সিলেটের বিমানবন্দর থানার এয়ারপোর্ট গেইট এলাকায় বৈশাখী কমিউনিটি সেন্টারে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে হিজড়া ও বরযাত্রীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এতে কয়েক জন হিজড়া আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) দুপুর ২টায় বরযাত্রী যখন সেন্টারে আসে তখন হিজড়ারা তাদের গাড়ি আটকিয়ে চাঁদা দাবি করে। বরযাত্রী পক্ষ থেকে কিছু টাকা দিলে তারা অসন্তুষ্ট হয়ে গালি গালি শুরু করে। এতে বরযাত্রীর পক্ষ ও হিজড়াদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় হিজড়াদের দল রাস্তায় এসে গাড়ি ভাঙচুর করতে আসলে স্থানীয় জনগন ও মুরব্বিদের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বত্র হিজড়াদের চাঁদাবাজির যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ বিয়ের গাড়ি ও সাধারণ মানুষ। তাদের চাঁদাবাজির কারণে অনেক জায়গায়ই লাঞ্চিত হচ্ছে অনেক শত শত ভদ্র পরিবার। লোক লজ্জার ভয়ে অনেক সময় চুপ করে নিরবে সয়ে যান অনেকে। আবার অনেকে প্রতিবাদও করেন। প্রতিবাদকারীদের সাথে হিজরাদের আচরণ হয়ে যায় একেবারেই অশালিন।
বিশেষ করে বিয়েসহ যে কোন অনুষ্ঠান হলেই সে স্থানে তাদের আগমন হয়ে যায় এক প্রকার ক্যাডারের মত। এ সব অনুষ্ঠানে হাজার টাকার নিচে দিলেই শুরু হয় অত্যাচার। বিয়ের গাড়িতে রাস্তায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন হিজড়াদের চাঁদাবাজ দল। বরের গাড়ি দেখা মাত্র শুরু করেন তাদের অশ্লীল কান্ড। এতে গাড়ি রাস্তায় এবং বিয়ের সেন্টার থেকে দফায় দফায় বড় অংকের চাঁদা আদায় করেন হিজড়া নামধারী সন্ত্রাসীরা। মান-সম্মানের ভয়ে কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায়নি।
জানা যায়, সাধারণ মানুষের সহানুভূতি, সহযোগিতা ও সহায়তার ওপর নির্ভর করেই চলে হিজড়া সম্প্রদায়ের জীবনযাপন। তবে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে দোকানিদের ওপর হামলে পড়া, বিয়েসহ সামাজিক অনুষ্ঠান, বাসাবাড়িতে নবজাতকের আগমনের খবরে দলবলে হাজির হয়ে পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায়, যৌন প্রতারণা, যে কোন বিনোদনস্থানে কাউকে জিম্মি করে অবাঞ্ছিত দৃশ্যের অবতারণা করে সর্বস্ব লোপাট করে। এমন বহু অভিযোগ হিজড়াদের কয়েকটি দলের বিরুদ্ধে রয়েছে। হিজড়ারা বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নামে বিভক্ত হয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি করছেন। গেল কয়েক মাস ধরে তাদের মাত্রাতিরিক্ত অসদাচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন নগরবাসী।
গত রোববার সিলেট নগরী থেকে বিশ্বনাথ উপজেলার আনিকা কমিউনিটি সেন্টারে যাতায়াতের সময় বরের গাড়ি আটক করে বড় অংকের টাকা আদায় করেন হিজড়ারা। এই হিজড়াদের প্রধান হলেন সিলেটের সুন্দরী হিজড়া। কিন্তু বিশ^নাথের মালেকা ও সালমা সুন্দরীর কথা রাখেনি। উল্টো বরের গাড়ির উপর আক্রমন করে তাদের কাছ থেকে বড় অংকের টাকা নিয়ে যায়।
এছাড়া সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সামনে, রাস্তার পাশে দোকানে, ফুটপাতের দোকানে জোড় করে তারা চাঁদাবাজি করছে। বাসাবাড়ি গিয়ে হিজড়ারা চাঁদা চাচ্ছেন, টাকা না দিলে হুমকিসহ নানা ধরনের অশ্লীল ভাষা ও অঙ্গভঙ্গি করে এক ধরনের অস্বস্থিকর চাপ সৃষ্টি করে টাকা-পয়সা দিতে বাধ্য করছেন তারা। স্কুল-কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের বেগে ধরে টানাটানি শুরু করে। বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয় হিজড়াদের।
সিলেটের পর্যটন কেন্দ্র বিছনাকান্দি, জাফলং ও সাদা পাথর এলাকায় হিজড়াদের একটি শক্তি শালী চক্র পর্যটকদের হয়রানী করে বড় অংকের টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়। কেউ ভয়ে এদের বিরুদ্ধে কথা বলতে পরেননি। সম্মানের ভয়ে হিজড়াদের চাহিদা পূরণ করেন পর্যটকরা।
এরা সবাই পুরুষ তাদের গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। কিন্তু এরা সিলেটে হিজড়া সেজে মানুষকে ধোকা দিয়ে হাতিয়ে হাজার হাজার টাকা। এই হিজড়া নামধারী চাঁদাবাজদের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আশু হস্থক্ষেপ কামনা করছেন সিলেটের সচেতন মহল।