#দেশের স্বাভাবিক অবস্থাকে অস্থিতিশীল করার জন্য এই সহিংসতা সংগঠিত হয়েছে: ড. মীজানুর রহমান।
#আগুন সন্ত্রাস, বিএনপির ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া: ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন।
#দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যই বিএনপি-জামায়াত এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করেছে: জয়নাল হক।
প্রকাশ: শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২০, ১০:২৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ একটি অস্থির সময় পার করছে। সারাবিশ্বে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের আস্থার প্রতীক, ভরসার সর্বশেষ আশ্রয়স্থল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে করোনা মহামারির ধাক্কা সামলিয়ে একটি সুন্দর সময় যখন চলছে, মানুষের জীবন যখন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে ঠিক এমন একটি সময় আবার বিএনপি-জামায়াত জোট আগুন-সন্ত্রাসের খেলায় মেতে উঠেছে। বাসে অগ্নিসংযোগ ও বিভিন্ন সময়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করা বিএনপির ষড়যন্ত্রেরই অংশ। এখন সময় হয়েছে জনগণকে সাথে নিয়ে বিএনপি-জামায়াতকে রাজনৈতিকভাবে চিরতরে বিদায় করতে হবে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৫৮ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। শনিবার (১৪ নভেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া, জার্মান আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও জার্মান আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল হক। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ধন্যবাদ সঞ্চালক এবং ভোরের পাতাকে। ভোরের পাতা সংলাপের আজ ১৫৮ পর্ব। এটা একটা বিরাট কৃতিত্ব যে এটা এতো দিন ধরে ধরে রেখেছে ভোরের পাতা কর্তৃপক্ষ। একটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছিল দেশে। প্যানডামিক অবস্থার মধ্যেও দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও খুব ভালো আছে। ইউরোপ আমেরিকার মতো দেশে যে বড় অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার থেকে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা খুব সহনীয় পর্যায়ে আছে। কারণ আমাদের যে অর্থনীতি আছে এটা নিত্য প্রয়োজনীয় অর্থনীতির মধ্যে পরে। ইউরোপ-আমেরিকার অর্থনীতি হলো বিলাসী অর্থনীতি, এই জন্যই আমাদের দেশের সাধারণ অর্থনীতিতে এই মহামারি করোনার প্রভাব তেমন একটা পড়েনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষতায় এই করোনাকালীন সময়েও আমাদের রেমিটেন্স প্রবাহ বেড়েছে, কৃষিতে ভালো করছি আমরা। এই একটা স্বাভাবিক অবস্থা চলছে দেশে এর কারণে আমরা বিশ্বে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উভয় সূচকে এগিয়ে গিয়েছিলাম আমরা। এই রকম একটা রাজনৈতিকভাবে শান্ত পরিবেশের কারণেই কিন্তু এই মিরাকেলটি সম্ভব হয়েছে। এই স্থিতিশীল অবস্থার জন্যই এই মিরাকেলটি আমরা অর্জন করতে পেরেছি। আর এটাকে অস্থিতিশীল করার জন্য অত্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থায় গত ১২ তারিখে একই সময়ে ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে একটা সিকুয়েন্স করে যে নাশকতা চালানো হলো তা খুবই আশাহত করে দেয় আমাদেরকে। ২০১৫ সালের পর থেকে রাজপথ জ্বালাও-পোড়াও থেকে মুক্ত ছিল। সে সময় বিএনপির অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ সারাদেশে অনেক বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। অনেক নারী-পুরুষ ও শিশু হতাহত হয়েছিলেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক বিতণ্ডা হলেও কারা ওই সব নাশকতা ঘটিয়েছিল, খুব কম ক্ষেত্রেই তা উদ্ঘাটিত হয়েছে। যেভাবে বাংলাদেশে ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা করা হলো ঠিক একয় কায়দায় গত ১২ তারিখের ঘটনাগুলো সম্পাদন করা হয়েছিল। একটা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত বাহিনী দ্বারা এই কাজটি করা হয়েছিল। এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে এটার জন্য আমরা যাকেই দায়ী করিনা কেন, এটা কিন্তু খুঁজে বের করার দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের সরকারের। আমাদের অনেক গোয়েন্দা সংস্থা আছে। তারা কেন এটা আগে জানতে পারলো না, তারা কেন এটা প্রতিরোধ করতে পারলো না? এখন যে মামলা গুলো হচ্ছে এটা শুধুমাত্র দায় সারা ভাব নিয়ে করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবারের বাস পোড়ানোর ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু, সৎ ও গভীর তদন্ত প্রয়োজন। এই গুলো আমরা ২০১৪-২০১৫ সালে দেখেছি, যখন বিভিন্ন স্থানে এই রকম অগ্নি সন্ত্রাস করে বাসে হামলা করা হয়েছিল তখন, সেখানে দুই হাজার, পাঁচ হাজার লোকের নামে একটা-দুইটা করে মামলা দিয়ে দেওয়া হতো। এই ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, বাসের মধ্যে যারা যাত্রী বেশে ঢুকেছিল তারাই এই হামলা গুলো করে সটকে পড়েছে। রাজনৈতিক মাঠে এই আগুন নিয়ে খেলা করার যে অপসংস্কৃতি এটা এখনি অঙ্কুরে বিনষ্ট করে আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে।
অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া কাঞ্চন বলেন, আগুন সন্ত্রাস ও বাসে আগুন সংযোগ করে দেশকে অস্থিতিশীল করা এটা বিএনপির ষড়যন্ত্রের একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আগুন সন্ত্রাস নিয়ে কথা বলতে হলে আমাদের প্রথমেই কথা বলতে হবে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট, ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট এবং ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে প্রায় ১৫৫ জন মানুষকে এই আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। এইগুলো সবই একই সূত্রে গাথা। এবং এটা সম্পূর্ণ জামায়াত-বিএনপি নেতৃত্বে হয়েছে। আজকে এই যে ৯টি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হলো এটা আমি মনে করি জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে খাটো করার জন্য জামায়াত-বিএনপি এগুলো আবার শুরু করেছে। আজকে পাঁচ বছর পর ফের দেশে আগুন সন্ত্রাসের রাজনীতি শুরু হয়েছ। ২০১৮ সালে নমিনেশনকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টনে এবং বনানীতে খালেদা জিয়ার বাসার সামনে যে আগুন সন্ত্রাস করেছিল তাতেও কিন্তু তারা জানান দিয়েছিল তারা নিজেদের মধ্যেই একটি কলহ সৃষ্টি করে দেশে অরাজকতা করতে চেয়েছিল। এমনকি বিএনপি মহাসচিবের বাসায় হামলা ভাঙচুর করা হয়েছিল। বিএনপির প্রার্থীর নিশ্চিত পরাজয় জেনে নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে এবং জনগণের মধ্যে ভীতিসঞ্চার করতে পরিকল্পিতভাবে বাসে আগুন সন্ত্রাস চালিয়েছে। বিএনপি উপনির্বাচনগুলোতে নিশ্চিত পরাজয় জেনেও শুধু নির্বাচন পদ্ধতি ও নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করতেই অংশগ্রহণ করে থাকে। ঢাকঢোল পিটিয়ে নির্বাচনে নেমেই ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার পরপরই জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এ জন্য এখন জনগণ তো নয়ই কর্মী-সমর্থকদেরও তাদের প্রতি ন্যূনতম আস্থা নেই। নইলে বিএনপির মতো একটি দলের প্রার্থী একটি কেন্দ্রে এক ভোট পাবে না এমনটি হতে পারে না। আজকে দেশে সম্পূর্ণ একটি স্থিতিশীল অবস্থাকে একটা অস্থিতিশীল করার পায়তারা এটা উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা এর আগেও করেছিল। জনগণ যখন কোনভাবেই তাদের সাড়া দিচ্ছে না, তখন এই আগুন সন্ত্রাস করে তারা নিজেদেরকে দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের আগুন-সন্ত্রাসের কথা দেশবাসী ভুলে যায়নি। কীভাবে নিরপরাধ মানুষদের পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য বিএনপি-জামায়াত চক্র জ্বালাও-পোড়া রাজনীতি শুরু করে। সে সময় ৪১৯টি ঘটনায় ১৫ জন পুলিশ সদস্যসহ নিহত হয় ৪৯২ জন, আহত আড়াই হাজারের কাছাকাছি। এক-একটি যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথেই শুরু হয়ে যেত হত্যা, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ। দেশের বাইরে থেকেই এই ষড়যন্ত্রের নির্দেশ আসছে প্রতিবারই।
জয়নাল হক বলেন, আমি ধন্য এইরকম গুণীজনের সাথে আজ ভোরের পাতার লাইভ সংলাপে অংশগ্রহণ করতে পেরেছি। আজকের এই দিনে আমি আমার বক্তব্যের শুরুতে গভীর শ্রদ্ধা জানায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যে মহামানবের অবদানে আজ আমারা লাল সবুজের পতাকা নিয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করা দাড়িয়ে আছি, গভীর শ্রদ্ধা সাথে স্মরণ করছি ১৫ই আগস্টের সেই কালো রাতে তার পরিবারের যেসব সদস্যরা শাহাদাৎ বরণ করেছিলেন। গভীরভাবে স্মরণ করি জাতীয় ৪ নেতাকে। গভীর শ্রদ্ধা সাথে স্মরণ করছি ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ ইজ্জত হারা মা বোনদের। আমরা যারা বিদেশে থাকি তারা দেশের খবর পাই আপনাদের মাধ্যমেই। আমারা যেটা বুঝতে পারি দেশে এই যে আগুন সন্ত্রাস আবার শুরু হয়েছে তা বর্তমানে যে করোনা মহামারি চলছে তার মধ্যে দেশের সরকার যে উন্নয়ন কার্যাবলীতে সংগঠন বা মনোনিবেশ করছে তার সুনাম বিনষ্ট করার জন্যই হচ্ছে। হত্যা-ক্যু ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়েই বিএনপির জন্ম। তাই তারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কখনো বিশ্বাস করে না। বিএনপির আন্দোলন মানেই জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম করে জনগণের মধ্যে ভীতিসঞ্চার করে তাদের জিম্মি করে রাখা। এ জন্যই তারা জনগণ থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। এখন কার্যত জামায়াতের বি-টিমে পরিণত হয়েছে। ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত যে নারকীয় সন্ত্রাস চালিয়েছে তারই ধারাবাহিকতা তারা বজায় রেখেছে। বিএনপি যে একটি সন্ত্রাসী দল সেটা যে শুধু আমরা যে বলছি তা কিন্তু নয়। কানাডার ফেডারেল আদালত বিএনপির একজন নেতার রাজনৈতিক আশ্রয় মামলার রায়ে বলেছে যে, বিএনপি প্রকৃতপক্ষে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। বিএনপি হচ্ছে এমন একটি দল যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূরণে সশস্ত্র সংগ্রাম বা সহিংসতার আশ্রয় নেয়। হাতবোমা, পিস্তল ও অস্ত্র ব্যবহার করে নেতৃস্থানীয় এবং জনগণের ওপর হামলা চালায়। এমনকি অগ্নিসংযোগের মতোও ঘটনা ঘটায়। অতীতে দেশে অগ্নি সন্ত্রাস ছিল রাজনীতি এখন অগ্নি সন্ত্রাস হচ্ছে হিংসানীতি কারণে। তারা বর্তমান করোনাকালীন সময়ে শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে সহ্য করতে পারছে না বিধায় আবার সেই তাণ্ডব শুরু করেছে।