#বিএনপি ও জামায়াত সবসময় অগ্নি সন্ত্রাসের প্যাটার্নে আন্দোলন করে: তারানা হালিম।
#এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিকল্পিত সংগঠন ছাড়া সম্ভব না: মেজর জেনারেল (অব:) মোহাম্মদ আলী শিকদার।
#জিয়ার অসমাপ্ত সন্ত্রাসী কার্যাবলী এখন তারেক করে যাচ্ছে: খায়রুল হাসান জুয়েল।
#বিদেশে থেকে তারেকের নেতৃত্বে দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা হচ্ছে: মান্নান মাদবার।
বাসে অগ্নিসংযোগ ও বিভিন্ন সময়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করা বিএনপির ষড়যন্ত্রেরই অংশ। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। দক্ষতার সঙ্গে করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দেশকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে গতকাল (১২ নভেম্বর) বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। দেশকে আবারো পঁচাত্তরের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিয়ে যেতে দেশের মাটিতে গভীর ষড়যন্ত্র করছে বিএনপি। বার বার জাতির জনকের পরিবার ও দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হয় তাই আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ১৫৭ তম পর্বে এসব কথা বলেন আলোচকরা। শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সামরিক গবেষক মেজর জেনারেল (অব:) মোহাম্মদ আলী শিকদার, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, ইতালি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মান্নান মাদবার (মজ্ঞু)। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
তারানা হালিম বলেন, আমি প্রথমেই দেশ ও বিদেশে থেকে যারা আজকে আমাদের এই লাইভ সংলাপটি দেখছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি ১৯৯১ সালে যুবলীগের মহিলা সম্পাদিকা ছিলাম; সে রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা থেকে আজকে ২০২০ সালে পর্যন্ত আমি খুব ভালোভাবেই বিএনপি ও জামায়াতকে দেখেছি। নিজের দলকে ভালোবেসে, দলের চোখ দিয়েও দেখেছি এবং জনগণের চোখ দিয়েও তাদের কর্মকাণ্ড দেখেছি। বিএনপি ও জামায়াতের সবসময় আন্দোলন করার একটা প্যাটার্ন আছে। এবং সেই প্যাটার্নটি হচ্ছে ষড়যন্ত্র, সেই প্যাটার্নটি হচ্ছে বোমাবাজি, সেই প্যাটার্নটি হচ্ছে জঙ্গি তৎপরতা, সেই প্যাটার্নটি হচ্ছে অগ্নি সন্ত্রাস। অনেক সময় দেখেছি, অনেক দলই সুসংগঠিত আন্দোলন করে কিন্তু বিএনপি ও জামায়াত কখনোই এই সুসংগঠিত আন্দোলন করেনি কারণ তারা এটা করার ক্ষমতা আরও আগেই হারিয়ে ফেলেছে। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা, সেই হত্যাকারীদের বিএনপি কর্তৃক পুরস্কৃত করা, আবার ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে একের পর এক গ্রেনেড হামলা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার চেষ্টার কারণে এখন বিএনপি ও আওয়ামী লীগ শত্রুতার অবস্থানে চলে গিয়েছে। শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে বেগম জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের পরিকল্পনায় ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট তাঁর সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা কোনদিন আর এই গ্রেনেড হামলার কথা ভুলতে পারবে না। হামলার পর জজ মিয়া নাটক করে সরকারি প্রচেষ্টায় বিচারকে প্রহসনে পরিণত করার নির্লজ্জ প্রচেষ্টা এই ধারণাকে আরও পাকাপোক্ত করেছে যে, এটি ছিল সরকারি মদদে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত যে ৯৩ দিনের হরতাল, অবরোধ, অগ্নি সন্ত্রাস করেছিল এর কারণে তখন তিন হাজার জন মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল। ২৬ জন নির্বাচনী কর্মকর্তাকে নির্বাচনের দিন হত্যা করা হয়েছিল। সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার সদস্যদের পুড়িয়ে এবং কয়েকজনকে হেলমেট দিয়ে মাথা থেঁতলে দিয়েছিল। মাত্র দুই মাসে ৪৬ জন কে হত্যা করা হয়, ২৩১ জন মানুষকে পেট্রোল বোমা মারা হয়। এই করোনাকালীন সময়েও সরকার যে এগিয়ে যাচ্ছে এই জায়গাটাকে নিয়ে বিএনপি জামায়াত এখন ষড়যন্ত্র করছে।
মেজর জেনারেল (অব:) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, গতকালকে দুপুরের পরে বাসে অগ্নি সংযোগের খবরটি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়লো তখন আমি যেহেতু দুটি সংগঠনের সাথে জড়িত তাই সারাদেশ থেকে ডজন খানেক টেলিফোন আসলো এবং তাদের সবার একই কথা ছিল, স্যার, আবার কি হলো। তো আমি তাদের বললাম, আবার কি হলো এর উত্তর দ্রুত বের করতে হবে। যে ঘটনা গুলো গতকাল ঘটেছে এবং বিভিন্ন মিডিয়াই আমরা যেসব খবরা খবর দেখেছি তার উপর বিশ্লেষণ করে আমি কিছু বলতে চায়। গতকাল ১০টি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে দুপুরের পর থেকে একটি সময়ের মধ্যে একই সঙ্গে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে। এই যে একই সাথে যে এই সব জায়গায় একই কায়দায় এই ঘটনাগুলো সম্পন্ন করা হলো এটা বিশ্লেষণ করলে দেখে যাবে এইসব ঘটনা গুলো একটি সুপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। এই ধরনের সুপরিকল্পিত ও সুসংগঠিতভাবে এই সন্ত্রাসীকর্মকাণ্ড কিন্তু কোন ছ্যাঁচড়া সংগঠন করতে পারেনা। এটা কোন বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসীকর্মকাণ্ড নয়, এটা করতে সাংগঠনিক ক্ষমতা লাগে, সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক লাগে। এখন প্রশ্নটা হলো এটা কারা করেছে। আমরা বিগত দিনগুলোর ইতিহাস পর্যালোচনা করলেই বুজতে পারি এটার পিছনে কারা জড়িত ছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হাসিনা অনেক চেষ্টা করেছিলেন সব দলকে নির্বাচনে আনতে। কিন্তু সম্ভব হয়নি। পুরো নির্বাচন পর্বই তখন ছিল দুঃস্বপ্নের মতো, নাশকতামূলক আগুন সন্ত্রাস নির্বিচারে চালিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের ক্যাডার-সন্ত্রাসীরা নিরীহ মানুষ-পুলিশ হত্যা ও বাস-ট্রাক পুড়িয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তিতে একইভাবে যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে রাস্তায় নেমে আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট নীলনকশা করেছিল যে, শেখ হাসিনা সরকারকে এখনই ক্ষমতা থেকে নামতে হবে এবং ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ কোনো ক্রমেই দেয়া হবে না। নির্বাচন বয়কট করা, সরকার পতন ইত্যাদি কত বড় বড় কথাই না খালেদা জিয়া বাইরে থাকতে তিনি নিজে আর দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলে যাওয়ার পর বিএনপি নেতারা বলেছেন। সুতরাং আজকে যখন এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটে তখন তৃতীয় পক্ষ থেকে দেখতে গেলে এইসব কর্মকাণ্ডের মূলে রয়েছে বিএনপি; এই রকম একটি অভিযোগর আঙ্গুল কিন্তু বিএনপির দিকেই যাবে।
খায়রুল হাসান জুয়েল বলেন, এই যে গতকালকে যে ঘটনা ঘটেছে এটা আসলে একটি পরিকল্পিত ঘটনা। যে দলটি নিয়ে আজ আমরা কথা বলছি এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা যখন দলটি প্রতিষ্ঠা করেছিল সেই তখন থেকেই বাকা পথে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সে তার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করেছে। জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন তিনি একটি দাম্ভিকতা করেছিলেন যে, সে রাজনীতিটাকে রাজনীতিবিদদের জন্য জটিল এবং কঠিন করে তুলবে। এবং সেই যে রাজনীতির মাঠকে জটিল করার প্রক্রিয়া তিনি যেমন করে গিয়েছিলেন ঠিক তেমনি সে ধারাবাহিকতায় সেদিন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। পৃথিবীর সব থেকে নিরাপদ জায়গা হচ্ছে কারাগার সেখানেও আমাদের জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে পর্যন্ত ওই দলের সেই রাজনীতির মাঠ গরম করার পাঁয়তারা এখনো তার পরবর্তী প্রজন্ম খালেদা থেকে শুরু করে তারেক জিয়া এই সন্ত্রাসী কার্যাবলী দেশে পরিচালনা করছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগুন সন্ত্রাসের শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত চলছিল বিএনপি-জামায়াতের ওই সহিংসতার তাণ্ডব। পৈশাচিক আগুন সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে সরকারকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল ওই সময়। তবে গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছিল শান্তিপূর্ণ। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও বড় কোনো অঘটন ঘটেনি। রাজনীতিতেও অনুপস্থিত ছিল চিরচেনা সহিংসতা। কিন্তু ৫ বছর পর গতকাল ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আগুন দেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
মান্নান মাদবার বলেন, আগুন সন্ত্রাস নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমে বলতে হয়, ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট, ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট এবং ২০১৫ এর জানুয়ারি এই সবগুলো একই সূত্রে গাঁথা এবং এটা সম্পূর্ণ বিএনপির নেতৃত্বে হয়েছিল। আমরা প্রবাসে থাকি এবং আমাদের এই প্রবাসীবান্ধব নেত্রী এবং যে নেতার জন্ম না হলে আমাদের দেশের জন্ম হতোনা, যার জন্ম না হলে আজকে যে ভাষায় আমরা আজ কথা বলছি সেটা সম্ভব হতো না, সেই নেতার ছবি এই আগুন সন্ত্রাসের কারিগর তারেক, যে কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দিতে পারেনি; সে লন্ডন এম্বাসিতে বসে তার নেতৃত্বে কি অপকর্মটানা করা হয়েছে। তারেক জিয়ার নেতৃত্বে এখনো ইউরোপের সহ বিশ্বের অনেক দেশেই তারা ষড়যন্ত্রের পাঁয়তারা করে যাচ্ছে কিভাবে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে নত দেখানোর জন্য। পাঁচ বছর পর ফের আগুন সন্ত্রাসের রাজনীতি। রাজনৈতিক সহিংসতার আগুনে পুড়ল ৯টি যাত্রীবাহী বাস। শুধু আগুনই নয়; সঙ্গে বোমাবাজিও। উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে বাসে অগ্নিসংযোগের এসব ঘটনা ঘটানো করেছে বিএনপি যা তারা আগেও বহুবার করে এসেছে। ২০১৫ সালের কতগুলো বাস পুড়িয়ে তারা অনেক নিরীহ মানুষদের ক্ষতি করেছে।