প্রকাশ: রোববার, ১৫ নভেম্বর, ২০২০, ৪:৫১ পিএম আপডেট: ১৫.১১.২০২০ ৫:১১ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় সৌদি আরব এবং উপসাগরে তাদের অনুগত মিত্র দেশগুলোর জন্য দীর্ঘমেয়াদী কিছু পরিণতি অপেক্ষা করছে। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলের সঙ্গে আমেরিকার সহযোগিতার সম্পর্ক ১৯৪৫ সাল থেকে। ওঠানামা থাকলেও এ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে, কিন্তু তাতে পরিবর্তন আসন্ন এবং সেই পরিবর্তনের অনেক কিছুই উপসাগরীয় নেতাদের পছন্দ নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর গত সপ্তাহে বিবিসি-র নিরাপত্তা বিষয়ক সংবাদদাতা ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনারকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় হঠাৎ বলে ওঠেন লন্ডনে সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন বানদার। ‘আমার মনোযোগে যদি একটু আধটু ঘাটতি দেখেন, ক্ষমা করে দিবেন।’ বারবার মোবাইল ফোনের দিকে তাকাচ্ছিলেন মাঝ চল্লিশের সৌদি রাজপরিবারের প্রভাবশালী এই রাজপুত্র। এসময় বলেন, ‘উইসকনসিনের ফলাফলের দিকে চোখ রাখছি।’আট দিন আগের কথা এটি, যখন কেউই জানতেন না জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের ক্ষমতায় কে বসছেন। তারপর জো বাইডেনকে যখন বিজয়ী ঘোষণা করা হলো, রিয়াদে সৌদি নেতৃত্ব সাড়া দিতে বেশ সময় নিয়েছেন। অথচ চার বছর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন জিতেছিলেন অভিবাদন জানাতে মুহূর্ত দেরি করেননি তারা।বিবিসি-র ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার মনে করেন এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। কারণ সৌদি নেতৃত্ব বিশ্বের অত্যন্ত ক্ষমতাধর একজন বন্ধুকে হারিয়েছে। যিনি ছিলেন আরব বিশে^র বড় এক বন্ধু।
সৌদি রাজপরিবারের বড় একজন মিত্র এবং সমর্থক ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ২০১৭ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পর তার প্রথম আনুষ্ঠানিক বিদেশ সফর শুরু করেছিলেন তিনি সৌদি আরবকে দিয়ে। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান (এমবিএস) ট্রাম্পের ইহুদি জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।
২০১৮ সালে স্বেচ্ছা নির্বাসিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যাকান্ডে যখন সিআইএ-সহ পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যুবরাজ এমবিএস-কে সন্দেহ করে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তখন এ নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।প্রখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড সম্প্রতি প্রকাশিত তারা সাড়া জাগানো একটি বইতে লিখেছেন, তার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গলা উঁচিয়ে বলেছিলেন তিনি সৌদি যুবরাজকে রক্ষা করেছেন।জামাল খাসোগি হত্যাকান্ডের পর মার্কিন কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে ৮০০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছিলেন ট্রাম্প। ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের যুদ্ধ বন্ধে কংগ্রেসের এক প্রস্তাবে তিনি ভেটো দেন।ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনার বলছেন, বোঝাই যায় যে কেন তারপর যুবরাজ এমবিএস-এর লোকজন বলেছিল, ‘খাসোগি হত্যাকান্ড নিয়ে আর কোনও চিন্তা নেই। আমরা ব্যবস্থা করে ফেলেছি।’সুতরাং বলাই বাহুল্য যে সৌদি আরব, এবং সেই সঙ্গে কিছুটা হলেও সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন হোয়াইট হাউজে তাদের বড় একজন মিত্র হারাচ্ছে। তাতে যে সবকিছুই বদলে যাবে তা হয়তো নয়। তবে কোথাও কোথাও বর্তমান পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।