'জাস্টিস লেডির ভাস্কর্য সরিয়ে নেয়ার কারণেই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করার দুঃসাহস'
প্রকাশ: রোববার, ১৫ নভেম্বর, ২০২০, ৯:৫৯ এএম আপডেট: ১৫.১১.২০২০ ১০:১২ এএম | অনলাইন সংস্করণ
ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে সরকার ‘আশকারা’ দেওয়ায় তারা এখন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যও অপসারণের দাবি তোলার সাহস দেখাচ্ছে বলে প্রতিক্রিয়া এসেছে আওয়ামী লীগেরই জোটসঙ্গী দলের কাছ থেকে।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মামুনুল হক ওই দাবি তোলার পর আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি।
তবে দলটির যুগ্ম সাধারণ সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম ইসলামী দলটির ওই নেতার বক্তব্যকে ‘ধৃষ্টতাপূর্ণ’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, এর জবাব জনগণই দেবে।
রাজধানীর ধোলাইরপাড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে সে কাজ অবিলম্বে বন্ধের দাবি তুলেছেন মামুনুল হক।
শুক্রবার ঢাকার বিএমএ মিলনায়তনে খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগরীর এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “ধোলাইখালে (ধোলাইরপাড়ে) বঙ্গবন্ধুর মূর্তি স্থাপন বঙ্গবন্ধুর আত্মার সঙ্গে গাদ্দারি করার শামিল। যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন করে তারা বঙ্গবন্ধুর সু-সন্তান হতে পারে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান একজন মুসলিম হিসেবে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তার মূর্তি তৈরি করে রাস্তার মোড়ে মোড়ে স্থাপন, এটা বঙ্গবন্ধুর আত্মার সঙ্গে বেইমানি করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বারবার দেখতে পাচ্ছি, এই মসজিদের শহরের গৌরবময় পরিচয়কে মুছে দিয়ে এটাকে মূর্তির শহরে পরিণত করার অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। এ দেশের তৌহিদী জনতা আবার শাপলা চত্বরে যাবে।”
ভাস্কর্যকে “অনৈসলামিক’ আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন সময় তার বিরোধিতায় নেমেছে ইসলামী দলগুলো। কয়েক বছর আগে হেফাজতে ইসলামের দাবির মুখে সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে জাস্টিস লেডির ভাস্কর্যও সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
সেই বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের জোট সঙ্গী দল জাসদ এক বিবৃতিতে বলেছে, “সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্য স্থানান্তরিত করার মধ্য দিয়ে ধর্ম ব্যবসায়ীদের আশকারা দেওয়ার ফলেই আজ এই অপশক্তি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করার দুঃসাহস দেখাতে পারছে।”
এই ধরনের দলগুলোকে আর এক চুলও ছাড় না দিতে আওয়ামী লীগের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার।
তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, “আর এক চুল ছাড় না দিয়ে পাকিস্তানপন্থি ধর্ম ব্যবসায়ী, ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল, সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী জঙ্গিবাদী ভাস্কর্য বিরোধীদের কঠোরভাবে দমন করার জন্য সরকারের প্রতি এবং এই অপশক্তির বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সোচ্চার হবার আহ্বান জানাই।”
জাসদ বলছে, ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে অবস্থান আসলে বাংলাদেশ ও বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যের বিরুদ্ধেই অবস্থান এবং যারা এই দাবি তুলেছে, তারা স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চায়।
১৪ দলীয় জোট শরিক দল তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাউজভান্ডারীও খেলাফত নেতা মামুনুর হকের এই বক্তব্যের বিরোধিতা করছেন।
তিনি বলেন, “মানুনুল হকদের কথায় ভাস্কর্য করা বন্ধ থাকলে কদিন পরে বলবে, এই দেশে হিন্দু-বৌদ্ধসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও থাকতে পারবে না।”
মাজারভিত্তিক এই নেতা বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের স্মৃতি হিসেবে ভাস্কর্য থাকতেই পারে। পৃথিবীর বহু ইসলামী রাষ্ট্রে এমন আছে। এখানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য হলে ইমান আমল যাওয়ার কিছু নাই।”
আওয়ামী লীগ সমর্থক সংগঠন ওলামী লীগের সদস্য সচিব মুফতি মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী খেলাফত মজলিস নেতার জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তিনি ভাস্কর্য ও মূর্তিকে আলাদা হিসেবে দেখার কথা জানিয়ে বলেছেন, “ভাস্কর্য হচ্ছে একটি শিল্প, যা নগরের সৌন্দর্য বর্ধন করে। আর মূর্তি বানানো হয় ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে উপাসনা করার জন্য। ভাস্কর্য আর মূর্তি এক নয়। যারা ভাস্কর্যকে মূর্তি বলে তাদের জ্ঞানের স্বল্পতা ও দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে সমস্যা রয়েছে।”
তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, “অশ্লীলতার প্রতিচ্ছবি যদি কোনো ভাস্কর্যে প্রকাশ পায়, তা নিঃসন্দেহে ধর্ম ও সভ্যতাবিরোধী বলে বিবেচিত হওয়া সমীচীন।”
খেলাফত নেতার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছিম বলেন, “বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে এই বক্তব্য ধৃষ্টতাপূর্ণ। জনগণই এর জবাব দেবে।”
এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “তাদের রাজনীতি নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। ধর্মকে ব্যবহার করে যারা রাজনীতি করতে চায়, তাদেরকে বাংলাদেশের জনগণ কখনোই মেনে নেয়নি, আর নেবেও না।” সূত্র: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর