রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
কক্সবাজার কলাতলির ডলফিন মোড়ে অবৈধ বাস স্ট্যান্ড
জীপট্যুরিস্ট মিনিকার সংগঠনের নামে অপ্রতিরোধ্য চাঁদাবাজি
মোহাম্মদ শফিক, জেলা প্রতিনিধি কক্সবাজার
প্রকাশ: রোববার, ১৫ নভেম্বর, ২০২০, ৮:২৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

কক্সবাজারে আগত ভ্রামণ পিপাসো দেশি-বিদেশি পর্যটকদের গন্তব্যের শেষ স্থান হলো কলাতলির ডলফিন মোড়। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ জায়গাটি এখন অবৈধভাবে জীপট্যুরিস্ট মিনিকার সার্ভিসসহ অন্যান্য গাড়ির স্ট্যন্ড দিয়ে দখল হয়ে গেছে। এতে করে একদিকে যেমন প্রতিনিয়ত যানজটে মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, তেমনি জায়গাটি সরু ঢালু হওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা এবং পর্যটকরা চুরি ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অন্যদিকে এ অবৈধ গাড়ির স্ট্যান্ডকে ঘিরে ওসব কথিত সংগঠনের ব্যানারে প্রতিমাসে চলছে লক্ষ লক্ষ টাকার চাঁদাবাজি। এসব চাঁদাবাজদের দৌরতœ বন্ধে ও এ চত্ত¡রটি দখলমুক্ত করতে কক্সবাজারের নবগত পুলিশসুপারসহ সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্রæত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল ও পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে যানা যায়, মেরিন ড্রাইভ হয়ে টেকনাফ টু কক্সবাজার, কক্সবাজার টু টেকনাফ জৈনক বাহারের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট  প্রাথমিত ভাবে দোয়েল কার সার্ভিস এর নামে অবৈধভাবে একটি লাইন চালু করা হয়েছিলো। তা পরবর্তীতে বিলুপ্ত করে বর্তমানে নতুন নাম “জীপট্যুরিস্ট কার সার্ভিস” নাম দিয়ে সংগঠন তৈরি করে চালানো হচ্ছে চাঁদাবাজি। পর্যটন জেলা কক্সবাজারের অন্যতম আকর্ষণ সেনা তত্ত¡াবধানে নির্মিত মেরিনড্রাইভ সড়ক। মাদকের গোড়াউন সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের সাথে সড়কটি কক্সবাজার শহরের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ সৃষ্টি করেছে। যানজট মুক্ত আরামদায়ক যাতায়াতের জন্য যে কেউ এই সড়কটি ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু স¤প্রতি বেড়েছে যানবাহন, যাতায়াত এবং শতাধিক গাড়ির রহস্যজনক বিচরণ। এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের কিছু রাজনৈতিক পাতি নেতার মাধ্যমে সদ্য বিদায়ী কক্সবাজারের এসপি ও এসপি ট্রাফিক বাবুল চন্দ্র বনিক এর কাছে বহু বার র্ধণ্য দিয়েছিলো এ সিন্ডিকেটটি। কিন্তু ঐ স্থানে কোন বাস স্ট্যান্ড ও মেরিন ড্র্াইভে এ গাড়ির কোন অনুমতি দেয়নি পুলিশ ও জেলা প্রশাসন। বরং ওই সময়ে তখন প্রতিদিন এ অবৈধ গাড়িগুলো ধরে ধরে মামলাও দিয়েছিলো। কিন্তু হঠাৎ একযোগে কক্সবাজারে পুলিশের বদলিজনিত কারণে এবং পুলিশের নতুন্বত্বের সুযোগা নিয়ে সিন্ডিকেট টি পুরো ডলফিন চত্ত¡রের দু’পাশের সড়ক দখল করে গড়ে তুলেছে একাধিক অবৈধ বাস স্ট্যান্ড। যেখান থেকে প্রতিমাসে লাইন খরচ বাবদ হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।

স্থানীয় সুত্রে যানা যায়, প্রায় অর্ধযুগ ধরে এ স্ট্যান্ড থেকে যদিও বা শুধু মাত্র সিএনজি  মেরিনড্রইভ টু টেকনাফ যাতায়তের অনুমতি রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সেখানে একাধিক সিন্ডিকেটের অধীনে প্রতিদিন ১২০টি কার-নোহা সার্ভিস হিউম্যান হলার হিসেবে চালু রাখা হয়েছে। যদিও এসব গাড়ির বেশির ভাগই এম্বুলেন্স হিসেবেই অনুমোদন নেওয়া হয়েছিলো বলে জানা যায়। কিন্তু এসব গাড়ি ব্যবহার হচ্ছে সরাসরি যাত্রী পরিবহন ও অন্যান্য অবৈধ পন্য আনা নেওয়ার কাজে।  ফলে পর্যটকদের অন্যতম দর্শনীয় এ স্বপ্নের মেরিনড্রাইভ সড়কটি অবৈধ গাড়ির দৌরাতেœ যেমন সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, পাশাপাশি বেড়েছে যানজট। অভিযোগ রয়েছে- এসব গাড়িতে টেকনাফ থেকে নিরাপদে পাচার হচ্ছে ইয়াবার চালানও।

স্থানীয় বাসমালিক রমিজ, রহিম, ফারুক ও আরকান মালিক সমিতির প্রচার সম্পাদক হাবিব ও ড্রাইভার ফরিদ, সুলতান ও সিএনজি চালকসহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরো অসংখ্য সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি জানান উক্ত সার্ভিস এর সভাপতির নাম ব্যবহার করে জৈনক বাহার একশ্রেণির পরিবহন শ্রমিক, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, সরকারি দলের আশীর্বাদপুষ্টদের সমন্বয় করে গড়ে তুলেছে চাঁদাবাজ চক্র। তাদের কাছে অন্যন্য যানবাহন চালক, মালিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই জিম্মি হয়ে পড়েছে। এ সিন্ডিকেট প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ চাঁদাবাজি চালাচ্ছে। এ অবৈধ স্ট্যান্ড হলেও প্রতিটি গাড়ি থেকে লাইন খরচ বাবদ ৪শ টাকা করে তাদের চাঁদা দিতে হয় । এ ছাড়া এ  রুটে গাড়ি অন্তর্ভুক্ত করতে শুরুতেই প্রতিটি গাড়ির মালিককে গুণতে হয় অতিরিক্ত আরও ২০ হাজার টাকা। তাছাড়া দুর্ঘটনাসহ অন্যান্য ঝুট-ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে চাহিদা মাফিক মোটা অঙ্কের টাকা তুলে দিতে বাহারের হাতে। এছাড়াও তার মধ্যে রাস্তায় গাড়ি নামলেই দৈনিক চাঁদা, পুলিশের বখরা, মাস্তান ভাতা মিলিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা পরিশোধ করতে হয়। এছাড়া দিনরাত চাঁদা আদায়ের কাজটি করে থাকে ‘লাঠি বাহিনী’, ‘যানজট বাহিনী’ ও ‘লাইন বাহিনী’ও।

জানা গেছে, গাড়ি প্রতি ৪শ’ টাকা করে চাঁদা আদায় করে থাকে গুপ্ত ওই সিন্ডিকেট। যার মধ্যে ২শ’ টাকা নেওয়া হয় কক্সবাজার ছেড়ে যাওয়া প্রাক্কালে এবং বাকী ২শ’ টাকা নেওয়া হয় টেকনাফ ছেড়ে আসার প্রাক্কালে। চাঁদা আদায়ের এই দৃশ্য কলাতলী মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা আলট্রো কার ও অন্যান্যগাড়িগুলোর দিকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলেই যে কেউ দেখতে পাবেন। এটা অনেকটাই প্রকাশ্যে। উক্ত কথিত শ্রমিক সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে এই চাঁদা উত্তোলন করা হলেও আদায়কৃত টাকার বিপরীতে দেওয়া হয়না কোনো রশিদ কিংবা অর্থ লেনদেনের কোনো কাগুজে প্রমাণ। 

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়- প্রতিটি গাড়িতে অনধিক ৪জন যাত্রী বহন করা যায়। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে প্রতিজন যাত্রীর নিকট হতে ভাড়া হিসেবে নেওয়া হয়- ৩শ টাকা। এভাবে প্রতি যাত্রায় ১২শ’ টাকা তাদের আয় হয়। দুরত্ব হিসেবে গাড়িগুলো দৈনিক ২বারের বেশি যাতায়াত করা সম্ভবও নয়। এভাবে সর্বোচ্চ আয় হয় ২৪শ’ টাকা। অন্যদিকে খরচ দেখা যাচ্ছে- লাইন ভাড়া- ৪শটাকা। তার সাথে ড্রাইভারের বেতন- ৬শ’ টাকা। আবার প্রতি ট্রিপে জ্বালানি খরচ হয় কমপক্ষে ৪শ’টাকা। এভাবে সব মিলিয়ে খরচ দাঁড়ায় ১৮শ’ টাকা। তাহলে উদ্বৃত্ত থাকে মাত্র ৬শ’টাকা। যা মাস শেষে দাঁড়ায় ১৮ হাজার টাকায়। অথচ গাড়িগুলোর মাসিক কিস্তিই পরিশোধ করতে হয় ২৫হাজার টাকা করে। তাহলে বাকী আরও ৭হাজার টাকা কীভাবে পরিশোধ করেন তারা- এমন প্রশ্ন এখন সচেতন মহলে। এই বাড়তি টাকার আয়ের উৎস কি?

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে- গাড়িগুলো তাদের খরচ তুলে আনতে ৩য় ট্রিপে রাতের বেলা টেকনাফের বিভিন্ন ইয়াবা অধ্যুষিত গ্রামে অবস্থান করে। সেখানে রাত কাটিয়ে সকালে নতুন ট্রিপ নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নতুন বিন্যাসের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে দুস্কৃতিকারীরা বেপরোয়া ভাবে পাচার করে যাচ্ছে মাদক তথা ইয়াবা। আর সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে বেছে নিয়েছে মেরিনড্রাইভ সড়ক। পাশাপাশি রিতীমতো হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনাও। 

এ ব্যাপারে লাইনের সাধারণ সম্পাদক পরিচয়ী জহিরের সাথে কথা হলে তিনি জানান- শ্রম অধিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিয়ে সংগঠন চালাচ্ছেন। এক্ষেত্রে সংগঠনের নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি এবং স্ট্যান্ড বসিয়ে সড়কের ফুটপাত দখল কতটুকু বৈধ জানতে চাইলে তিনি বলেন এবিষয়ে এখনও আইনী ঝামেলার শিকার হননি। তবে যখন আইনগত সমস্যা দেখা দিবে তখন সেভাবেই ম্যানেজ করে নিয়। 

এব্যাপারে অভিযুক্ত লাইনের সভাপতি পরিচয়ী বাহার মোল্লার বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু নাম্বার বন্ধ পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এব্যাপারে কক্সবাজারের ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন- জেলা পুলিশের নির্দেশে এসব অবৈধ বাস স্ট্যান্ড শীঘ্রই উচ্ছেদ করা হবে। এবং গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

এব্যাপারে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. হাসানুজ্জামান প্রতিবেদককে জানান, কক্সবাজারে কোনো অবৈধ যানবাহন চলতে দেওয়া যাবে না। রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরাতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সাথে আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও কলাতলীর ডলফিন মোড়ে যারা অবৈধ স্ট্যান্ড বসিয়ে এই সার্ভিস চালু করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]