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে সজল কুমার সাহা বলেন, ‘জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. জহিরুল আলমের নির্দেশে চার পাঁচজন সন্ত্রাসী আমার বাড়িতে গিয়ে আমার শার্টের কলারে ধরে গালিগালাজ করে বলে, তুই জহির ভাইকে কি বলছত বল? আমি বারবার বলছি, জহির ভাইকে আমি কি বলব? আমি হোটেলে দিন মুজুরের কাজ করি ওনাকে কিছু বলার আমার সাহস আছে। পরে রুবেল নামে একজন জহির ভাইকে কল করে বলেন, ভাই সে (সজল) নাকি আপনাকে চিনে না? আপনারে উল্টা গালিগালাজ করে। পরে ফোন রেখে তারা আমাকে টেনে হিঁচরে ঘর থেকে বাইর করে আর বলতে থাকে চল জহির ভাইয়ের অফিসে চল। আমি যেতে না চাইলে তারা আমাকে এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মেরে জাফরগঞ্জ বাজারে নিয়ে আসে।’
মারধরের শিকার যুবক বলেন, ‘তখন স্থানীয় লোকজন আমাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা তাদের বলে, তার কাছে আমরা টাকা পাই, আপনারা কেউ এর মধ্যে আসবেন না। এরপর পাশের চা দোকানের চুলা থেকে জলন্ত কাঠের লাকড়ি দিয়ে আমার পিঠে ও দুই হাতে পিটায়। পরে তারা আমাকে একটি মাইক্রো করে কংশনগর বাজারের কাছে ছফুরা এলাকায় নিয়ে জলন্ত রডের ছেঁকা দেয়। তারা আমার ছোট ভাইকে ফোন করে বলে, তারাতারি ২০ হাজার টাকা পাঠা, না হলে তোর ভাইয়ের অবস্থা খারাপ হবে।’
ভুক্তভোগী সজল আরও বলেন, ‘আমার ছোট ভাই আমার অবস্থা খারাপ দেখে তাদের বিকাশ নম্বরে চার হাজার টাকা পাঠায়। পরে তারা আমাকে পুলিশে দিবে বলে বুড়িচং থানায় নিয়ে গেলে আমার গাঁয়ে আগুনের ছেঁকা দেখে পুলিশ আমাকে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা নিতে বলেন। তারা আমাকে চিকিৎসা না করে আবার কংশনগর বাজারে এনে সন্ধ্যায় জাফরগঞ্জ বাজারের সিএনজিতে তুলে দেয়।’
জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. জহিরুল আলম বলেন, ‘নির্যাতনের শিকার সজল কুমার সাহাকে আমার কোনো লোক মারধর করেনি। মারধরের সময় আমি কুমিল্লায় ছিলাম। আমরা যতটুকু জানি সজল মাদকাসক্ত। তাকে ব্যবহার করে একটি চক্র আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করছে।’
এ বিষয়ে দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহিরুল আনোয়ার বলেন, ‘আহত সজল কুমার সাহা দেবিদ্বার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’