ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪৩ পিএম আপডেট: ১৪.১১.২০২০ ১:০৮ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
ফের রাজধানীতে পুড়ল ১০টি বাস। গত বৃহস্পতিবার আগুন সন্ত্রাসে এই বাস পোড়ানো হলো। বাসে অগ্নিসংযোগকারীরা যাত্রীবেশে বাসে ওঠে এবং কৌশলে বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাস পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত অবশ্য বাসে আগুন পোড়ানোর ঘটনায় রাজধানীর ছয় থানায় ৯টি মামলা হয়েছে এবং ২৮ জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আবার এ বিষয়ে একটি ফোনালাপ প্রশাসনের কাছে এসেছে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে জানা গেছে। প্রশ্ন হলো ফের বাসে আগুন কেন? তাহলে কি ২০১৪-১৫ সালে দেশজুড়ে যে আগুন সন্ত্রাস চালানো হয়েছিল সেই সন্ত্রাসের কাছেই দেশের মানুষকে জিম্মি করার নীল নকশা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে? সে সময় যাত্রীবাহী বাস-ট্রেনে পেট্রল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। ফের কি তারই পুনরাবৃত্তি ঘটানোর অপচেষ্টা শুরুর পায়তারা করা হচ্ছে? আলামত দেখে ইঙ্গিত দেখে সেই ভয়াবহ দিনকে আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে? ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ঠেকিয়ে দেওয়ার লক্ষে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশব্যাপী আগুন সন্ত্রাসের জন্ম দেয়।
এসময় শত শত বাস যেমন পুড়িয়ে দেওয়া হয় তেমনি আগুনে পুড়িয়ে মারা হয় কয়েক’শ প্রাণকে। বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা বাস-ট্রেন পুড়িয়ে ক্ষান্ত হয়নি, তারা সরকারি অফিস পর্যন্ত পুড়াতে দ্বিধা করেনি। সে সময় ব্যাপকভাবে সরকারি সম্পত্তি বিনষ্ট করে আত্মতুষ্টি লাভ করলেও দেশের সরকারি সম্পত্তি নষ্ট হলো এবং বহু মানুষ মারা গেল, এ জন্যে তারা কোন অনুশোচনা করেনি বা অনুতপ্ত হয়নি। বরং এই দায় সরকারের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেছে। বলা যেতে পারে চোরের মার বড় গলার মত সেদিন তারা নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে মিত্যার আশ্রয় নিয়েছে। বিশ্বে এমন নজির আগে কেউ দেখেছে কি-না জানা যায় না। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সেটি করেই নিন্দা, ঘৃণা কুড়িয়েছে। বিশ্ববাসী এ ঘটনাকে নজিরবিহীন বলেছে। পেট্রল বোমা মেরে, আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে মানুষ হত্যা করে বিএনপি-জামায়াত জোট নিজেদের যে সর্বনাশ ডেকে আনলো, তার প্রায়শ্চিত এখনও তাদের করতে হচ্ছে। আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাবার যে পরিকল্পনা তারা করেছিল, তা মোটেই সাফল্যের মুখ দেখেনি। দেশের মানুষ আজও সেই আগুন সন্ত্রাস চালানোর দিনগুলোর কথা ভাবলে শিউরে ওঠে। ভয়ে কুচকে যায়।
গত বৃহস্পতিবারের বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা বার বার আমাদের ২০১৪-১৫ সালের আগুন সন্ত্রাস, পেট্রল বোমার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। এ কারণেই আমরা ভয়ে আছি। সেই ভয়াবহদিনগুলো যাতে কোনোভাবেই ফিরে না আসে, সে ব্যবস্থা আগেভাগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষের নিরাপত্তাবিধানে এখনই জোরাল পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনো ধরনের গাফলতি ঠিক হবে না।
জানা গেছে, ‘হঠাৎ করেই গত বৃহস্পতিবার রাজধানীতে ফিরেছে আগুন সন্ত্রাস। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সাত ঘণ্টায় মতিঝিল, পল্টন, শাহজাহানপুর, শাহবাগ, ভাটারা, বংশাল ও উত্তরা এলাকায় একে একে পুড়েছে ১০টি বাস। যাত্রীবেশে বাসে উঠে দুর্বৃত্তরা এসব আগুন দেয়। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।’ ১০টি বাস পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা থেকে মনে হচ্ছে, বিএনপি-জামায়াত এবার মাঠে নেমেছে। এতদিন হয়তো মনে করা হতো তারা আর ২০১৪-১৫ সালের মতো ঘটনায় নিজেদের জড়াবে না। কিন্তু এ ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করে তারা স্বরূপে ফিরে এলো। ফলে দেশের মানুষের নিরাপত্তায় আইনশৃক্সক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হাতগুটিয়ে বসে থাকলে হবে না, কারণ বিএনপি-জামায়াত বড়ো কোনো লক্ষ্য নিয়েই এবার মাঠে নেমেছে। সামনের দিনগুলোতে হয়তো তারা আরো বড়ো কোনো অঘটনা ঘটাবে।
সে জন্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সদাসতর্ক থাকা একান্তভাবে জরুরি। দেশে যে একটি স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। এটা কোনোভাবে দেশের অপশক্তির সহ্য হচ্ছে না। তারা বড়ো ধরনের অঘটন ঘটিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায়। ইতোমধ্যে এই অপশক্তি নানা ইস্যু তৈরি করে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। এবার তারা যাত্রীবাহী বাস পুড়িয়ে নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় তুলে ধরলো বলে মনে হচ্ছে না। আগামীতে তারা যে আরো এমন ঘটনা ঘটাতে পারে সেটাও অস্বাভাবিক নয়। পরিশেষে আমরা বলতে চাই, বাস পুড়ানো ঘটনায় যাদের আটক করা হয়েছে। তাদের সঠিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাস পুড়ানোর নেপথ্য কুশীলবদের নাম বের হয়ে আসবে বলে আমরা বিশ^াস করি। যেকোনোভাবেই হোক বাস পুড়ানোর নেপথ্য কুশীলবদের আইনের আওতায় এনে দেশকে নিরাপদ করে তুলার কোন বিকল্প জাতির সামনে নেই।