চট্টগ্রাম নগরীর সিটি হেলথ ক্লিনিকে গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে ভুল চিকিৎসায় এক কলেজ ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালটির পরিচালক মো. হারুনর রশিদসহ (৬০) চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঘটনার ছয় মাস পর বুধবার (১১ নভেম্বর) রাতে চকবাজার থানা পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করে।
চট্টগ্রাম মেট্রোলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (দক্ষিণ) মেহেদী হাসান এ তথ্য জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ তথ্য জানান।
গ্রেপ্তার অপর তিনজন হলেন- কথিত নার্স অলকা পাল (৩২), আয়া গীতা দাস (৪৫) ও নার্স সাবিনা ইয়াসমিন চম্পা (৪৩)।
এর আগে গত ১৫ মে অবৈধভাবে গর্ভপাত ঘটনোর সময় সিটি হেলথ ক্লিনিকে রিফাত সুলতানা (২৫) নামে ওই কলেজ ছাত্রীর মৃত্যু হয়। ঘটনার পরপরই নিহত কলেজ ছাত্রীর কথিত বন্ধু জিসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে এই ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে মেহেদী হাসান বলেন, ‘ঘটনার পর নিহত কলেজ ছাত্রীর পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। এক পর্যায়ে তদন্তে আমরা জানতে পারি গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে ওই কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। গত ১৫ মে কলেজছাত্রী রিফাতের অবৈধভাবে গর্ভপাত ঘটানোর চেষ্টা করে আসামিরা। এ সময় হাতুড়ে নার্সের সাহায্যে রিফাতের গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়। কিন্তু হাসপাতালের পরিচালক ও সংশ্লিষ্টরা ঘটনা ধামাচাপা দিতে নিহতের পরিবারকে করোনায় রিফাতের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায়।
তিনি আরও বলেন, ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে আমরা দেখেছি এই ধরনের সেবা যে ধরনের চিকিৎসক দিয়ে করানো প্রয়োজন, এই ক্লিনিকে সেই ধরনের কোনও চিকিৎসক বা নার্স সেখানে ছিল না। কোনও ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি নেই এমন দুইজন নার্স ও একজন আয়া গর্ভপাত করানোর কাজটি করেছেন। যেই কারণে অপচিকিৎসার কারণেই মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে।
মেহেদী হাসান আরও বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে একজন নার্স শিকার করেছেন-গর্ভপাত করানোর সময় রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে নার্সরা বারবার ডাক্তার ডাকার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু ক্লিনিকের পরিচালক হারুনুর রশিদ বিষয়টি অবহেলা করেন। পরবর্তীতে ওই কলেজ ছাত্রী মারা যাওয়ার পর ক্লিনিকের পরিচালক নিহতের অভিভাবককে ডেকে নিয়ে বলে আপনার মেয়ের করোনা হয়েছিল এবং করোনার কারণে তিনি মারা গেছেন।’
এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনায় নিহত কলেজ ছাত্রীর বাবা হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।’
নিহত কলেজ ছাত্রীর বাবা খোকন মিয়াজি জানান, রিফাত ও তার ছোট বোন রিয়াদ সুলতানা নগরীর চান্দগাঁও আবাসিকে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে এপ্রিল মাসে তারা গ্রামের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ায় চলে আসেন। এরপর ১৩ মে বাসায় থাকা কম্পিউটার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রিফাত শহরে আসে। পরদিন ১৪ মে তার বোনকে (রিয়াদ সুলতানা) কল করে বলে সে অসুস্থ পরদিন সকালে চলে আসবে। এরপর ১৫ মে আমরা রিফাতের মৃত্যুর সংবাদ পাই। জিসান নামে এক যুবক ফোন কলে আমাকে বলে আপনার মেয়ে মারা গেছে। এরপর তাকে জিজ্ঞেস করলাম এখন আমার মেয়ে কোথায় আছে। জিসান আমাকে বললো চকবাজার সিটি হেলথ ক্লিনিকে। এরপর আমরা ক্লিনিকে আসলে হাসপাতাল থেকে আমাদের জানানো হয়- রিফাতের করোনা হয়েছিল। সে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরপর তার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর গোসল করাতে গিয়ে দেখা যায় তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় স্পট আছে। তখন আমরা বুঝতে পারি রিফাত করোনায় মারা যায়নি। তার মৃত্যুর পেছনে অন্য কোনও কারণ আছে। তখন আমরা বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করি।’
খোকন মিয়াজি বলেন, শেষ যাত্রায় আমি আমার মেয়েকে ধরে দেখতেও পারিনি। করোনায় মারা গেছে বলায় তাকে দাফন করতেও আমাদের অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।