প্রকাশ: শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ৩:১৫ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
রাজশাহী ব্যুরো
রাজশাহীতে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করে এক ব্যক্তির এক ল্যাবে পজিটিভ একদিন পর অপর ল্যাবে নেগেটিভ ফলাফল এসেছে। আর এই ফলাফল নিয়ে দুই ল্যাবের দুই ইনচার্জ একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দায় সারার চেষ্টা করছেন। এতে করোনা পরীক্ষা করা ব্যক্তি পড়েছেন মহাবিপাকে। অনেকেই বলছেন করোনা পরীক্ষার ল্যাবের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা মনগড়াভাবে নমুনা সংগ্রহ করে ফলাফল প্রকাশ করে। এছাড়াও করোনা পরীক্ষা করতে গিয়েও বিড়াম্বনার স্বীকার হয় সাধারণ মানুষ। তবে রাজশাহীর সিভিল সার্জন বলছেন, রামেক হাসপাতালের ল্যাবের ত্রুটি রয়েছে। আর রামেকের ল্যাবের ইনচার্জ বলছেন, সিভিল সার্জন অফিসে যে সব ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করেন তারা টেকনিকেল বিষয়ে কিছু জানেন না। আর রামেকের ল্যাবে যারা কাজ করে তারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মচারী।
জানা গেছে, গত ৯ নভেম্বর রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার এলাকার নাহিদুল ইসলাম ভারতে যাওয়ার জন্য করোনা পরীক্ষার নিমিত্তে সিভিল সার্জনের অর্ন্তগত জেলা ইপিআর স্টোর সেন্টারে যান। সকাল ১০টার মধ্যে তাকে সেখানে উপস্থিত হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেখানে যেতে ১০টা ১০মিনিটে পৌছান। ১০মিনিট দেরি হওয়ার কারণে তাকে পরের দিন আসতে বলা হয়। তিনি একদিন পরের ভারতের টিকিট কেটে রেখেছিলেন। উপায় না পেয়ে তিনি সেখানে নমুনা সংগ্রহকারীদের অনুরোধ করেন। যদিও পরে নাহিদুল ইসলামকে করোনার নমুনা সংগ্রহের ফরম দেয়া হয়। তিনি নির্ধারিত ফি ১৫শ’ টাকা দিয়ে সেখানে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। ২৪ ঘণ্টা পর নাহিদুল ইসলামকে জানানো হয়, তার করোনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ এসেছে। তিনি পরের দিন পুনরায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে ২শ’ টাকা ফি দিয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। এবার ২৪ঘণ্টা পর রামেকের ল্যাব থেকে তার পরীক্ষার ফলাফল আসে নেগেটিভ। এখন দুই জায়গার দুটি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন নাহিদুল ইসলাম। যদিও দুটি রিপোর্ট একই জায়গা থেকে দেওয়া হয়েছে। এক জায়গার দুটি রিপোর্ট, অথচ একটিতে পজিটিভ ও অন্যটিতে নেগেটিভ!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবারের শীতে সামনে রেখে দ্বিতীয় ধাপে করোনার প্রভাব পড়ায় আশঙ্কায় সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। করোনা সংগ্রহের ল্যাবও করা হচ্ছে উন্নত। চালানো হচ্ছে সচেতনতামূলক প্রচারণা। কিন্তু সরকার সবকিছু উন্নতি করলেও করোনার পরীক্ষার জন্য রাজশাহীর ল্যাবে নমুনা দিতে গিয়ে টাকা দেওয়ার পরও লোকজনদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। ল্যাবের কর্মচারিরা নিজেদের ইচ্ছে কাজ করছেন। একটু দেরি হলে ওই ব্যক্তি নমুনা সংগ্রহ করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। একই সাথে নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষার ফলাফলের ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। করোনা পরীক্ষাকারীরা রামেক হাসপাতাল ও সিভিল সার্জনের দেয়া ফলাফল সঠিক কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
ভুক্তভোগী নাহিদুল ইসলাম জানান, ভারতে যাওয়ার টিকিট কেটেছেন তিনি। করোনা পরীক্ষার সঠিক ফলাফল পেলে তিনি বিড়াম্বনা ছাড়াই ভারত থেকে ঘুরে আসতে পারতেন। কিন্তু দুই ল্যাব থেকে দুই ধরনের ফলাফল দেওয়ায় তিনি চিন্তায় পড়ে যান। তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না কোনটি সঠিক, আর কোনটি ভুল। তিনি জানান, করোনা পরীক্ষার ল্যাবে কর্মরতদের জন্য এখন তার মোটা অংকের টাকা পানিতে চলে গেলো।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হয়, রাজশাহীর সিভিল সার্জল ডা. এনামুল হকের সাথে। তিনি জানান, আন্তর্জাতিকভাবে দেশে ১৬টি করোনা নমুনা সংগ্রহের ল্যাব রয়েছে। এরমধ্যে এ বিভাগের বগুড়া ও রাজশাহীতে ল্যাব দুটি আছে। রাজশাহীর ল্যাবটি পরিচালত হয় সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধায়নে। এক ব্যক্তির একই রিপোর্ট নেগেটিভ-পজিটিভ হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সিভিল সার্জনের অধিনে জেলা ইপিআর স্টোর সেন্টারে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এটি একটি নির্ভরযোগ্য নমুনা সংগ্রহের ল্যাব। এখানে ভুল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। যদি ভুল হয় তাহলে সেটা রামেকের ল্যাবে হয়েছে।
এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেন্সিক ল্যাবের ইনচার্জ এসএম হাসান এ লতিফ জানান, রামেক হাসপালের ল্যাবে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট ভুল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ এখানে সব টেকনিশিয়ানদের উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। নমুনা সংগ্রহের জন্য চারটি স্টেপ পূরণ করতে হয়। যদি ভুল হয় তাহলে সিভিল সার্জনের অধিনে ওই ল্যাবে নমুনা সংগ্রহ করতে ভুল করেছে। যার কারণে নাহিদ নামে ওই ব্যক্তির করোনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ এসেছে। কারণ সিভিল সার্জনের ল্যাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোনো টেকনিশিয়ান নেই।