প্রকাশ: শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ৪:১৫ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
দুই ঘণ্টার ব্যবধানে রাজধানীর ছয়টি স্থানে হঠাৎ কমপক্ষে সাতটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর রাজধানীর পল্টন এলাকায় যুবদলের মিছিল থেকে ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার এসব অগ্নিকা-ের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তাদের আটক করা হয়। এরআগে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা এসব বাসে আগুন দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে এসব ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে, গতকাল ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ।
ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পাওয়ার মতোই গতকাল বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর সর্বত্র। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে আগে পরে বিএনপি-জামায়াত জোট যে নাশকতা ও সহিংসতা চালিয়েছিল, পুড়ে মরেছিল শত শত মানুষÑ গতকালের ঘটনা যেন সেই দুঃসহ স্মৃতির কাছেই ফিরিয়ে নিয়ে গেছে রাজধানীবাসীকে। যদিও কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবুও হঠাৎ করে এমন নাশকতার খবর ২০১৪-১৫ সালের মতো সেরকম অস্থির রাজনৈতিক সময়েরই দিকেই দেশ চলে যাচ্ছে কি-না এমন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে জনমনে।
ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানান, তারা দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে একে একে কাঁটাবন, বংশাল, মতিঝিল, শাজাহানপুর, গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার ও প্রেসক্লাব এলাকায় বাসে আগুন দেওয়ার খবর জানতে পারেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। পুলিশের মতিঝিল জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার জাহিদুল ইসলাম সোহাগ জানান, মতিঝিল ও পল্টনে মোট চারটি বাসে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছিল। এর মধ্যে একটি ভ্যাট/ট্যাক্স অফিসের স্টাফ বাস, একটি অগ্রণী ব্যাংকের স্টাফ বাস ছিল। আর পল্টনে একটি পাবলিক বাস ও আরেকটি বিআরটিসির গাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তিনি জানান, বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। আমরা সন্দেহভাজন হিসেবে কয়েজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। হঠাৎ করে কারা কেন বাসে আগুন দিলো, আমরা তার কারণ ও জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান জানান, প্রেসক্লাবে রজনীগন্ধা পরিবহনের একটি বাসে ও শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের পাশে কাঁটাবন সংলগ্ন দেওয়ান পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, নাশকতার উদ্দেশ্যে একযোগে বাসগুলোতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আমরা জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালাচ্ছি।’
পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, ‘তার এলাকার মধ্যে বংশালে দুপুর আড়াইটার দিকে দিশারী পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিকেলে ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের ডিউটি অফিসার রাসেল শিকদার জানান, ভাটারা এলাকায় একটি বাসে অগ্নিকা-ের খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে রাজধানীতে আলাদা স্থানে মোট ৭টি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে কারা আগুন দিয়েছে তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ঢাকা-১৮ আসনে সংসদীয় উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী কোনও পক্ষ নাশকতার উদ্দেশে একযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাসে আগুন দিয়েছে বলে তারা ধারণা করছেন। নাশকতাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য ইতোমধ্যে থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশসহ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটও কাজ করছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি ও টহল পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, পল্টনে যুবদলের মিছিল এবং এর আশপাশ থেকে অভিযান চালিয়ে ৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ। অগ্নিকা-ের ঘটনায় তারা জড়িত কিনা সেটা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে বিএনপি-জামাত নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির লক্ষে বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিন কমপক্ষে ২০টি জেলায় ভোটকেন্দ্র হিসেবে নির্ধারিত প্রায় ১০০ স্কুলে এমন আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটিয়ে ছিল। লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, সিলেট, নীলফামারী, ফেনী ও গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন জেলায় ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হবার কথা এমন স্কুলের আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে সে সময়।