জীবন-সুফিলে রঙিন বাংলাদেশ
প্রকাশ: শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২০, ১২:৪৩ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
ক্রীড়া প্রতিবেদক
মধুর প্রতিশোধ নিল বাংলাদেশ। ২০১৩ ও ২০১৮ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নেপালের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। সর্বশেষ এসএ গেমসে অনূর্ধ্ব-২৩ দলের প্রতিযোগিতায়ও তাদের কাছে ১-০ গোলে হারে দল। হারের বৃত্ত থেকে অবশেষে বেরিয়ে এলো জেমি ডের দল। ফিফার ১৭০ র্যাঙ্কিংয়ের দল নেপালকে গতকাল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ২-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। বলা যেতে পারে হেমন্তের পড়ন্ত বিকেল রঙিন করে বাংলাদেশকে আনন্দে ভাসাল জীবন-সুফিল। দীর্ঘ বিরতির পর গতকালই প্রথম মাঠে ফেরে ফুটবল। ভিন্ন ভাবে বলা যেতে পারে দেশের মাটিতে ফিরল আন্তর্জাতিক ফুটবল। ফিরেই উজ্জীবিত ফুটবল উপহার দিল বাংলাদেশ। আক্রমণাত্মক ফুটবলের পসরা সাজিয়ে তারা নেপালের রক্ষণব্যুহ তছনছ করে দেয়। দলকে লিড এনে দেন নাবীব নেওয়াজ জীবন। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন বদলি নামা মাহবুবুর রহমান সুফিল। নেপালকে হারিয়ে বাংলাদেশ রাঙিয়ে রাখল ফেরার দিনটি।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে গতকাল প্রথম প্রীতি ম্যাচে নেপালের মুখোমুখী হয় জেমি ডের শিষ্যরা। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে হওয়া দুটি প্রীতি ম্যাচের সিরিজে দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচে আগামী মঙ্গলবার। করোনাভাইরাসের থাবায় গত মার্চ থেকে বন্ধ ছিল বাংলাদেশের ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক ফুটবল। মাঝে মেয়েদের ফুটবল শুরু হলেও ছেলেদের খেলা এই প্রথম মাঠে গড়াল। দর্শকও ফিরল গ্যালারিতে; যদিও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে দূরত্ব মেনে বসার পরোয়া করেনি তারা। মাঠে ফেরার আনন্দে মাতোয়ারা ছিল সবাই। জাতীয় দলের হয়ে এই ম্যাচে অভিষেক হয় গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো ও ফরোয়ার্ড সুমন রেজার। দুর্দান্তভাবে ক্যারিয়ারের শুরু।
প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেয় বাংলাদেশ। নবম মিনিটেই গোলের সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু বিশ্বনাথ ঘোষের লম্বা থ্রোয়ের পর ডি-বক্সের জটলার মধ্যে বল পেয়েও মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন তপু বর্মন। তবে অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হয়নি। সমর্থকদের আনন্দে ভাসিয়ে দশম মিনিটে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। নাবীব নেওয়াজ জীবনের পাস ধরে ডান দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা সাদ উদ্দিন দুই ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে বল বাড়ান গোলমুখে। নিখুঁত সøাইডে জাল খুঁজে নেন জীবন। ২১তম মিনিটে ব্যবধান হতে পারত দ্বিগুণ। জীবনের ক্রসে দূরের পোস্টে থাকা মোহাম্মদ ইব্রাহিমের হেড ডিফেন্ডারের গায়ে লাগে। একটু পর বিশ্বনাথের থ্রোয়ে তপুর হেড পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। ২৭তম মিনিটে চট্টগ্রাম আবাহনীর মানিক মোল্লার ২৫ গজ দূর থেকে নেওয়া শট গোলরক্ষকের গ্লাভস ছুঁয়ে ক্রসবার ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। খেলার শুরু থেকেই নেপালকে চাপে রাখে বাংলাদেশ। ৩২তম মিনিটে সাদের ক্রসে জীবনের ভলি ক্রসবারের ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। নেপালের একমাত্র আক্রমণ খেলার ৩৯ মিনিটে। এসময় নেপালের অঞ্জন বিসটার দুর্বল শট সহজেই গ্লাভসে নেন জিকো। বিরতির আগে গোলের উদ্দেশে এটাই ছিল নেপালের একমাত্র শট! ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। এরপর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই কোচ জেমি ডে মানিকের বদলি নামান ফরোয়ার্ড সোহেল রানাকে। তারপর জীবন, জামালকে তুলে বিপলু আহমেদ ও মাহবুবুর রহমান সুফিলকে নামান বাংলাদেশ কোচ। কিন্তু দলের আক্রমণে প্রথমার্ধের ঝাঁজ ছিল না মোটেও। তবে রিয়াদুল হাসান-বিশ্বনাথ-রহমত মিয়া-তপুতে সাজানো রক্ষণ ছিল জমাট। ৭৫তম মিনিটে তপুর ফ্রি-কিক গোলরক্ষক কিরণ কুমার লাবু ফিস্ট করার পর বল ক্রসবারের একটু ওপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। এরপর থ্রো ইনে অনস্তা তামাংয়ের হেড আঙুলের টোকায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে বের করে দেন জিকো। প্রতি-আক্রমণে সুফিলের দারুণ গোলে ৮০তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। সোহেলের বাড়ানো বল ধরে মাঝ মাঠের একটু ওপর থেকে আক্রমণে ওঠা সুফিল বাঁ দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে ঠা-া মাথায় দূরের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন। তবে প্রাপ্ত সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে ব্যবধান আরো বাড়তে পারত। এরপর তপুকে তুলে নিয়ে ইয়াসিন খানকে নামান বাংলাদেশ কোচ। বাকিটা সময় নির্বিঘেœ কাটিয়ে দারুণ জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ দল। সর্বশেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ গত ২৩ জানুয়ারি; বুরুন্ডির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সেমি-ফাইনালে। সেবার বুরুন্ডির বিপক্ষে ৩-০ গোলে হারে বাংলাদেশ।